Advertisement
০৬ মে ২০২৪
উত্তর ২৪ পরগনায় বদলি ৪ ওসি-আইসি

পুরনো বিতর্কও ছায়া ফেলেছে সিদ্ধান্তে

পুলিশের নানা মহলের কর্তাদের উপরে নির্বাচন কমিশনের কোপ পড়ায় নতুন উদ্যোম পাচ্ছে বিরোধীরা। অন্য দিকে, চলছে বদলির কার্যকারণ নিয়ে চুলচেরা বিচার।

বাঁ দিক থেকে, সৌগত রায়, লিটন রক্ষিত, মৈনাক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং নাসিম আখতার। — ফাইল চিত্র।

বাঁ দিক থেকে, সৌগত রায়, লিটন রক্ষিত, মৈনাক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং নাসিম আখতার। — ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০১৬ ০১:৫৬
Share: Save:

পুলিশের নানা মহলের কর্তাদের উপরে নির্বাচন কমিশনের কোপ পড়ায় নতুন উদ্যোম পাচ্ছে বিরোধীরা। অন্য দিকে, চলছে বদলির কার্যকারণ নিয়ে চুলচেরা বিচার। সংযমী বক্তব্য শাসক দলের নেতাদের মুখে। কমিশনের এ হেন কড়া পদক্ষেপে সিঁটিয়ে আছেন পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের অনেকেই। গোটা নির্বাচন প্রক্রিয়া তো বটেই কমিশনের কর্তারা যে ভাবে পুরনো ঘটনাও মনে রেখে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, তাতে সিঁদুরে মেঘ দেখছেন অনেকেই।

ভোটের আগে সরিয়ে দিয়েছে হাবরা থানার আইসি মৈনাক বন্দ্যোপাধ্যায়কে। সাম্প্রতিক সময়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে সিপিএমের পক্ষ থেকে তাঁর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ করা না হলেও আইসিকে নিয়ে ক্ষোভ ছিল সিপিএমের অন্দরে। হাবরার প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক প্রণব ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, হাবরার আইসিকে সরিয়ে দেওয়াটা অবশ্যই নির্বাচন কমিশনের ভাল পদক্ষেপ। কারণ, দীর্ঘদিন ধরেই উনি এখানে শাসক দলের হয়ে ওকালতি করছিলেন।

২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মৈনাকবাবু লোকসভা নির্বাচনের আগে ডায়মন্ড হারবার থানা থেকে হাবরার আইসি হিসাবে কাজে যোগ দেন। অতীতেও বহু বার তিনি উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বিভিন্ন থানায় নির্বাচনের আগে কাজ করে গিয়েছেন। জেলা পুলিশ মহলে তিনি দক্ষ অফিসার হিসাবেই পরিচিত। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, লক্ষ্মীপুজোর রাতে হাবরা শহরে সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত শব্দবাজির তাণ্ডবে মানুষজন পথে বেরোতে পারত না। মৈনাকবাবুর কড়া পদক্ষেপে প্রকাশ্যে শব্দবাজির বিক্রিবাটা কমেছিল। ফলে গত দু’বছর লক্ষ্মীপুজোর রাতে শব্দবাজির দাপট অনেকটাই কমেছে। তারস্বরে ডিজে বাজানোও নিষিদ্ধ করেছিলেন মৈনাকবাবু। তাঁর আরও একটি কৃতিত্ব শহরবাসীর মুখে মুখে ফেরে। বাড়ি ফাঁকা রেখে কেউ বেড়াতে গেলে থানায় জানিয়ে যাওয়ার জন্য নাগরিকদের সচেতন করা হয়েছে। বাড়ি খালি থাকলে সেই বাড়িতে পুলিশ মোতায়েনের ব্যবস্থা করে চুরি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা গিয়েছিল বলে জানাচ্ছেন শহরের বহু বাসিন্দা।

কিন্তু রাজনৈতিক মহলের কারও কারও মতে, বিদায়ী বিধায়ক তথা রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের সঙ্গে আইসির ঘনিষ্ঠতা পবারবারই প্রকাশ্যে এসেছে। বিভিন্ন সময়ে প্রকাশ্য সভায় মন্ত্রী আইসির কাজের তারিফও করেছেন। যা আখেরে আইসির বিরুদ্ধেই গেল বলে মনে করা হচ্ছে।

আইসি কোনও কথা বলেননি এ নিয়ে। সংযত বক্তব্য রেখেছেন জ্যোতিপ্রিয়বাবুও। তাঁর কথায়, ‘‘কমিশন তাদের কাজ করেছে। আমরা যা মন্তব্য করার, ভোট মিটে গেলে করব।’’

স্থানীয় বাসিন্দা তথা জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ সমাদ্দার বলেন, ‘‘আইসির বিরুদ্ধে কমিশনের কাছে আমরা কোনও অভিযোগ করিনি।
তবে এখন আর আইসিকে সরিয়ে কী হবে। সরালে অনেক আগেই সরানো উচিত ছিল। যিনি নতুন আসবেন, তিনিও যে নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করবেন, তার নিশ্চয়তা কি আছে?’’ জেলা বিজেপি সভাপতি প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য জানিয়েছেন, হাবরা থানার আইসি তৃণমূলের হয়ে পক্ষপাতমূলক কাজকর্ম করছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ জানিয়েছিলাম। কমিশন ওঁকে সরিয়ে দেওয়ায় আমরা খুশি।’’

অন্য দিকে, গোপালনগর থানার ওসি লিটন রক্ষিতকে তার কাজের এক বছর দশ দিনের মাথায় বদলি করল কমিশন। তিনি বারাসত থানা থেকে ২০১৫ সালের মার্চে গোপালনগরে কাজে যোগ দিয়েছিলেন।

সিপিএমের পক্ষ থেকে কমিশনের কাছে তাঁর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ করা না হলেও সিপিএম নেতৃত্ব তাঁর কাজে অসন্তুষ্ট ছিলেন বলে জানা গিয়েছে। অভিযোগ, সিপিএমের পক্ষ থেকে ওসির কাছে কোনও অভিযোগ নিয়ে যাওয়া হলে বা কোনও বিষয় দেখার জন্য বলা হলেও তিনি তাতে নজর দিতেন না। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পঙ্কজ ঘোষ বলেন, ‘‘কমিশন যেটা সঠিক মনে করেছে, সেটা করেছে। এ বিষয়ে আমরা কোনও মন্তব্য করব না।’’ লিটনবাবুর বিরুদ্ধে বিরোধীদের আরও অভিযোগ ছিল, কেন্দ্রীয় বাহিনীকে গ্রামের মধ্যে না ঢুকিয়ে তিনি রাস্তা দিয়ে টহল দেওয়াচ্ছিলেন। স্থানীয় বাসিন্দা তথা বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের বিদায়ী তৃণমূল বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাসও কোনও মন্তব্য করতে চাননি। বদলি নিয়ে কথা বলেননি লিটনবাবুও।

শাসন এলাকায় রাজনৈতিক সন্ত্রাসের ইতিহাস বহু পুরনো। এলাকাটি আগে ছিল বারাসত থানার অধীনে। কামদুনি গণধর্ষণ কাণ্ডের পরে বারাসত থানাকে ভেঙে চারটি থানা করা হয়। সে সময়ে তৈরি হয় শাসন থানা। বছর আড়াই ধরে শাসন থানার আইসি হিসেবে রয়েছেন নাসিম আখতার। বস্তুত, এই আড়াই বছরের মধ্যে শাসনে তেমন কোনও বড় সংঘর্ষ বা খুনের ঘটনা ঘটেনি।

তবে বিগত পঞ্চায়েত ও লোকসভা ভোটে শাসনে শাসক দলের বিরুদ্ধে রিগিংয়ের অভিযোগ তুলেছিল বিরোধীরা। বিরোধী শিবিরের দাবি, এত দিন শাসনের দায়িত্বে থাকা নাসিমকে সরিয়ে সেই বিতর্কের অবসান করতে চেয়েছে নির্বাচন কমিশন।

সন্দেশখালির ওসি সৌগত রায় দু’মাসও হয়নি কাজে যোগ দিয়েছিলেন। তাঁকে কেন সরতে হল, তা নিয়ে স্পষ্ট ধারণা নেই বিরোধী দলগুলির। সিপিএমের স্থানীয় বিধায়ক নিরাপদ সর্দার বলেন, ‘‘কেন ওঁকে সরতে হল, তা বলতে পারব না।’’ তবে প্রশাসনের একটি সূত্র জানাচ্ছে, অনেক ক্ষেত্রে চাকরি জীবনের পুরনো রেকর্ড দেখেও সিদ্ধান্ত নিতে পারে প্রশাসন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE