মহম্মদ ইমতিয়াজ। অভিযোগ, কলকাতায় ধৃত এই ব্যবসায়ী মাদক চক্রের পাণ্ডা।—নিজস্ব চিত্র।
দিন সাতেকের জন্য বিনা খরচে চিন বেড়ানোর টোপ। সেই ফাঁদে পা দিয়ে সারা জীবন চিনের জেলে কাটাতে হতে পারে কলকাতার বন্দর এলাকার পাঁচ যুবককে।
নিখরচায় বেড়ানোর সুযোগ মিলবে একটি করে ল্যাপটপ ব্যাগ ও দেশে পৌঁছে দিলেই! এই হাতছানিতে সাড়া দিয়ে ওই পাঁচ জন পৌঁছে গিয়েছিলেন কুনমিং বিমানবন্দরে। সেখানেই তাঁদের হাতেনাতে গ্রেফতার করে পুলিশ। অভিযোগ, পাঁচ জনের কাছে মিলেছে মোট ২৪ কেজি গাঁজা। রাখা ছিল ল্যাপটপ ব্যাগের ভিতরে থরে থরে সাজানো চ্যবনপ্রাশের কৌটোতে। ধৃতদের মাধ্যমে মাদক পাচারের অভিযোগে বন্দর এলাকা থেকে মহম্মদ ইমতিয়াজ নামে এক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে কলকাতা পুলিশ। লাবাজারের দাবি, ইমতিয়াজ আন্তর্জাতিক মাদক পাচার-চক্রের এক পাণ্ডা।
ঘটনাটি ৬ সেপ্টেম্বরের। পুলিশ সূত্রের খবর, ধৃতদের নাম শেখ ইসমাইল, মুস্তাক আলম, সাকিল আহমেদ, আকবর খান ও ফিরোজ খান। বেজিংয়ের সংবাদপত্রে খবর, ওই পাঁচ জনের রক্তে মাদক মেলেনি। তদন্তকারীরা তাই মনে করছেন, এরা মাদক পাচার করতেই চিনে গিয়েছে। কলকাতা পুলিশের এক কর্তা জানান, চিনের সঙ্গে ভারতের বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি না থাকায় ওই ৫ জনকে চিনেরই কোনও জেলে বন্দিজীবন কাটাতে হতে পারে। চিনে মাদক পাচারের ন্যূনতম শাস্তি ১৫ বছর কারাদণ্ড। আবার, মৃত্যুদণ্ডের নজিরও রয়েছে।
মোমিনপুরের বাসিন্দা শেখ ইসমাইল দক্ষিণ কলকাতার একটি কলেজের ছাত্র। তাঁর পরিবারের দাবি, একবালপুরের নবাব আলি পার্কের বাসিন্দা ইমতিয়াজের লোকজন ইসমাইল ও তাঁর মামাতো ভাই মুস্তাক আলমকে নিখরচায় চিন ঘুরতে যাওয়ার টোপ দিয়েছিল। ইসমাইলের বাবা, মহম্মদ কামাল একবালপুরের এক হাসপাতালের অস্থায়ী কর্মী। মঙ্গলবার তিনি বলেন, ‘‘আমি ক্যানসারে আক্রান্ত। ইমতিয়াজের লোকজন আমার ছেলের পিছনে ঘুরঘুর করছিল। ছেলেও বিদেশে ঘুরতে যাওয়ার জন্য চঞ্চল হয়ে উঠেছিল।’’ ইসমাইলের ভাই আরশাদের কথায়, ‘‘৫ সেপ্টেম্বর সকালে ইসমাইল ও মুস্তাক ল্যাপটপ ব্যাগ আর কিছু জামা-কাপড় নিয়ে রওনা দেয়। জানিয়েছিল, দিন সাতেকের জন্য চিন ঘুরতে যাচ্ছে।’’ ইসমাইল ও মুস্তাক ছাড়া ধৃত বাকি তিন জনের বাড়ি খিদিরপুরের সুধীর বসু রোড ও জামাল পাড়া এলাকায়।
গ্রেফতারের খবর মিলল কী করে?
ইসমাইলের বাবা বলেন, ‘‘আমাদের পরিচিত খিদিরপুরের কয়েক জন ব্যবসায়ী বেজিংয়ে থাকেন। ওঁরাই এলাকায় ফোন করে ইসমাইলদের গ্রেফতারের ঘটনাটি জানান। তার পরে আমরা ওই ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগযোগ করে নিশ্চিত হই।’’ ইসমাইলদের পরিবারের ঘনিষ্ঠ এক আইনজীবী জানান, তাঁরা বেজিং পুলিশ ও সেখানকার সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। তারাও গ্রেফতারের খবর জানায়। এর পরেই স্থানীয় বাসিন্দারা মাদক-চক্রের পাণ্ডা ইমতিয়াজকে পাকড়াও করে পুলিশের হাতে তুলে দেন।
লালবাজারের এক কর্তা জানান, ইমতিয়াজের এক আত্মীয় চিনে রয়েছে। তার ভাইয়ের কাছে মাদক ভর্তি ল্যাপটপ ব্যাগ পৌঁছে দেওয়ার জন্যই ইসমাইলদের চিন পাঠানো হয়েছিল। ওই পুলিশকর্তার কথায়, ‘‘খিদিরপুর এলাকা থেকে প্রায় প্রতি সপ্তাহে বহু লোক হংকং-ব্যাঙ্কক-চিন যাতায়াত করেন। এ বার থেকে তাঁদের উপরে নজর রাখা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy