Advertisement
E-Paper

মন্ত্রী প্রাপ্তিতে পূর্বকে টেক্কা পশ্চিমের

প্রথম ইনিংসে দুই মেদিনীপুর মিলিয়ে সংখ্যাটা ছিল চার। আর দ্বিতীয় ইনিংসে সেটাই কমে দাঁড়াল তিনে। মুখ্যমন্ত্রীর নবগঠিত মন্ত্রিসভায় আপাতত ঠাঁই হয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর থেকে শুভেন্দু অধিকারীর।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০১৬ ০২:১৬

প্রথম ইনিংসে দুই মেদিনীপুর মিলিয়ে সংখ্যাটা ছিল চার। আর দ্বিতীয় ইনিংসে সেটাই কমে দাঁড়াল তিনে। মুখ্যমন্ত্রীর নবগঠিত মন্ত্রিসভায় আপাতত ঠাঁই হয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর থেকে শুভেন্দু অধিকারীর। আর পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে মন্ত্রী হচ্ছেন সৌমেন মহাপাত্র ও চূড়ামণি মাহাতো।

২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে শুভেন্দু অধিকারী যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে চলেছেন, তার আভাস মিলেছিল আগেই। নির্বাচনের কয়েক মাস আগেই নন্দীগ্রামের মাটিতে দাঁড়িয়ে মমতা ঘোষণা করেছিলেন, শুভেন্দুকে নন্দীগ্রাম বিধানসভা থেকে জিতিয়ে মন্ত্রিসভায় আনতে চলেছেন তিনি। সেই কথা রেখেছেন মুখ্যমন্ত্রী। নন্দীগ্রাম বিধানসভা থেকে ৮০ হাজারের বেশি ভোটে জয়ী শুভেন্দু ঠাঁই পেয়েছেন মন্ত্রিসভায়। গতবার পূর্ব মেদিনীপুর থেকে মন্ত্রী হয়েছিলেন আরও যে দু’জন, সেই সুদর্শন ঘোষ দস্তিদার ও জ্যোতির্ময় করের নাম নেই মন্ত্রিসভায়। সেই অর্থে শুভেন্দুই পূর্ব মেদিনীপুর থেকে একমাত্র মন্ত্রী। তৃণমূলেরই একাংশের ব্যাখ্যা, প্রার্থী বাছাইয়ের সময়ই পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা রাজনীতিতে যাঁদের সঙ্গে শুভেন্দুর বিরোধ সর্বজনবিদিত, সেই সৌমেন মহাপাত্র ও শিউলি সাহাকে একেবারে জেলা থেকে ছেঁটে ফেলেছিলেন মমতা। আর এ বার জেলা থেকে একমাত্র শুভেন্দুকে মন্ত্রী করে জেলায় তার একচ্ছত্র আধিপত্যকেই সিলমোহর দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।

রাজ্য মন্ত্রিসভায় অধিকারী পরিবারের তরফে এই প্রথম কেউ মন্ত্রী হলেন। তাই শুভেন্দুর মন্ত্রী হওয়ার খবরে খুশির হাওয়া কাঁথিতে। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা টিএমসিপির সভাপতি দীপক দাসের কথায়, ‘‘শুভেন্দু অধিকারী পরীক্ষিত সৈনিক। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে যোগ্য সম্মান দেওয়ায় আমরা খুশি।’’

তবে জেলার প্রাপ্তির ঝুলিতে এক মন্ত্রী পেয়ে খুশি নয় জেলা তৃণমূলের একাংশ। দলের একাংশের ক্ষোভ, ‘‘আমাদের জেলায় দলের সংগঠন এত মজবুত। তার পরও দিদি কেন আমদের উপর আর একটু ভরসা করলেন না!’’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তৃণমূল নেতার কথায়, ‘‘আমাদের আরও একটু দায়িত্ব দেওয়া হলে দলের কর্মীরা আরও উৎসাহ পেত।’’ তবে এখনই হাল ছাড়তে নারাজ এনেকেই। তাঁদের ভরসা, দিদি আগামী দিনে যদি এই জেলা থেকেই আর কোনও বিধায়ককে মন্ত্রিসভায় ডাকবেন।

কার ভাগ্যে মন্ত্রিত্বের শিকে ছেঁড়ে, তা নিয়ে জোর জল্পনা ছিল পশ্চিম মেদিনীপুরে জেলা তৃণমূলেও। জেতার পরে শাসক দলের প্রার্থীরা মন্দির-মসজিদেও গিয়েছেন। অবশেষে মুখ্যমন্ত্রীর মন্ত্রিসভায় ডাক পেলেন দু’জন। প্রাথমিকভাবে যে মন্ত্রিসভার তালিকা প্রকাশিত হয়েছে তাতে রয়েছেন পিংলার সৌমেন মহাপাত্র এবং গোপীবল্লভপুরের চূড়ামণি মাহাতো। প্রশাসনিক দিক থেকে পশ্চিম মেদিনীপুর একটিই জেলা। অবশ্য তৃণমূলের সাংগঠনিক দিক থেকে জেলা দু’টি-একটি পশ্চিম মেদিনীপুর, অন্যটি ঝাড়গ্রাম। চূড়ামণি মাহাতো তৃণমূলের ঝাড়গ্রাম জেলার সভাপতি। সেই দিক থেকে তৃণমূলের এই দুই সাংগঠনিক জেলা থেকে একজন করে বিধায়ক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভায় থাকছেন।

পশ্চিম মেদিনীপুরের ১৯টি আসনের মধ্যে ১৭টিতেই জয়ী হয়েছে তৃণমূল। নবনির্বাচিত বিধায়কদের মধ্যে রয়েছেন তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি দীনেন রায়, দলের কার্যকরী সভাপতি প্রদ্যোত ঘোষ, আশিস চক্রবর্তী প্রমুখ। দলের একাংশ মনে করেছিলেন, প্রদ্যোতবাবু মন্ত্রী হবেন। কারণ, তিনি নারায়ণগড়ে সূর্যকান্ত মিশ্রকে পরাজিত করেছেন। ওই অংশের ব্যাখ্যা ছিল, সবথেকে কঠিন লড়াই ছিল প্রদ্যোতবাবুরই। অবশ্য তিনি আপাতত মন্ত্রী হচ্ছেন না। এ খবরে কিছুটা হতাশ নারায়ণগড়ের একাংশ তৃণমূলকর্মী। এক কর্মীর কথায়, “এটা একেবারেই অপ্রত্যাশিত। নারায়ণগড় থেকে জিতে সূর্যকান্ত মিশ্র দীর্ঘদিন মন্ত্রিত্ব করেছেন। তাই প্রদ্যোতদাকে নিয়ে আশা ছিলই!”

গত বার তমলুক বিধানসভা থেকে জিতেছিলেন জলসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী সৌমেনবাবু। আর এ বার তিনি প্রার্থী হয়েছেন পাশের জেলা পিংলা থেকে। আর সেখান থেকেও জিতে ফের মন্ত্রী হচ্ছেন তিনি। খবর শুনে সৌমেনবাবুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে কৃতজ্ঞ। পশ্চিম মেদিনীপুরের মানুষের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।’’

২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে ৮টি আসন পেয়েছিল তৃণমূল। পরে সিপিএমের এক বিধায়ক দলবদল করে তৃণমূলে যোগ দেন। শাসক দলের আসন সংখ্যা বেড়ে হয় ৯। সেই বছর পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে মন্ত্রী হন ঝাড়গ্রামের বিধায়ক সুকুমার হাঁসদা। প্রথমে পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন দফতরের দায়িত্ব দেওয়া হয় তাঁকে। পরে পশ্চিমাঞ্চল থেকে সরিয়ে আদিবাসী উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী করা হয়। এ বার সেখানে জেলা থেকে তৃণমূলের বিধায়কের সংখ্যা ১৭। তাই দলের একাংশ মনে করেছিলেন, জেলা থেকে মন্ত্রীসভার সদস্য সংখ্যাও বাড়বে। তাও হয়নি। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক তৃণমূলের এক নেতার কথায়, ‘‘পশ্চিম মেদিনীপুরের প্রাপ্তি শূন্যই বলা যায়!” কেন? ওই নেতার ব্যাখ্যা, “সাংগঠনিক দিক থেকে ঝাড়গ্রাম আলাদা জেলা। ফলে, সেই দিক থেকে চূড়ামণি মাহাতো এ জেলার মন্ত্রী নন! আর সৌমেন মহাপাত্র তমলুকের বাসিন্দা। গতবার তমলুক থেকে জিতেই মন্ত্রী হয়েছেন। এ বার পিংলা থেকে জিতে মন্ত্রী হচ্ছেন। তাই পশ্চিম মেদিনীপুরের প্রাপ্তি আর কোথায় হল!”

অবশ্য ষাট ছুঁই ছুঁই চূড়ামণি মাহাতোর জঙ্গলমহলে খুশির হাওয়া। ২০১১ সালে ঝাড়গ্রাম কেন্দ্রে জেতার পরে সুকুমারবাবু হাসঁদাকে পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পর্ষদের মন্ত্রী করেন মমতা। কিন্তু গত বছর সুকুমারবাবুকে ওই দফতর থেকে সরিয়ে আদিবাসী উন্নয়ন দফতরের দায়িত্ব দেওয়া হয়। আর এ বার মন্ত্রী হলেন চূড়ামণি। ফোনে চূড়ামণি মাহাতো বলেন, ‘‘নেত্রী যে দায়িত্ব দেবেন, সেটা সার্থকভাবে পালন করব। আমি কিন্তু কলকাতার মন্ত্রী হব না। মাটি ও মানুষের সঙ্গে যেমন ছিলাম, ঠিক তেমনটাই থাকব।” তবে মন্ত্রি পাচ্ছেন না জেনে হতাশ সুকুমারবাবুর অনুগামীরা। সুকুমারবাবুর প্রতিক্রিয়া, “নেত্রী যা ভাল বুঝেছেন তাই করেছেন।”

Ministers Mamata Banerjee Meeting
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy