Advertisement
E-Paper

বসিরহাটে মদ ছাড়ায় মিলল সাইকেল, নগদে পুরস্কারও

মদ ছাড়ার অঙ্গীকার করে মিলল সাইকেল, সঙ্গে নগদ ৫০০ টাকা! নেশা-মুক্ত এলাকা গড়ে তুলতে এমনই পদক্ষেপ করতে দেখা গেল বসিরহাট ২ ব্লকের রাজেন্দ্রপুর পঞ্চায়েতের আন্দুলপোতা মাদ্রাসা রদমিয়া মার্কাজ কর্তৃপক্ষের। রবিবার এক শিক্ষামূলক সন্মেলনের মধ্যে দিয়ে বসিরহাট থানার আইসি-র হাত দিয়ে মদ ছাড়ার অঙ্গীকার করা এলাকার দুই গ্রামবাসীর হাতে তুলে দেওয়া হয় দু’টি নতুন সাইকেল এবং নগদ টাকা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৫ ০১:০৭

মদ ছাড়ার অঙ্গীকার করে মিলল সাইকেল, সঙ্গে নগদ ৫০০ টাকা!

নেশা-মুক্ত এলাকা গড়ে তুলতে এমনই পদক্ষেপ করতে দেখা গেল বসিরহাট ২ ব্লকের রাজেন্দ্রপুর পঞ্চায়েতের আন্দুলপোতা মাদ্রাসা রদমিয়া মার্কাজ কর্তৃপক্ষের। রবিবার এক শিক্ষামূলক সন্মেলনের মধ্যে দিয়ে বসিরহাট থানার আইসি-র হাত দিয়ে মদ ছাড়ার অঙ্গীকার করা এলাকার দুই গ্রামবাসীর হাতে তুলে দেওয়া হয় দু’টি নতুন সাইকেল এবং নগদ টাকা। এ ছাড়াও, মদ ছাড়ার চেষ্টার অঙ্গীকার করায় আরও ১০ জন গ্রামবাসীর হাতে ৫০০ টাকা করে তুলে দেওয়া হয়েছে। ওই সব পরিবারে মহিলাদের শাড়িও দিয়েছেন উদ্যোক্তারা।

বসিরহাটের আন্দুলপোতা-সহ আশপাশের গ্রামগুলিতে মূলত ভেড়িতে মাছ চাষ হয়। এলাকার বেশিরভাগ গরিবগুর্বো মানুষ মেছোভেড়িতে কাজ করে সংসার চালান। কিন্তু সামান্য ররোজগারের সেই টাকার বেশির ভাগই বাড়ির পুরুষ সদস্যেরা উড়িয়ে দেন চোলাই ও জুয়ার ঠেকে। সংসারে অশান্তিও পিছু ছাড়ে না। মদ খেয়ে বাড়ি ফিরে বেশির ভাগ দিনই ঝগড়াঝাটি বাধান পুরুষেরা। বাড়ির ছেলেমেয়েদের পড়াশুনা বন্ধ হয়ে যায়। মারধর, খুনোখুনির ঘটনাও এর আগে ঘটেছে আন্দুলপোতা গ্রামে। তার উপর চোলাইয়ের ঠেকে ঠেকে দুষ্কৃতীদের বাড়বাড়ন্ত। দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে মুখ খুললেও বিপদের আশঙ্কা। সব মিলিয়ে এলাকার সুস্থ-স্বাভাবিক পরিবেশের দফারফা।

এই পরিস্থিতিতে আন্দুলপোতা মাদ্রাসা রদমিয়া মার্কাজ কর্তৃপক্ষের তরফে স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে আলোচনায় ঠিক হয়, যদি কোন ভাবে মদ খাওয়ার কুফল নিয়ে মানুষকে বোঝানো যায়, তা হলেই গ্রামের পরিবেশের উন্নতি হতে পারে। সেই শুরু। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের তরফে লাগাতার চলতে থাকে মদ্যপান বিরোধী প্রচার। কখনও আলোচনা শিবির করে, কখনও লিফলেট ছড়িয়ে কিংবা পোস্টার সেঁটে চোলাই-জুয়ার ে বিরুদ্ধে আন্দোলন দানা বাঁধতে থাকে।

রবিবারের অনুষ্ঠানে মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে দেশের নানা প্রান্ত থেকে আসা মানুষের সামনে কয়েক জন মদ ছাড়ার যে অঙ্গীকার করেন, তাদের অকুন্ঠ প্রশংসা করেন দর্শকরা। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ এবং এলাকার মানুষ ডাকলে সব সময়েই তাঁদের পাশে পুলিশ থাকবে, এই প্রতিশ্রুতি দেন আইসি গৌতম মিত্র। তিনি বলেন, “মদ-জুয়ার জন্য অনেক পরিবার নষ্ট হয়। সামাজিক অবক্ষয় ঘটে। অসামাজিক কার্যকলাপ বৃদ্ধি পায়। অনেক সময়ে মায়েরা এসে স্বামীদের বিরুদ্ধে মদ খাওয়া এবং জুয়া খেলার জন্য ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা, সংসার খরচ তো দূরের কথা, বাচ্চার দুধ কেনার টাকা পর্যন্ত জোগাড় করা যাচ্ছে না বলে জানান।” নেশা ছাড়লে পুরস্কৃত করা হবে, এই উদ্যোগকে প্রশংসা করেন আইসি।

মাদ্রাসার সম্পাদক হাজি আসমত আলি বলেন, “গত ২৮ বছর ধরে আমরা জাতপাতের বিচার না করে এলাকার উন্নয়নের জন্য কাজ করার চেষ্টা করছি। কাজ করতে গিয়ে লক্ষ করছি, মদ এবং জুয়া বন্ধ না করলে গরিব মানুষের আর্থ-সামাজির উন্নতি সম্ভব নয়। তাই প্রচার এবং পুরস্কারের মাধ্যমে সাধ্যমতো নেশা মুক্তির চেষ্টা করে চলেছি।”

স্থানীয় পাড়ুই পাড়ার পুঁটু মণ্ডল এবং সাগর মণ্ডল সাইকেল পেয়ে দারুণ খুশি। সাগরের স্ত্রী আর আট ছেলেমেয়ে নিয়ে বিরাট সংসার। নতুন সাইকেল হাতে পেয়ে আপ্লুত সাগর তাঁর কথায়, “মাছ ধরে যেটুকু রোজগার হয়, তার প্রায় পুরোটাই নেশা করতে খরচ হয়ে যেত। বাড়ি ফিরলে স্ত্রী-ছেলেমেয়েরা খাবারের জন্য কান্নাকাটি করে। কিন্তু অনেক দিনের নেশা, তাই ছাড়তে পারছিলাম না। তবে সকলের সামনে প্রতিজ্ঞা করছি, আর কখনও মদ খাব না।” সাগরের স্ত্রী ফুলেশ্বরীর কথায়, “কিছু মন্দ লোকের জন্য আমাদের মতো গরিব, লেখাপড়া না জানা পরিবারের পুরুষরা আয়ের টাকা মদ-জুয়ার পিছনে খরচ করে নিজেদের এবং পরিবারের অন্যদের শেষের পথে নিয়ে যাচ্ছে। গত কয়েক বছরের চেষ্টায় মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ অনেককেই ওই পথ থেকে সরিয়ে আনতে পেরেছেন। যত কষ্টই হোক না কেন, স্বামীকে আর নেশা করতে দেব না।”

southbengal leave drinking alcohol bicycle basirhat
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy