Advertisement
E-Paper

তিন রঙের প্যাঁচে পড়ে কোণঠাসা থ্যালাসেমিয়া

দরকার ছিল সামান্য সচেতনতা। সহজ করে সমস্যাটা বোঝানো।

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০১৬ ০৩:৩৮

দরকার ছিল সামান্য সচেতনতা। সহজ করে সমস্যাটা বোঝানো।

সেই দাওয়াই প্রয়োগ করতেই অনেকটা কাজ হয়েছে। একই রক্ত-সম্পর্কের ছেলে-মেয়ের বিয়ে দেওয়ার প্রবণতা কমিয়ে থ্যালাসেমিয়ার বাড়বাড়ন্ত রোখা গিয়েছে উত্তরবঙ্গ ও সুন্দরবনের আদিবাসী সমাজে।

উত্তরবঙ্গের টোটো, রাভা ও সুন্দরবনের ওঁরাও সম্প্রদায়ের মধ্যে থ্যালাসেমিয়ার প্রকোপ নিয়ে কলকাতার এক ক্যানসার চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান কাজে নেমেছিল বছর দশেক আগে। ২০০৬-এর ওই সময়ে টোটোদের ৫২% ও ওঁরাওদের ২৪% মানুষ থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত ছিলেন। ২০১৬-য় তা কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে ৩৪% ও ৬.২%।

এবং সাফল্যের নেপথ্যে রয়েছে দীর্ঘলালিত সামাজিক কুপ্রথা উচ্ছেদের নিরন্তর লড়াই। কী রকম?

সংশ্লিষ্ট গবেষক ও ডাক্তারেরা জানিয়েছেন, দেশের বিভিন্ন উপজাতিতে যেমন, তেমন পশ্চিমবঙ্গের ওঁরাও-টোটো সমাজেও পরিজনদের মধ্যে বিয়ের চল রয়েছে। যার সুযোগ নিয়ে থ্যালাসেমিয়ার মতো রক্ত-রোগ মারমুখী চেহারা নেয়। বাড়ির কর্তা গিন্নি থেকে শুরু করে ছেলে, মেয়ে, ভাই, ভাইপো, ভাইঝি থ্যালাসেমিয়ার শিকার, এমন বহু পরিবারের খোঁজ মিলেছিল। রোগাক্রান্ত একই বাড়ির ছেলে-মেয়ের মধ্যে দিব্যি বিয়ে-শাদিও চলছিল। স্বভাবতই সেই সব দম্পতির সন্তান জন্মাচ্ছিল থ্যালাসেমিয়া নিয়ে। উল্লেখ্য, স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত বা রোগের বাহক হলে সন্তানেরও থ্যালাসেমিয়া থাকতে বাধ্য।

এ ভাবে উত্তরবঙ্গ-সুন্দরবনের ওই দুই আদিবাসী তল্লাটের ঘরে ঘরে থ্যালাসেমিয়া ঘাঁটি গেড়ে বসে। মানুষগুলো জানতেনই না, কেন ওঁদের এই অবস্থা। কেনই বা বাচ্চাগুলোরও এই দশা। এমতাবস্থায় স্রেফ রক্ত-সম্পর্কের বিয়ে যতটা সম্ভব আটকে দিয়ে এক ধাক্কায় রোগের প্রকোপে যথেষ্ট রাশ টানা গিয়েছে বলে গবেষকদলের দাবি। দুরুহ কাজটা কী ভাবে সম্ভব হল?

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ২০০৬-এ সমস্যাটিকে চিহ্নিত করার পরে সুরাহার পথ খোঁজা হচ্ছিল। শেষে তিন রঙের কার্ড বানানো হয়— সবুজ, লাল ও বাদামি। সবুজ কার্ড স্বাভাবিকদের জন্য, মানে যাঁরা থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত নন। থ্যালাসেমিয়ার বাহকদের জন্য নির্দিষ্ট হয় লাল কার্ড। আর বাদামি কার্ড দেওয়া হয় থ্যালাসেমিয়া রোগীদের।

এর পরে বোঝানোর পালা। ডাক্তারবাবুরা ওঁদের পইপই করে বোঝান, সবুজ কার্ডের ছেলে-মেয়েরা যে কাউকে বিয়ে করতে পারে। কিন্তু লাল আর বাদামি কার্ডের ছেলে-মেয়েরা যেন শুধু সবুজ কার্ডওয়ালা ছেলে-মেয়েকেই বিয়ে করে। এই নিয়ম মেনে চললেই থ্যালাসেমিয়া বাচ্চাদের থেকে দূরে থাকবে। সংশ্লিষ্ট গবেষণা সংস্থা— নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ক্যানসার রিসার্চ ইনস্টিটিউশনের অধিকর্তা তথা চিকিৎসক আশিস মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘সহজ ছিল না। এত কালের রেওয়াজকে ভাঙতে বিস্তর মেহনত করতে হয়েছে। আগে ওঁদের বন্ধু হতে হয়েছে।’’

কেন্দ্রীয় জৈবপ্রযুক্তি দফতরের সঙ্গে হাত মিলিয়ে গবেষণা চালিয়েছেন আশিসবাবুরা। দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘কেন্দ্র এ বার পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে ঝা়ড়খণ্ড, বিহার, অসম ও ওড়িশার সব জেলায় থ্যালাসেমিয়া, অপুষ্টি ও ক্যানসার প্রতিরোধের প্রকল্প শুরু করেছে। তাতে পাঁচ রাজ্যে সমন্বয় সাধনের ভার থাকছে কলকাতার প্রতিষ্ঠানটির উপরে।’’

তবে পশ্চিমবঙ্গে থ্যালাসেমিয়া আটকাতে আরও প্রয়াস চাইছেন বিশেষজ্ঞেরা। হেমাটোলজিস্ট প্রান্তর চক্রবর্তীর হিসেবে, গড় ধরলে এ রাজ্যের ১০% মানুষ থ্যালাসেমিয়ার বাহক। তাঁর বক্তব্য, রাজ্যের প্রত্যন্ত সমস্ত অঞ্চলে যাওয়া জরুরি। আক্রান্তের তথ্য-পঞ্জি বানিয়ে এখনই মোকাবিলায় না-নামলে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যেতে পারে বলে প্রান্তরবাবুর আশঙ্কা।

‘‘এখনও অনেকটা পথ বাকি।’’— বলছেন আশিসবাবুও।

thalassemia Patient Color card disease
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy