দোকান থেকে জল সরাচ্ছেন আলম। ছবি: নির্মল বসু।
জেলা হাসপাতাল হয়েছে। এ বারে বসিরহাটকে আধুনিক শহরে পরিণত করা হবে। এমনই পরিকল্পনা নিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইচ্ছাতে সোমবার জেলাশাসক সঞ্জয় বনশলের কার্যালয়ে এক বৈঠকে হাজির ছিলেন বসিরহাটের সাংসদ ইদ্রিস আলি, মহকুমাশাসক শেখর সেন, জেলা পরিষদের পূর্ত ও পরিবহণ কর্মধ্যক্ষ নারায়ণ গোস্বামী, এসডিপিও অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যয়, পুরপ্রধান কৃষ্ণা মজুমদার, বসিরহাট ১ ও ২ বিডিও, পাঁচটি পঞ্চায়েতের প্রধান, সেচ, পূর্ত, সড়ক এবং জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতর-সহ অন্যান্য দফতরের আধিকারিকেরা। বসিরহাটের মহকুমাশাসক শেখর সেন বলেন, ‘‘আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল মূলত বসিরহাট পুরসভা এবং পার্শ্ববর্তী পঞ্চায়েতগুলিতে আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জল, রাস্তা, ট্র্যাফিক, জলনিকাশি ব্যবস্থার উন্নতি ঘটানো।” জেলাশাসকের দফতরে আলোচনার পরে মঙ্গলবার এসডিপিও, আইসি এবং বিডিওকে নিয়ে এক বৈঠকে শহরের ট্র্যাফিক ব্যবস্থা এবং জলনিকাশি নিয়ে মহকুমাশাসকের দফতরে জরুরি বৈঠকও হয়েছে। কী ভাবে সমস্ত সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসা যায়, সে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হয় সেখানে।
এ সবের নিরিখে বসিরহাটবাসী যখন আধুনিক নগরায়নের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন, তখনই সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত টানা বৃষ্টিতে জলমগ্ন হল বসিরহাট পুরসভার ও পার্শ্ববর্তী কিছু পঞ্চায়েত এলাকা। ইছামতী নদী এবং পাঁচটি খাল থাকা সত্ত্বেও কেন এমন ঘটনা ঘটছে, তা নিয়ে জেরবার প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট সব দফতর। কর্তাদের একাংশের মতে, পরিকল্পনাহীন ভাবে নর্দমা বন্ধ করে যত্রতত্র দোকান, গ্যারাজ, বাজার, বসতবাড়ি এবং মেছোভেড়ি তৈরি হওয়া এর একটা বড় কারণ।
কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে বসিরহাটের স্টেশন রোড, আবুদৈয়ান রোড, এস এন মজুমদার রোড, আর এন রোড, তপারচর, দিঘিপাড়ের রাস্তা, খানবাহাদুর রোড, ইটিন্ডা রাস্তায় হাটের মুখ, ত্রিমোহনী এলাকা জলে থই থই দশা। অধিকাংশ এলাকায় হাঁটু সমান জল দাঁড়িয়ে যায়। ভ্যাবলা স্টেশন-সংলগ্ন দাস পাড়া, পশ্চিম দন্ডিরহাটে ঘরের মধ্যে মাছ ঢুকে পড়ে। চৌমাথায় প্রতিবন্ধী যুবক মহম্মদ আলমের তুলোর দোকানে জল ঢুকে কয়েক হাজার টাকার মাল নষ্ট হয়েছে। সাঁইপালার অধিকাংশ এলাকাতে জল এতোটাই জমে যায়, সেখানকার স্কুলে ছুটি দিয়ে দিতে হয়েছে।
সম্প্রতি কংগ্রেস পরিচালিত বসিরহাট পুরসভার পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে তৃণমূলের কাউন্সিলরেরা অনাস্থা প্রস্তাব আনায় পুরপ্রধান কৃষ্ণা মজুমদার বলেছিলেন, পুরসভার ২২টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের এলাকা উন্নয়নের জন্য ইতিমধ্যে ৪৫-৫০ লক্ষ করে টাকা দেওয়া হয়েছে। যারা উন্নয়নের কাজ করতে পারেনি, তারা নিজেদের ব্যার্থতা ঢাকতে অনাস্থা এনেছেন। এ বিষয়ে শহরবাসীদের একটা বড় অংশের বক্তব্য, এর থেকেই পরিস্কার যে লক্ষ লক্ষ টাকা পাওয়া সত্ত্বেও কাউন্সিলরেরা সামান্য নর্দমাটুকু পরিস্কার রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন। সে জন্যই বৃষ্টির জমা জলে এই দুর্ভোগ। জল নিকাশির অন্যতম ইছামতী নদী শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া সত্ত্বেও কেন বছরের পর বছর ধরে একটু বৃষ্টি হলেই জলবন্দি হয়ে পড়তে হবে মানুষকে, সেই প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। কেনই বা এলাকার বেশিরভাগ মানুষ আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জল থেকে বঞ্চিত হবেন, তা নিয়েও ক্ষোভ আছে। রাস্তাঘাটের অবস্থাও ভয়ঙ্কর খারাপ। পণ্য-বোঝাই ভারি ভারি ট্রাক শহরের মধ্যে দিয়ে চলাচল করে রাস্তা খারাপ হচ্ছে, এমন অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। কিন্তু সুরাহা হচ্ছে কোথা!
প্রশাসনের বক্তব্য, এ সব সমস্যা মিটাতেই জরুরি বৈঠক। যদিও বিরোধীদের তির্যক মন্তব্য, “সামনে বসিরহাট দক্ষিণ কেন্দ্রের উপ নির্বাচনকে মাথায় রেখেই এ সব ঢক্কানিনাদ। আখেরে কোনও স্থায়ী সমাধানই হবে না।
তৃণমূল নেতা নারায়ণ গোস্বামী বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী চান বসিরহাটের উন্নয়ন। সে জন্য বসিরহাট শহর এবং তার পাশ্ববর্তী পঞ্চায়েতের উন্নয়নের জন্য পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এ জন্য প্রায় ৩০০ কোটি টাকার খরচ হবে।” পুর এলাকার প্রায় দেড় লক্ষ এবং আশপাশের পাঁচটি পঞ্চায়েতের বহু মানুষ যাতে উন্নত পরিষেবা পান, সে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। দু’চার দিনের মধ্যেই পরিস্রুত পানীয় জলের ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে আসবেন বিশেষজ্ঞেরা। একই সঙ্গে ইটিন্ডা রাস্তার নীচে দিয়ে যাতে পানীয় জলের জন্য নতুন ভাবে পাইপ নিয়ে যাওয়া যায়, সে বিষয়টিও দেখবেন তাঁরা। নারায়ণবাবু আরও জানান, জলনিকাশি নালার পাশাপাশি শহরের মধ্যের রাস্তাঘাট যানজট মুক্ত রাখার জন্য সীমান্তের দিকে যাওয়া লরি রাত ১২টার আগে টাকি রাস্তা হয়ে আমতলা ঘুরে সংশোধনাগারের পাশ দিয়ে ইছামতী সেতু দিয়ে যাবে। শহর সাজাতে আলো ছাড়াও রাস্তায় ট্র্যাফিকের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
কিন্তু এ সব ব্যবস্থা কবে কার্যকর হবে, আদৌ হবে কিনা, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় আছে বসিরহাটবাসীর মনে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy