Advertisement
E-Paper

কল্পতরু মমতা, এ বার সাইকেল বিলি কলকাতাতেও

এত দিন গ্রামগুলিতে তিনি সাইকেল বিলি করতেন। বিধানসভা নির্বাচনের আগে এ বার কলকাতাতেও সেই প্রকল্প চালু করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতা শহরের অধিকাংশ বড় রাস্তায় সাইকেল চালানো নিষিদ্ধ।

অনুপ চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০১৫ ০৩:৪৫

এত দিন গ্রামগুলিতে তিনি সাইকেল বিলি করতেন। বিধানসভা নির্বাচনের আগে এ বার কলকাতাতেও সেই প্রকল্প চালু করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

কলকাতা শহরের অধিকাংশ বড় রাস্তায় সাইকেল চালানো নিষিদ্ধ। তার পরেও শহরের প্রায় ৭৫ হাজার ছাত্রছাত্রীর হাতে সাইকেল তুলে দেবে সরকার।

অভিযোগ, বিধানসভা ভোটের কথা মাথায় রেখেই এই ‘জনমোহিনী’ প্রকল্প নিয়েছে সরকার। আর সেই কাজের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কলকাতা পুর প্রশাসনকে। কলকাতার সমস্ত সরকারি এবং সরকার অনুমোদিত স্কুলের দশম এবং দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রীদের দেওয়া হবে ওই সাইকেল। বিতরণের মূল দায়িত্বে থাকবেন পুরসভার কাউন্সিলররা। সেই কাজ বোঝাতেই আজ বৃহস্পতিবার কলকাতা পুরসভায় সব দলের কাউন্সিলরদের নিয়ে কর্মশালা করছেন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। এর আগে ক্লাবে টাকা বিলির সময়ে বিরোধী দলের জনপ্রতিনিধিদের ডাকা হয়নি। প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি ভোটের বছর বলেই বিতর্ক এড়াতে এই সিদ্ধান্ত?

রাজ্য সরকার ইতিমধ্যে বিভিন্ন জেলায় ছাত্রছাত্রীদের সাইকেল বিলি শুরু করেছে। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, মফস্সল ও গ্রামের ছাত্রছাত্রীদের অনেকটা হেঁটে স্কুলে যেতে হয়। সমীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, যাতায়াতের অসুবিধার কারণে অনেকে পড়াশোনা ছেড়েও দিয়েছে। তাই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাইকেল বিতরণ করার কর্মসূচি নিয়েছেন। গত চার বছরে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় লক্ষাধিক সাইকেল বিতরণ করেছে সরকার। এ বার কলকাতায় সাইকেল বিতরণের সিদ্ধান্ত হতেই নানা প্রশ্ন উঠেছে। কলকাতা পুরসভার প্রাক্তন মেয়র সিপিএমের বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘গ্রামে ছাত্রছাত্রীদের যাতায়াতের অসুবিধা রয়েছে ঠিকই। যানবাহনের অভাব রয়েছে। সেখানে সাইকেল দেওয়ায় যুক্তি মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু কলকাতা শহরে সাইকেল দেওয়া মানে স্রেফ অর্থ অপচয়।’’ সরকারের এক অফিসার ঠাট্টা করে বলেন, ‘‘কলকাতা শহরে যখন সাইকেল চালানো যাবেই না, তখন ছাত্রছাত্রীদের মোটরসাইকেল, বা নিদেনপক্ষে স্কুটি দেওয়ার কথা ভাবা উচিত মুখ্যমন্ত্রীর। কারণ টাকা তো দেবে গৌরী সেন!’’

কলকাতা পুলিশ সূত্রের খবর, শহরের মোট ১৭৪টি রাস্তায় সাইকেল চালানো নিষিদ্ধ। তার মধ্যে প্রায় সব ক’টি বড় রাস্তাই রয়েছে। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে ছাত্রছাত্রীরা ৭৫ হাজার সাইকেল চালাবে কোথায়? এ নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে সরব বিজেপির রাজ্য সম্পাদক রীতেশ তিওয়ারি। তিনি বলেন, ‘‘ভোটের আগে ছাত্রছাত্রীদের মা-বাবাকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে সরকার। এটা ঘুষ দিয়ে দলের পক্ষে ভোট টানা ছাড়া আর কিছু নয়।’’ তা ছাড়া কলকাতা শহরের রাস্তায় সাইকেল চালানোয় ঝুঁকির বিষয়টিও সরকারের মাথায় রাখা উচিত ছিল বলে মনে করেন বিকাশবাবু, রীতেশবাবুরা।

রাজ্যের শিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, মাধ্যমিক, উচ্চ-মাধ্যমিক, মাদ্রাসা মিলিয়ে শ’পাঁচেক সরকার অনুমোদিত স্কুল রয়েছে শহরে। দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির কত ছাত্রছাত্রী রয়েছে, তা জরুরি ভিত্তিতে জানাতে বলা হয়েছে প্রতিটি স্কুল কতৃর্পক্ষকে। সরকারের ওই নির্দেশ পেয়ে তোড়জোড় শুরু হয়ে গিয়েছে সব স্কুলে। দক্ষিণ কলকাতার একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক জানান, ৩-৪ দিনের মধ্যে ওই তালিকা
জেল স্কুল পরিদর্শকের কাছে পাঠাতে বলা হয়েছে।

কী ভাবে দেওয়া হবে ওই সাইকেল? কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (শিক্ষা) অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় জানান, রাজ্য সরকারের অনগ্রসর শ্রেণি উন্নয়ন দফতরের আর্থিক সহায়তায় ওই ৭৫ হাজার সাইকেল দেওয়া হচ্ছে। কলকাতা শহরে পুরসভার মাধ্যমে তা বিলি করা হবে। সরকার অনুমোদিত মাধ্যমিক, উচ্চ-মাধ্যমিক, উর্দু ও মাদ্রাসা স্কুলের দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীরা ওই সাইকেল পাবে। প্রতিটি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও বরো চেয়ারম্যানদের দিয়ে এই সাইকেল বিলি বন্টন করা হবে বলে তিনি জানান।

কিন্তু শহরের অধিকাংশ রাস্তায় তো সাইকেল চালানো নিষিদ্ধ। খোদ কলকাতা পুলিশ কমিশনারই নোটিশ দিয়ে জানিয়ে দিয়েছেন ১৭৪টি রাস্তায় সাইকেল চালানো যাবে না। তা হলে কোথায় চলবে ৭৫ হাজার সাইকেল?

কোনও জবাব দিতে পারেননি অভিজিৎবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘সাইকেল কোথায় চলবে তা সরকার জানে। আমাদের বিলি করার দায়িত্ব, তাই করব। এর বেশি কিছু বলতে পারব না।’’

Assembly election 7500 cycles Arup Chattopadhyay BJP
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy