ক্লাস হবে আর কত দিন, প্রশ্ন রূপনারায়ণপুরে। নিজস্ব চিত্র।
কারখানার রমরমা আমলে তৈরি হয়েছিল তিনটি স্কুল। রমরমা যাওয়ার পরেও স্কুলগুলি টিকে রয়েছে। কিন্তু আসানসোলের রূপনারায়ণপুরের হিন্দুস্তান কেব্লসের পাকাপাকি ভাবে ঝাঁপ ফেলার সিদ্ধান্তে পরে কারখানার তিনটি স্কুলের প্রায় সাতশো পড়ুয়ার ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন সকলেই।
সংস্থার পরিচালনাধীন দু’টি মাধ্যমিক ও একটি উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল রয়েছে। সাতশো পড়ুয়ার মধ্যে বেশির ভাগই লাগোয়া বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দা। স্কুলগুলিতে বর্তমানে স্থায়ী, অস্থায়ী মিলে ২০ জন শিক্ষক রয়েছেন। তাঁদের বেতনও দেয় ভারী শিল্প মন্ত্রক। কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্তের পরে শিক্ষকদেরও স্বেচ্ছাবসর নিতে হবে।
এই পরিস্থিতিতেই প্রশ্নের মুখে পড়েছে পড়ুয়াদের ভবিষ্যত। বোর্ডের পরীক্ষা কী ভাবে দেওয়া যাবে, কী ভাবেই বা শেষ হবে পাঠ্যক্রম, তা নিয়ে চিন্তায় পড়ুয়ারা। আগামী বছর মাধ্যমিক দেবে অনিতা টুডু, অর্চনা কুমারীরা। তাদের শঙ্কা, ‘‘মাঝপথে স্কুল বন্ধ হয়ে গেলে এবং শিক্ষক-শিক্ষিকারা চলে গেলে আর হয়তো পরীক্ষাই দেওয়া হবে না। খুবই চিন্তায় রয়েছি।’’ চিন্তায় রয়েছে শিক্ষক মহলও। মহিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা তাপসী দাস বলেন, ‘‘বেশির ভাগ ছাত্রীই অর্থনৈতিক ভাবে পিছিয়ে পড়া পরিবার থেকে এসেছে। শিক্ষাবর্ষের মাঝপথে অন্য কোনও স্কুলে ভর্তি হওয়া তাদের পক্ষে কঠিন।’’
শিক্ষকেরা জানান, কেউ কেউ পড়ুয়াদের স্বার্থে মাস খানেক পড়াতেও পারেন। কিন্তু সেক্ষেত্রে তাঁদের বাসস্থান নিয়ে সমস্যায় পড়তে হবে। কারণ, বকেয়া-পাওনা পুরো বুঝে নিতে গেলে আবাসন ছেড়ে দিতে হবে শিক্ষকদের।
এলাকার প্রবীণেরা জানান, এক সময় এই স্কুলগুলি থেকে বই, খাতা, ব্যাগ-সহ বিভিন্ন শিক্ষা সরঞ্জাম দেওয়া হতো। স্কুলগুলিতে মোট পড়ুয়ার সংখ্যাও ছিল হাজার খানেক। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কারখানার অবস্থা খারাপ হওয়ার প্রভাব পড়ে স্কুলগুলির উপরেও। তবে তারপরেও এলাকার পড়ুয়াদের মাধ্যমিক-উচ্চমাধ্যমিক স্তরে পড়াশোনার জন্য বড় ভরসা ছিল এই স্কুলগুলি। এই কারখানার সাতটি প্রাথমিক স্কুলও রয়েছে। তবে সেই সব স্কুলের শিক্ষকদের বেতন দেয় রাজ্য সরকার। স্কুলগুলির দেখভালের জন্য টাকা মেলে সর্বশিক্ষা মিশন থেকে। বাসিন্দাদের একাংশের দাবি, হাইস্কুলগুলির ক্ষেত্রেও তেমন কোনও ব্যবস্থা করা গেলে সমস্যা মিটতে পারে।
কেব্লসের স্কুলসমূহের অধ্যক্ষ সুভাষ বিশ্বাস জানান, ‘‘পড়ুয়াদের সমস্যার কথা মাথায় রেখে কারখানা কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানিয়েছি।’’ আসানসোলের সহকারি স্কুল পরিদর্শক অজয় পালের অবশ্য আশ্বাস, ‘‘স্কুল কর্তৃপক্ষ সমস্যার কথা আমাকে লিখিত ভাবে জানালে পরিদর্শনে গিয়ে শিক্ষা দফতরে বিস্তারিত রিপোর্ট পাঠাব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy