Advertisement
E-Paper

উদ্বাস্তু ভোটের দিকে নজর জেলা সিপিএমের

গোটা রাজ্যের মতো উত্তর ২৪ পরগনা জেলাতেও গত লোকসভা নির্বাচনে সিপিএম তথা বামেদের ভরাডুবি হয়েছে। জেলার পাঁচটি লোকসভা আসনেই হেরেছে তারা। তাই ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনর আগে দলকে শক্তিশালী করতে এবং কর্মী-সমর্থকদের মনোবল ফেরাতে এ বার উদ্যোগী হল জেলা সিপিএম।

সীমান্ত মৈত্র

শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০১৪ ০১:৩৪
সম্মেলনে অসীম দাশগুপ্ত।

সম্মেলনে অসীম দাশগুপ্ত।

গোটা রাজ্যের মতো উত্তর ২৪ পরগনা জেলাতেও গত লোকসভা নির্বাচনে সিপিএম তথা বামেদের ভরাডুবি হয়েছে। জেলার পাঁচটি লোকসভা আসনেই হেরেছে তারা। তাই ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনর আগে দলকে শক্তিশালী করতে এবং কর্মী-সমর্থকদের মনোবল ফেরাতে এ বার উদ্যোগী হল জেলা সিপিএম। তারই প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে তারা পাখির চোখ করেছে ওপার বাংলা থেকে আসা উদ্বাস্তু মানুষ ও মতুয়া ভোটব্যাঙ্ককে। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে রবিবার বনগাঁ শহরের অজিত গঙ্গোপাধ্যায় ভবনে দলের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা কমিটির পক্ষ থেকে উদ্বাস্তু কর্মী-কর্মশালার আয়োজন করা হয়।

কর্মশালার সূচনা করেন রাজ্যের প্রাক্তন প্রাথমিক স্কুল শিক্ষামন্ত্রী কান্তি বিশ্বাস। ছিলেন প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত-সহ জেলা সিপিএমের ছোট থেকে বড় নেতারা।

কর্মশালার নোটে বলা হয়েছে, ওপার বাংলা থেকে এরাজ্যে যে লক্ষ লক্ষ উদ্বাস্তু এসেছেন তার মধ্যে এই জেলাতেই তাঁদের বসবাস সবচেয়ে বেশি। এঁদের মধ্যে মতুয়া ধর্মের মানুষও প্রচুর আছেন। নোটে আরও দাবি করা হয়েছে, ‘এ পর্যন্ত উদ্বাস্তু পুনর্বাসনে যা কিছু ব্যবস্থা রাজ্যে বামফ্রন্ট সরকারের আমলে হয়েছে। তা ছাড়া বামফ্রন্ট সরকারের পক্ষ থেকে পুনর্বাসনের কাজ সম্পূর্ণ করবার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে ন্যায়সঙ্গত আর্থিক সাহায্যের আবেদন করা হয়েছিল’। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য রাজ্যে উদ্বাস্তু পুনর্বাসনের বকেয়া সমস্যা সমাধানের জন্য কেন্দ্রের কাছে ৫০১০ কোটি ৬০ লক্ষ টাকার প্রস্তাব পেশ করেছিলেন। সেইসঙ্গে উদ্বাস্তু সমস্যা নিয়ে জ্যোতি বসু কতটা ‘মানবিক’ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করেছেন তাও কর্মশালায় স্মরণ করা হয়েছে। পাশপাশি উদ্বাস্তু সমস্যা নিয়ে কেন্দ্রের বাজপেয়ী সরকার, মনমোহন সিংহের কংগ্রেস সরকার ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করা হয়। লোকসভার ভোটের আগে রাজ্যে প্রচারে এসে দেশ থেকে বাংলাদেশি বিতাড়ন নিয়ে নরেন্দ্র মোদীর মন্তব্যের প্রেক্ষিতে ডান, বাম সবাই প্রচারে নেমে পড়েছিল। বাংলাদেশ থেকে এ পারে আসা মানুষদের মধ্যে প্রচুর মতুয়া সম্প্রদায়ের লোক রয়েছে। মতুয়ারা দীর্ঘদিন ধরেই ২০০৩ সালের কেন্দ্রের নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন। সেই সুরে সুর মিলিয়ে এ দিনের কর্মশালা থেকে সিপিএমও ওই আইন সংশোধন ও ১৯৭১ সালের পর যে সব শরণার্থী নিরাপত্তার কারণে বাংলাদেশ থেকে এদেশে চলে আসতে বাধ্য হয়েছেন তাঁদের উদ্বাস্তু হিসাবে স্বীকৃতি ও এদেশের নাগরিকত্ব প্রদানের দাবি তুলেছে।

এই অবস্থায় রাজনৈতিক মহলের ধারণা, মতুয়াদের দাবির সঙ্গে নিজেদের দাবিকে একাত্ম করে তাদের কাছাকাছি পৌঁছনোর চেষ্টা করছে সিপিএম তথা বামেরা। তাদের আমলে নিউ টাউনে শ্রীশ্রী হরিচাঁদ ও গুরুচাঁদ ঠাকুরের নামে রিসার্চ ফাউনডেশন তৈরি এবং সে জন্য তৎকালীন আবাসন মন্ত্রী তথা জেলা সিপিএম সম্পাদক গৌতম দেব-এর ওই কাজের জন্য তিন কোটি টাকার সম্পত্তি দানের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।

যদিও মতুয়ারা এতে কতটা প্রভাবিত হবেন তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। কারণ ঠাকুরবাড়ির দুই ছেলে কপিলকৃষ্ণ ঠাকুর (বড়) এবং মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর (ছোট) তৃণমূলের আমলে তাদের ছত্রচ্ছায়াতেই সাংসদ ও মন্ত্রী হয়েছেন। মতুয়াদের উপরে তাঁদের প্রভাবকে এ ভাবে বামেরা কতটা ধাক্কা দিতে পারবেন তা নিয়ে দলের মধ্যেই সংশয় রয়েছে। সে সব মাথায় রেখেই মতুয়াদের জন্য ঝাঁপাতে চাইছে সিপিএম তথা বামেরা। আগামী দিনে উদ্বাস্তু প্রশ্নে জেলাশাসক থেকে শুরু করে ব্লকে ব্লকে স্মারকলিপি দেওয়া ও নানা আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে জেলা সিপিএমের তরফে জানানো হয়েছে। তৃণমূলের থেকে মুখ ফিরিয়ে মতুয়া ও উদ্বাস্তুরা বামেদের দিকে ফেরেন কিনা সময়ই তার উত্তর দেবে।

cpm vote simanta moitra bonga southbengal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy