Advertisement
E-Paper

লাঠির তিন ঘায়ে কুকুরছানা অজ্ঞান, ধরল নজর-ক্যামেরা

খালি গা, পরনে লুঙ্গি, হাতে লাঠি। এক ব্যক্তি চন্দননগরে নিজের বাড়ির ফটক খুলে বেরিয়ে লাঠি উঁচিয়ে রাস্তার কুকুর তাড়িয়ে বেড়াচ্ছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ এপ্রিল ২০১৯ ০৪:১৬
আহত কুকুরছানাটি। চন্দননগরে। নিজস্ব চিত্র

আহত কুকুরছানাটি। চন্দননগরে। নিজস্ব চিত্র

ভোটের বাজারে মূলত রাজনৈতিক চাপান-উতোর, গুজব-কিস্‌সা নিয়েই মশগুল সোশ্যাল মিডিয়া বা সামাজিক মাধ্যম। তারই মধ্যে ভাইরাল হয়ে গিয়েছে একটি অন্য রকম ভিডিয়ো।

খালি গা, পরনে লুঙ্গি, হাতে লাঠি। এক ব্যক্তি চন্দননগরে নিজের বাড়ির ফটক খুলে বেরিয়ে লাঠি উঁচিয়ে রাস্তার কুকুর তাড়িয়ে বেড়াচ্ছেন। পাশের বাড়িতে লাগানো সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়েছে এই দৃশ্য: ওই ব্যক্তির তাড়া খেয়ে কুকুরগুলি যে যে-দিকে পারছে, পালাচ্ছে। তাদের মধ্যে কয়েকটি বাচ্চাও ছিল। সাদা রঙের একটি বাচ্চা আচমকাই পড়ে যায় লাঠির সামনে। সঙ্গে সঙ্গে এক ঘা তার মাথায়। টলে পড়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে দ্বিতীয় ঘা। আবার পড়ে যায় কুকুরছানা। এ বার তৃতীয় ঘা। অসাড় হয়ে যায় ছোট্ট শরীরটা। লাঠি দিয়ে ঠেলতে ঠেলতে কুকুরছানাটিকে দূরে নিয়ে গিয়ে ফেলে দেন তিনি। আবার শুরু হয় অন্য কুকুরদের তাড়া করা।

কিছু পরে বাড়ি ফিরে একটি লাল রঙের বালতি নিয়ে বেরোতে দেখা যায় ওই ব্যক্তিকে। বালতি কাত করে এলিয়ে পড়ে থাকা আহত কুকুরছানাটিকে লাঠি দিয়ে ঠেলে তাতে ভরে নেন তিনি। হেঁটে আস্তে আস্তে ক্যামেরার বাইরে চলে যান। কিছু পরে বালতি নিয়ে ফিরে এলেও সেই বালতিতে কুকুরছানা ছিল কি না, বোঝা যায়নি। কুকুরছানাটির চিকিৎসা চলছে।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

চন্দননগর থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে ওই ব্যক্তি, কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মী শ্রীকান্ত গুপ্তের নামে। যাঁর বাড়ির সিসি ক্যামেরায় ছবি উঠেছে, অভিযোগ করেছেন সেই অশোক ধর। তিনি মেট্রো রেলের প্রাক্তন কর্মী। প্রাথমিক ভাবে অশোকবাবুর অভিযোগ ছিল, পুলিশ অভিযোগ নিতে রাজি হয়নি। চন্দননগর কমিশনারেটের এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘পুলিশ দু’পক্ষকে বুঝিয়ে বিষয়টি মিটিয়ে ফেলার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু এক পক্ষ রাজি হয়নি। একটি রাস্তায় লোক চলাচল নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে পুরনো সমস্যা রয়েছে। পুলিশই জখম কুকুরছানাটির চিকিৎসার ব্যবস্থা করে। লিখিত অভিযোগ গৃহীত হয়েছে।’’

অশোকবাবু ফোনে বলেন, ‘‘আমিই বাড়িতে রেখে কুকুরশিশুটির চিকিৎসা করাচ্ছি।’’ তিনি কলকাতার কুকুরপ্রেমী বনশ্রী বিশ্বাস মিত্রকে ডেকে পাঠান। বনশ্রীদেবী বলেন, ‘‘আমাদের সামনেই শ্রীকান্তবাবু জানান, তিনি বিষ খাইয়ে কুকুরগুলোকে মেরে ফেলবেন!’’

শ্রীকান্তবাবুর বক্তব্য কী? ‘‘এরা আমার বাড়ির সামনের গলিতে কুকর্ম করে রাখে। আমাকেই সে-সব পরিষ্কার করতে হয়। অফিসে যেতে দেরি হয়ে যায়। আমি মাটিতে লাঠি ঠুকে ঠুকে তাড়াচ্ছিলাম। বেকায়দায় লাঠি লেগে ওই কুকুরছানাটি আহত হয়ে গেলে আমিই তার চিকিৎসা করাই,’’ বলেন ওই সরকারি কর্মী।

শোভন সেনগুপ্ত নামে চন্দননগরের এক প্রবীণ বাসিন্দা বলেন, ‘‘পথকুকুরের সংখ্যা ভীষণ ভাবে বেড়ে গিয়েছে। কিন্তু তা নিয়ে মানুষে-মানুষে বিবাদ কাম্য নয়।’’ অশোকবাবু নিজের বাড়িতে কেন সিসি ক্যামেরা লাগিয়েছেন, সেই প্রশ্নও তুলেছেন কেউ কেউ। পরিবেশবিদ, চন্দননগরের বাসিন্দা বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়ও স্বীকার করে নিয়েছেন, ‘‘পথকুকুর এখন চন্দননগরের একটা বড় সমস্যা। দিন দিন লাগামহীন ভাবে সংখ্যায় বাড়ছে ওরা। পশুদের উপরে অত্যাচার ঠেকাতে ১৯৬০ সালে আইন তৈরি হয়। কিন্তু প্রশাসন সেই আইন কাজে লাগাচ্ছে না।’’

কেন লাগাচ্ছে না? সরাসরি জবাব নেই। পুর কমিশনার স্বপন কুণ্ডু বলেন, ‘‘পথকুকুরের সমস্যা মেটাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’

Dog কুকুর
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy