জয়ের পর বসিরহাট পুরসভা থেকে বেরিয়ে আসছেন তৃণমূল কাউন্সিলররা। —নিজস্ব চিত্র।
তৃণমূলের আনা অনাস্থায় হেরে বসিরহাট পুরসভা হাতছাড়া হল কংগ্রেসের। বৃহস্পতিবার ১২-১০ ভোটের ব্যবধানে হারেন কংগ্রেসের পুরপ্রধান কৃষ্ণা মজুমদার।
সিপিএম বিধায়ক নারায়ণ মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে বসিরহাট দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন আসন্ন। তার আগে পুরসভার হাতবদলে স্বভাবতই উজ্জীবিত তৃণমূল শিবির। আর কংগ্রেস নেতারা মেনে নিচ্ছেন, উপনির্বাচনের আগে এই ঘটনা তাঁদের পক্ষে ধাক্কা তো বটেই!
তিন বছর আগে বিধানসভা ভোটে বসিরহাটের দু’টি কেন্দ্রেই সিপিএম জেতে কংগ্রেস-তৃণমূল জোটকে হারিয়ে। কিছু দিনের মধ্যেই বসিরহাট উত্তর কেন্দ্রে উপনির্বাচনে তৃণমূল জয়ী হয় কংগ্রেসের সক্রিয় সমর্থনেই। উত্তর ২৪ পরগনার এই এলাকায় এখনও কংগ্রেসের প্রভাব রয়েছে। সেই দিক থেকেই উপনির্বাচনের আগে পুরসভার বোর্ড দখলকে বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছে তৃণমূল। জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেছেন, “যাঁরা এই বোর্ডের সঙ্গে যুক্ত হবেন, তাঁদের বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে।”
এ দিন পুরসভার এই ভোটকে ঘিরে বসিরহাটে উত্তেজনা ছিল তুঙ্গে। কংগ্রেসের বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তী, সাবিনা ইয়াসমিন, দলের রাজ্য নেতা অমিতাভ চক্রবর্তী, অসিত মজুমদার, তৃণমূল সাংসদ ইদ্রিস আলি-সহ দু’দলের বেশ কিছু নেতা-নেত্রী বসিরহাটে উপস্থিত ছিলেন। গণ্ডগোলের আশঙ্কায় প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল।
২০১০-এ বসিরহাট পুরসভার ২২টি আসনের মধ্যে ১০টি জিতে ক্ষমতা পায় কংগ্রেস। তৃণমূল পায় সাতটি আসন। সিপিএম চার এবং সিপিআই পেয়েছিল একটি আসন। গত চার বছরে অবশ্য ছবি বদলেছে। কংগ্রেসের উপপ্রধান অমিত দত্ত এবং দলের আরও এক কাউন্সিলর যোগ দেন তৃণমূলে।
দুর্নীতি, স্বজনপোষণ-সহ একগুচ্ছ অভিযোগে গত ২৬ মে পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনে তৃণমূল। তাতে সই করেন তৃণমূলের ৯ জন কাউন্সিলর। এ দিন অনাস্থা সংক্রান্ত সভার সভাপতি পদে কংগ্রেসের প্রার্থী ঘোষণা করা হয় বিশ্বজিৎ চট্টোপাধ্যায়কে। তৃণমূল শিবির প্রস্তাব করে বিভুরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের নাম। সভাপতি নির্বাচন গোপন ব্যালটে হবে, না হাত তুলে, তা নিয়ে শুরু হয় দু’পক্ষের কাজিয়া। পুরসভা সূত্রের খবর, বামেদের তিন কাউন্সিলর গোপন ব্যালটের দাবিতে তৃণমূলের পাশে দাঁড়ান। ১২-১০ ব্যবধানে গোপন ব্যালটে সভাপতি নির্বাচনের সিদ্ধান্ত হয়। সভাপতি পদে ভোটাভুটিতে ১২-১০ ব্যবধানে জেতেন কংগ্রেসের বিশ্বজিৎবাবুই। চাঙ্গা হয়ে ওঠে কংগ্রেস শিবির। কিন্তু চমক তখনও বাকি! পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাবে ১২-১০ ভোটে জয়ী হয় তৃণমূল। তাদের দাবি, কংগ্রেসের তিন কাউন্সিলরের সমর্থন পেয়েছে তারা।
তৃণমূলের সে দাবি মানেননি পরাজিত কংগ্রেস নেত্রী কৃষ্ণা মজুমদার এবং তাঁর দলের অন্যতম রাজ্য নেতা অসিত মজুমদার। তাঁদের অভিযোগ, “নোংরা রাজনীতি এবং টাকার জোরের কাছে পরাজিত হলাম।” কৃষ্ণাদেবীর অনুমান, বামেদের তিন কাউন্সিলই ভোট দেন তৃণমূলের পক্ষে। তেমনটাই মনে করছেন সিপিএমের বর্ষীয়ান কাউন্সিলর শেখ সহিদুল্লাহও। তাঁর কথায়, “আমাদের সিদ্ধান্ত ছিল, কংগ্রেসকে সমর্থন করব। কিন্তু এখানে সেটা হয়নি। কেন এমন হল, কারা তৃণমূলকে সমর্থন করলেন, দেখা হবে।” সিপিআইয়ের একমাত্র কাউন্সিলর চন্দ্রিমা চক্রবর্তীর অবশ্য বক্তব্য, “গোপন ব্যালটে ভোট হয়েছে। কারা বিরোধীদের ভোট দিলেন, তা এখনই বলা যাবে না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy