Advertisement
E-Paper

নব কলেবরে চালু হল টাকির পুলিশ ফাঁড়ি

অভিযোগ করতে আসা মানুষের জন্য পানীয় জল, খাতা এবং কলম রাখা হবে। ছোটখাটো বিষয়েও ডায়েরি করা যাবে। স্থানীয় ছেলেমেয়েদের শরীর গঠনের জন্য এলাকায় খেলাধূলার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মঙ্গলবার বসিরহাট মহকুমার হাসনাবাদের টাকিতে জেলা পুলিশের পর্যবেক্ষণ বাংলো, সিআই অফিস এবং পুলিশ ফাঁড়ির উদ্বোধন করতে এসে এই কথা জানিয়ে গেলেন জেলার পুলিশ সুপার তন্ময় রায়চৌধুরী।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:১৭
নতুন ফাঁড়ির সামনে তখন চলছে অনুষ্ঠান। —নিজস্ব চিত্র।

নতুন ফাঁড়ির সামনে তখন চলছে অনুষ্ঠান। —নিজস্ব চিত্র।

অভিযোগ করতে আসা মানুষের জন্য পানীয় জল, খাতা এবং কলম রাখা হবে। ছোটখাটো বিষয়েও ডায়েরি করা যাবে। স্থানীয় ছেলেমেয়েদের শরীর গঠনের জন্য এলাকায় খেলাধূলার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মঙ্গলবার বসিরহাট মহকুমার হাসনাবাদের টাকিতে জেলা পুলিশের পর্যবেক্ষণ বাংলো, সিআই অফিস এবং পুলিশ ফাঁড়ির উদ্বোধন করতে এসে এই কথা জানিয়ে গেলেন জেলার পুলিশ সুপার তন্ময় রায়চৌধুরী।

তন্ময়বাবু বলেন, “শুনেছি দেশভাগের আগে বর্তমান বাংলাদেশের দেভাটা থানার অধীনে ছিল টাকি পুলিশ ফাঁড়ি। ব্রিটিশ আমলে ১৯৩৪ সালে এই ফাঁড়ির অনুমোদন হয়েছিল। এখানে এসে দেখলাম, দীর্ঘ কাল বন্ধ হয়ে পড়ে থাকার জন্য বহু প্রাচীন এবং ঐতিহ্য সম্পন্ন টাকি ফাঁড়িটি যেন ভূতবাড়িতে পরিণত হয়েছে। তখনই এখানকার পুরপ্রধানের সাথে বসে ঠিক করা হয়, হেরিটেজ বাড়িটির মূল কাঠামো বজায় রেখে মানুষের সুবিধার্থে ফিরিয়ে দেওয়া হবে পুলিশ ফাঁড়ি।” পুলিশ সুপার জানান, সেই সঙ্গে ঠিক হয়, সিআই দফতর এবং পর্যবেক্ষণ বাংলো গড়ে তোলার জন্য হাসনাবাদ থানায় না গিয়ে এখন থেকে এখানে ডায়েরি করার সুবিধা দেওয়া হবে। প্রয়োজনে থাকাও যাবে। তা ছাড়া, জেলা পুলিশের পর্যবেক্ষণ বাংলো হওয়ায় উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা আসবেন।

মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ব্রিটিশ আমলে ইছামতী নদী-সংলগ্ন টাকি শহরে যখন পুলিশ ফাঁড়িটি গড়ে উঠেছিল, সে সময়ে হাসনাবাদ থানার কোনও অস্তিত্ব ছিল না। পরবর্তি সময়ে ১৯৩০ সালে হাসনাবাদ থানা হওয়ার পরে ধীরে ধীরে টাকি ফাঁড়ি বন্ধ হয়ে যায়। গত দশ-বারো বছর হচ্ছে ফাঁড়িটি বন্ধ হয়ে পড়ে থাকায় তার চার ধারে জঙ্গল আর বিষাক্ত সাপের প্রকোপ বেড়েছিল। বন্ধ ঘরের বারান্দায় শুরু হয় দুষ্কৃতীদের মদ-জুয়ার আসর। তা দেখে প্রতিবাদে সোচ্চার হয় টাকির মানুষ। টাকি নাগরিক সমিতির পক্ষে ফের ফাঁড়ির কার্যকলাপ শুরু করার জন্য তৎকালীন রাজ্যের পুলিশ মন্ত্রী থেকে শুরু করে জেলাশাসক, পুলিশ সুপার-সহ প্রশাসনের সর্বস্তরে লিখিত আবেদন করা হয়। কিন্তু নির্বিকার প্রশাসনের তাতে বিশেষ হেলদেল লক্ষ করা যায়নি। তাতে দমে না গিয়ে টাকি নাগরিক সমিতি আন্দোলন শুরু করলে কয়েক বছর আগে বর্ডার এরিয়া ডেভলপমেন্ট প্রকল্পের প্রায় ২২ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ফাঁড়ির ঘর তৈরির পরিকল্পনা নিয়ে ঠিকাদার কাজ শুরু করলেও অজানা কারণে মাঝ পথে তা বন্ধ হয়ে যায়।

তা দেখে ফের আন্দোলনে নামেন টাকির মানুষ। টাকি পুরসভার পুরপ্রধান সোমনাথ মুখোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে ১৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে একই জমিতে সিআই দফতর, ফাঁড়ি এবং জেলা পুলিশের পর্যবেক্ষণ বাংলো গড়ে তোলা হয়। এ দিন দুপুরে ফিতে কেটে এবং পতাকা তুলে যার উদ্বোধন করেন জেলার পুলিশ সুপার তন্ময় রায়চৌধুরী। এ দিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বসিরহাটের সাংসদ ইদ্রিস আলি, জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায়, এসডিপিও অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, পুরপ্রধান সোমনাথ মুখোপাধ্যায়, টাকি নাগরিক সমিতির সভাপতি অজয় মুখোপাধ্যায়, হাসনাবাদ থানার ওসি অনুপম চক্রবর্তী এবং বসিরহাট থানার আইসি গৌতম মিত্র-সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।

ফলকের আবরণ উন্মোচন করে বসিরহাটের সাংসদ ইদ্রিস আলি বলেন, “এক সময়ে পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলার সাহস পর্যন্ত পেতেন না সাধারণ মানুষ। মনে রাখতে হবে, মানুষের জন্য পুলিশ এবং প্রশাসন। সাধারণ মানুষ যাতে তাঁদের মনের কথা বলতে পারেন, সে জন্যই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখন পুলিশকে সকলের কথা শুনতে বলেছেন।” সাংসদের কথায়, “বাংলাদেশ সীমান্তে ইছামতী-সংলগ্ন টাকি অত্যন্ত প্রাচীন শহর। এখানে বহু মানুষ বেড়াতে আসেন। ফলে এখানে নিরাপত্তার জন্য পুলিশ ফাঁড়ি অত্যন্ত জরুরি ছিল।” ইদ্রিশ বলেন, “ফাঁড়ি সাজানোর জন্য আপাতত সাংসদ তহবিল থেকে ২ লক্ষ টাকা দিচ্ছি।” টাকি শহরের মধ্যেই পড়ে পর্যটন কেন্দ্র। বছরের বিশেষ বিশেষ দিন-সহ শীতের দিনগুলিতে টাকির ইছামতী নদীর তীর-সংলগ্ন প্রতীপ সৈকত, ইকো ট্যুরিজম পার্ক, সুন্দরী-গেঁও-গরান-গোল সহ কয়েক হাজার গাছগাছালিতে ভরা মিনি সুন্দরবন, শচীন্দ্র বিথি, রাজবাড়ি, মাছরাঙা দ্বীপ, সুহাসিনী পিকনিক স্পট, পীরের দরগা, জোড়া মন্দির, রামকৃষ্ণ মিশন, বিধান সৈকত, কুলের কালীবাড়ি, নন্দদুলাল মন্দিরে তিল ধারণের জায়গা থাকে না। বিশেষ করে বিজয়ার সময়ে ইছামতীর বুকে নৌকা চড়ে দুই বাংলার দুর্গা প্রতিমার বিজয়ার অনুষ্ঠান দেখতে হাজার হাজার মানুষ ভিড় জমান টাকিতে। সীমান্তবতী নদীতে লঞ্চ এবং যন্ত্রচালিত নৌকাতে ঘোরার স্বাদ উপভোগ করেন। টাকি শহরের মধ্যে আছে হাসপাতাল, স্কুল, কলেজ, জেলা গ্রন্থাগার। ফলে সীমান্ত শহর টাকির মানুষের নিরাপত্তার জন্য সেখানে একটি পুলিশ ফাঁড়ি জরুরি ছিল বলে জানান পুরপ্রধান সোমনাথ মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “ক্ষমতায় আসার পরে টাকির মানুষ যে যে পরিষেবার জন্য বলেছিলেন, তারমধ্যে অন্যতম ছিল পুলিশ ফাঁড়ি। সে দিকে লক্ষ্য রেখেই নবরূপে ফাঁড়ি নির্মাণ করা হল।”

জেলা পুলিশ সূত্রের খবর, আপাতত ফাঁড়িতে এক জন অফিসার এবং চার জন পুলিশকর্মী থাকবেন। নাগরিক সমিতির সভাপতি অজয় মুখোপাধ্যায় বলেন, “টাকিতে যে ভাবে পর্যটক বাড়ছে, তাতে নিরাপত্তার জন্য আমাদের কাছে ফাঁড়ির গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। তা ছাড়া, ব্রিটিশ আমলের একটা নিদর্শন এ ভাবে নষ্ট হতে দিতেও আমরা রাজি ছিলাম না। তাই দীর্ঘ বছর ধরে প্রশাসনের দরজায় হেঁটেও সুফল না পেয়েও আমরা থেমে যাইনি। পুলিশ ফাঁড়ির দাবিতে সোচ্চার ছিলাম। আজ আমাদের সেই ইচ্ছা বাস্তবায়িত হল দেখে সত্যিই ভাল লাগছে।”

basirhat taki police station southbengal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy