Advertisement
E-Paper

মুড়িগঙ্গা পেরোতে এখনও দুর্ভোগ সাগরের পুণ্যার্থীদের

কাকভেজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা দুই কর্মী একে একে টিকিট চেকিং করে যাত্রীদের ভেসেল ঘাটে ঢোকাচ্ছিলেন। ছাতা যে কাছে রাখবেন, তার উপায় নেই। ভেসেল থেকে ওঠা যাত্রী আর ভেসেল ঘাটে যাওয়া যাত্রীদের গুঁতো-গুঁতিতেই প্রাণ ওষ্ঠাগত। দক্ষিণ ২৪ পরগনা কাকদ্বীপের লট-৮ ঘাটে এবং সাগরের কচুবেড়িয়া ঘাটের উপরে কোনও শেড না থাকায় এই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যাত্রী-কর্মী সকলকেই। পরিকাঠামো নিয়েও অভিযোগ ভুরি ভুরি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৪ ০২:১১
ছাউনি-বিহীন জেটিঘাট। ছবি দিলীপ নস্কর।

ছাউনি-বিহীন জেটিঘাট। ছবি দিলীপ নস্কর।

কাকভেজা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা দুই কর্মী একে একে টিকিট চেকিং করে যাত্রীদের ভেসেল ঘাটে ঢোকাচ্ছিলেন। ছাতা যে কাছে রাখবেন, তার উপায় নেই। ভেসেল থেকে ওঠা যাত্রী আর ভেসেল ঘাটে যাওয়া যাত্রীদের গুঁতো-গুঁতিতেই প্রাণ ওষ্ঠাগত। দক্ষিণ ২৪ পরগনা কাকদ্বীপের লট-৮ ঘাটে এবং সাগরের কচুবেড়িয়া ঘাটের উপরে কোনও শেড না থাকায় এই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যাত্রী-কর্মী সকলকেই। পরিকাঠামো নিয়েও অভিযোগ ভুরি ভুরি।

সাগরের কপিলমুনি মন্দির দর্শনে যেতে হলে কাকদ্বীপের লট-৮ ঘাট থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার মুড়িগঙ্গা নদী ভেসেলে পার হয়ে সাগরের কচুবেড়িয়া ঘাট হয়ে যেতে হয়। সে জন্য প্রায় ২০ বছর ধরে কাকদ্বীপের লট-৮ এর ১ নম্বর জেটিঘাট থেকে কচুবেড়িয়া ঘাট ভেসেল পারাপার চলছিল। কিন্তু বছর দ’শেক ধরে ১ নম্বর জেটি ঘাটের পাশে বড় এলাকা নিয়ে চর পড়ে যাওয়ায় ভাটার সময়ে ভেসেল কোনও মতে ঢোকানো যেত না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা নদীতে আটকে থাকতে হত যাত্রীদের। এই সমস্যা সমাধানের জন্য ১ নম্বর ঘাট থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে (যেখানে মুড়িগঙ্গা নদীর গভীরতা বেশি) ভাটার সময়েও ভেসেল ঘাটে পৌঁছতে পারে। গত গঙ্গাসাগর মেলার আগে সুন্দরবন উন্নয়ন পর্ষদ থেকে একটি জেটিঘাট নির্মাণ করা হয়। ১০ জানুয়ারি থেকে ওই জেটিঘাটটি পাকাপাকি ভাবে চালুও হয়। জেটিঘাটটি চালু হলেও ওই ঘাটের যাত্রী পরিষেবার জন্য এখনও উপযুক্ত পরিকাঠামো গড়ে ওঠেনি। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, কপিলমুনির মন্দির দর্শন করতে শুধু গঙ্গাসাগর মেলার সময় নয়, সারা বছরই হাজার হাজার পুণ্যার্থী ভিড় করেন। অথচ প্রায় সাত মাস হতে চলল, এখনও নতুন জেটি ঘাটের উপযুক্ত পরিকাঠামোর ব্যবস্থা হল না। স্থানীয় বাসিন্দা অমর দাস, শঙ্কর চক্রবর্তীরা জানালেন, নতুন জেটি ঘাটটি যে চালু হয়েছে, তা-ই অনেকে জানেন না। ফলে ভিন রাজ্যের অনেক যাত্রীই চলে যান পুরনো লট-৮ এর ১ নম্বর ঘাটে। যে মোড়ে নেমে নতুন ৪ নম্বর ঘাটে যেতে হয়, সেখানে বড় একটি সাইন বোর্ড লাগানো দরকার। শৌচাগার বা শুধু পানীয় জলের সমস্যা তো আছেই, তার উপরে কোনও ভাল খাবারের দোকান তৈরি হয়নি ঘাট-সংলগ্ন এলাকায়। তাতেও সমস্যায় পড়তে হয় দূরদূরান্ত থেকে আসা যাত্রীদের।

ঘাটে নামা-ওঠার জন্য কোনও ডিভাইডার নেই। যাত্রীদের তাড়াহুড়োয় ধাক্কাধাক্কি হয়। ভেসেল থেকে নামতে গিয়ে এবং ভেসেলে উঠার মুখে যাত্রীদের মধ্যে কার্যত শক্তিপরীক্ষা চলে। বয়স্ক মানুষ বা মহিলা-শিশুদের ক্ষেত্রে তা যথেষ্ট সমস্যার। চরম বিশৃঙ্খলা বাধে এক একেক সময়।

ওই ঘাটে কোনও শৌচাগার নেই। সে ক্ষেত্রে পুরুষ যাত্রীরা কোনও ভাবে সামলে নিলেও মহিলা শিশুদের ক্ষেত্রে খুবই সমস্যায় পড়তে হয়। যাত্রী-শেড না থাকায় ঠাঠা রোদ্দুরে বা বৃষ্টির মধ্যে খোলা আকাশের নীচেই দাঁড়িয়ে থাকতে হয় যাত্রীদের। পানীয় জলের ও কোনও নলকূপের ব্যবস্থা নেই। টিকিট কাউন্টার অস্থায়ী ভাবে একটি ঘরে চলছে। ওই নতুন জেটিঘাটের টিকিট চেকিং এর দায়িত্বে থাকা এক কর্মী জানান, এই ঘাটের কোনও গেট না থাকায় যাত্রীদের নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। হুড়মুড়িয়ে সকলে এক সঙ্গে ঢুকে পড়ছেন। ও দিকে, ভেসেল ঘাটে ঢুকে পড়লে নামাওঠা যাত্রীদের মধ্যে ঠেলাঠেলি বেধে যায়। এ ছাড়াও, এক সঙ্গে এত যাত্রীর ওঠানামার ফলে গ্যানওয়ে (ভেসেল ঘাটে নামার আগের জেটির অংশ) যে কোনও সময়ে ভেঙে পড়ে বড় রকম দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। কর্মীদের আরও অভিযোগ, কাকদ্বীপ ৪ নম্বর জেটি এবং সাগরের কচুবেড়িয়া জেটিঘাটের উপরে কোনও শেড না থাকায় রোদ-বৃষ্টি মাথায় করে তাঁদের টিকিট চেকিংয়ের কাজ করতে হয়। পানীয় জল ও শৌচাগারের সমস্যাও রয়েছে। ওই কর্মীরা জানালেন, ঘাট দু’টি ভূতল পরিবহণ দফতরের অধীনে হলেও ৬০ জন কর্মীর মধ্যে ২৭ জন ঠিকাশ্রমিক। বছরের পর বছর কাজ করে গেলেও মাসিক বেতন সেই ২৮০০ টাকাই থেকে গিয়েছে। এই আয়ে সংসার চালাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে তাঁদের। বেতন বাড়ানোর কথা একাধিকবার জানালেও দফতর কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

এ বিষয়ে কাকদ্বীপ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বুদ্ধদেব দাস বলেন, “৪ নম্বর ঘাটের পাশে নদীবাঁধ ও ক্রংক্রিটের রাস্তা তৈরির কাজ চলছে। এর পরেই জেটিঘাটের পরিকাঠামো উন্নয়নের ব্যবস্থা করা হবে।” টেন্ডার ডেকে দ্রুত কাজ হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন সুন্দরবন উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরাও।

৪ নম্বর জেটি ও কচুবেড়িয়া জেটিঘাটের উপরে শেড তৈরি নিয়ে ভূতল পরিবহণ নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর নিরঞ্জল সান্ডিল্য বলেন, “অস্থায়ী ভাবে শেডের জন্য টেন্ডার ডাকা হয়েছে। খুব শীঘ্রই কাজ শুরু হবে।” ঠিকা শ্রমিকদের বেতন বাড়ানো বিষয়ে তিনি বলেন, “লভ্যাংশের উপরে শ্রমিকদের বেতন ঠিক হয়। তবুও বেতন বাড়ানোর বিষয় নিয়েও ভাবা হচ্ছে।”

southbengal kakdwip muriganga gangasagar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy