Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

কাজের টোপে পাচারের আগে উদ্ধার

সেই খবর পেয়েই নলহাটি স্টেশনে ভাল করে তল্লাশি চালিয়ে প্ল্যাটফর্ম থেকেই ওই চার কিশোরীকে উদ্ধার করা হয়। রেলপুলিশ সূত্রের খবর, তল্লাশি হচ্ছে দেখতে পেয়েই যে দুই আদিবাসী যুবক ওই কিশোরীদের দিল্লিতে কাজ দেওয়ার নাম করে পাচার করছিল বলে অভিযোগ, তারা পালিয়ে যায়া।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নলহাটি শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০১৭ ১২:৫০
Share: Save:

কাজ দেওয়ার নাম করে দিল্লিতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল ঝাড়খণ্ডের চার আদিবাসী কিশোরীকে। কিন্তু, ঝাড়খণ্ডের পাকুড় চাইল্ড লাইন ও বীরভূম জেলা চাইল্ড লাইনের রামপুরহাট শাখার কর্মীদের তৎপরতায় এবং রেলপুলিশের সহযোগিতায় বৃহস্পতিবার বিকালে নলহাটি স্টেশন থেকে উদ্ধার হল ওই চার জন। তাদের পাচারের উদ্দেশ্যেই দিল্লি নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল বলে চাইল্ড লাইন ও রেলপুলিশের সন্দেহ।

ঝাড়খন্ডের পাখুড়িয়া থানার ওই চার আদিবাসী কিশোরীকে আপাতত বীরভূম চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির (সিডব্লিউসি) তত্ত্বাবধানে রামপুরহাটের একটি স্বল্পকালীন আবাসিক কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। কিন্তু, যারা তাদের দিল্লি নিয়ে যাচ্ছিল, তাদের হদিস মেলেনি। জেলা চাইল্ড লাইনের রামপুরহাট শাখার কো-অর্ডিনেটর রিয়াজুল ইসলাম শুক্রবার বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার দুপুরে পাকুড় চাইল্ড লাইন থেকে আমাকে ফোনে জানায় চার জন আদিবাসী কিশোরীকে অপহরণ করে দিল্লি নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। নলহাটি স্টেশন থেকে তাদের ট্রেন ধরার কথা। আমি ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে ঘটনার কথা জানাই।’’ রেল পুলিশের সাঁইথিয়া থানার ওসি-র পাশাপাশি রামপুরহাট ও নলহাটি জিআরপি-র আধিকারিকদেরও ফোন করেন রিয়াজুল।

সেই খবর পেয়েই নলহাটি স্টেশনে ভাল করে তল্লাশি চালিয়ে প্ল্যাটফর্ম থেকেই ওই চার কিশোরীকে উদ্ধার করা হয়। রেলপুলিশ সূত্রের খবর, তল্লাশি হচ্ছে দেখতে পেয়েই যে দুই আদিবাসী যুবক ওই কিশোরীদের দিল্লিতে কাজ দেওয়ার নাম করে পাচার করছিল বলে অভিযোগ, তারা পালিয়ে যায়া। উদ্ধার হওয়া কিশোরীদের মধ্যে এক জন এর আগে চার বার দিল্লি গিয়েছে। সে জানিয়েছে, পাখুড়িয়া থানা এলাকার বাসিন্দা গুপিন মুর্মু এ বার তাদেরকে দিল্লি নিয়ে যাচ্ছিল। সেখানে পরিচারিকা বা বাচ্চা দেখভালের কাজ দেওয়ার কথা বলেছিল গুপিন। আদিবাসী কিশোরীটির কাছে থাকা ব্যাগ থেকে দিল্লির একটি এজেন্সি-র কার্ডও পেয়েছে চাইল্ড লাইন এবং রেলপুলিশ। এ ছাড়া, একটি ব্যাঙ্কের পাখুড়িয়া শাখার এটিএম কার্ড ছিল।

চাইল্ড লাইন সূত্রের খবর, উদ্ধার হওয়া বাকি তিন কিশোরীর মধ্যে দু’জন সম্পর্কে বোন। বাবা অনেক দিন আগেই মারা গিয়েছেন। সংসারে মা ছাড়াও তিন ভাই আছে। পরিবারে চরম দারিদ্র। গ্রামে তেমন একটা কাজ নেই। তাই গুপিন ওদের দিল্লি নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দিতেই তারা রাজি হয়ে যায়। অন্য এক আদিবাসী কিশোরীর কথায়, ‘‘লেখাপড়া তেমন একটা জানি না। বাড়িতে মা, বাবা ছাড়া দুই ভাই আছে। কাজের জন্যই দিল্লি যেতে রাজি হই।’’

ঝাড়খণ্ডের প্রত্যন্ত গ্রামের আদিবাসী মেয়েদের এ ভাবে কাজের টোপ দিয়ে পাচার করার অভিযোগ নতুন নয়। সংসারে সাহায্য করতে উপার্জনের আশায় দিল্লি গিয়ে অনেক মেয়েরই ঠাঁই হয়েছে নিষিদ্ধপল্লিতে। আবার অনেক কিশোরীকে কাজের লোক হিসাবে রেখে তার উপরে অত্যাচার চালানোর অভিযোগ উঠেছে বাড়ির মালিকের বিরুদ্ধে।

রিয়াজুল ইসলাম জানান, সঠিক সময়ে জানতে পারার জন্যই ওই চারটি মেয়েকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। আপাতত ওই চার জনের কাউন্সেলিংয়ের পাশাপাশি স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE