বক্তব্য রাখছেন এক অভিভাবক। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।
নীল রঙের বই দু’টো দেখলেই ক্লাস নাইনের সপ্তর্ষির পিলে চমকে যায়।
সে বার সাইকেলটা হাতছাড়া হল পরীক্ষার খাতায় ভূগোলের গোলমালের জেরে। বাবা বলেছিলেন, রেজাল্ট ভাল হলে সাইকেল দেবেন। কিন্তু সে আর হল কোথায়! বাংলা, অঙ্ক, ইতিহাসের নম্বর দেখে খুশি হলেও, ভূগোলের নম্বর দেখে চটে গেলেন। ব্যস! সাইকেল ফসকে গেল! আর তার আগের পরীক্ষায় ভৌতবিজ্ঞানে আলোকবর্ষের সংজ্ঞা ভুলে যাওয়ায় কম্পিউটার চলে গেল কয়েক আলোকবর্ষ দূরে। শুধু জুটলো বছরভর মা-বাবার বকুনি।
সপ্তর্ষির তাই নীল মলাটের ভূগোল আর ভৌতবিজ্ঞানের বই দু’টো একদম না-পসন্দ। ছেলের এই অবস্থা দেখে চিন্তিত মা স্বপ্না রায়। অঙ্ক আর ইতিহাস ভালবাসে। কিন্তু শুধু অঙ্ক আর ইতিহাস পড়লেই তো চলবে না। সব বিষয়ে ভাল ফল করতে হবে। মনোযোগ দিয়ে না পড়লে তা তো সম্ভব নয়। বকলে ছেলে আর পড়তে বসতেই চায় না। এই সমস্যা থেকে বেরনোর উপায় কী!
ক্লাস এইটের অর্পিতা দিনভর ছবি আঁকে। পড়তে বসলেই মুখ বেজার। কী ভাবে মেয়ের পড়ায় মনোযোগ বাড়িয়ে তোলা যায় সেটা নিয়ে খুবই চিন্তিত অর্পিতার বাবা গৌরব বসু।
মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানাচ্ছেন, অভিভাবকদের প্রত্যাশার চাপে অনেকাংশেই হারিয়ে যাচ্ছে শৈশব। পাশাপাশি সন্তানদের সেরা তৈরি করার দৌড়ে বাবা-মায়েরা অভিভাবকত্বের দিনগুলো উপভোগও করতে পারছেন না। সন্তানের প্রতি অতিরিক্ত প্রত্যাশা তাদের জীবন গড়ে তোলার পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াচ্ছে। প্রত্যাশা পূরণ করতে না পারলে ছেলে-মেয়ের উপরে রেগে যাওয়া ঠিক নয়। বয়সে ছোট হলেও ওরা যে সম্পূর্ণ আলাদা মানুষ, অভিভাবকদের সে কথা মনে রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন অধিকাংশ মনোবিদ। তাঁরা জানাচ্ছেন, ছাত্র জীবনে সবাই সব বিষয়ে সমান পারদর্শী হবে, সেটা আশা করা উচিত নয়। বরং পড়ুয়ারা পড়াশোনা করুক নিজেদের ইচ্ছেমতো। তাঁদের পরামর্শ, বাবা-মায়ের সন্তানদের বরং শেখান, কী ভাবে সময়ের ব্যবহার করতে হয়। পছন্দের কাজের ফাঁকে কী ভাবে অপছন্দের জরুরি কাজটা সেরে নিতে হয়। তা হলে অনেক জটিল পরিস্থিতিতেও নিজেকে মানিয়ে নিতে শিখবে ওরা। সন্তানদের দোষারোপের পরিবর্তে ওদের কোথায় সমস্যা হচ্ছে, আচরণগত কোনও সমস্যা হচ্ছে কি না সে দিকে নজর দেওয়া অনেক বেশি দরকার। এই কাজ হাতে হাত মিলিয়ে করতে হবে স্কুল কর্তৃপক্ষ এবং অভিভাবকদের। কারণ, শৈশবে একটা বড় সময় স্কুলেই কাটে।
বাবা-মায়েরা কী ভাবে দায়িত্বশীল অভিভাবক হয়ে উঠবেন— তা নিয়ে বৃহস্পতিবার যাদবপুর বিদ্যাপীঠে একটি আলোচনাচক্রের আয়োজন করেছিল আনন্দবাজার পত্রিকা স্কুল সংস্করণ। স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা ও অভিভাবকদের সঙ্গে সভায় উপস্থিত ছিলেন মনোবিদ দেবাশিস রায়। তিনি বলেন, ‘‘অভিভাবকত্বের শুরু ও শেষ কোথায়, সেটা অভিভাবকদের জানা দরকার। সন্তানদের বড় হয়ে ওঠার পথে কোনটা কী ভাবে ব্যবহার করতে হবে, সেটা তাঁদের শেখাতে হবে। অভিভাবকদের মনে রাখতে তাঁরা সন্তানদের শেখাবেন কিন্তু নিয়ন্ত্রণ করবেন না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy