Advertisement
০৮ মে ২০২৪
Kanyashree

Kanyashree: লেখাপড়া বন্ধ, সংসার সামলাতে বোনকে নিয়ে চায়ের দোকান খুলেছে গড়বেতার ‘কন্যাশ্রী’ টুম্পা

শনিবার কন্যাশ্রী দিবস। সে দিবস পালনও করা হচ্ছে রাজ্য জুড়ে। ‘কন্যাশ্রী’ টুম্পা বর্মন অবশ্য সাতসকালে ছুটেছে ঠেলাগাড়ির তালা খুলতে।

বোনের সঙ্গে চায়ের দোকানে টুম্পা (বাঁ দিকে)। নিজস্ব  চিত্র

বোনের সঙ্গে চায়ের দোকানে টুম্পা (বাঁ দিকে)। নিজস্ব চিত্র

রূপশঙ্কর ভট্টাচার্য
গড়বেতা শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০২১ ০৬:৪৯
Share: Save:

শনিবার কন্যাশ্রী দিবস। সে দিবস পালনও করা হবে রাজ্য জুড়ে। ‘কন্যাশ্রী’ টুম্পা বর্মন অবশ্য সাতসকালে ছুটবে ঠেলাগাড়ির তালা খুলতে। চায়ের দোকান খুলতে হবে যে! না হলে কর্মক্ষমতা হারানো বাবার ওষুধ কেনা হবে কী করে! আর সংসারের চাকাই বা গড়াবে কী ভাবে!

গড়বেতার উমাদেবী বালিকা বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী টুম্পা কন্যাশ্রী (কে ১) পেয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে স্কুল বন্ধ। এরই মধ্যে বই, খাতা, কলম ছেড়ে টুম্পা এখন ৪ জনের সংসার চালানোর দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছে। মাসখানেক আগে টুম্পার বাবা রবীন্দ্রনাথের মস্তিকে রক্তক্ষরণ হয়। পক্ষাঘাতে কর্মক্ষমতা হারিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ। বাবা অসুস্থ হওয়ার পরে জীবন বদলে যায় টুম্পার। ব্লক অফিসের পিছনে ডাঙাপাড়ার কুঠরি থেকে সকাল ছ’টায় বোন ঝর্নাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে সে। ব্লক অফিসের কয়েকশো মিটার দূরে রাস্তার পাশে রয়েছে তাদের ঠেলাগাড়ি। সেই ঠেলাগাড়িতেই চা দোকান। চা ছাঁকতে ছাঁকতে টুম্পা বলে, ‘‘কখনও চা, কখনও ডিমটোস্ট— খদ্দেরদের দিতে দিতেই দিন পেরিয়ে যায়। বোনও সাহায্য করে। দুপুরে একবার বোনকে বসিয়ে ঘরে গিয়ে স্নান-খাওয়া সেরে আবার চলে আসি। ঘরে ফিরতে রাত ৮ টা বেজে যায়।’’

তার পর পড়তে বসা? টুম্পার উত্তর, ‘‘আর পড়া হয়! ঘুমে চোখ জুড়ে আসে।’’

জলপাইগুড়ির বাসিন্দা রবীন্দ্রনাথ তিরিশ বছর আগে চলে আসেন গড়বেতায়। একসময় চেন্নাইতেও কাজ করেছেন তিনি। পরে আনাজ ব্যবসা করতেন। করোনার জন্য গত বছর লকডাউনে সেই ব্যবসাও বন্ধ হয়ে যায়। সংসার চালাতে খোলেন চায়ের দোকান। সেই দোকানের আয় থেকে এখন বাবার ওষুধ আর সংসারের খরচ সামালাচ্ছে টুম্পা। সঙ্গী সপ্তম শ্রেণির পড়ুয়া বোন। রবীন্দ্রনাথ কাঁপা গলায় বলেন, ‘‘মেয়েটা না থাকলে কী যে হত...।’’ মা লক্ষ্মী জুড়লেন, ‘‘বড় মেয়ের বিয়ে দেওয়ার পর মেজ মেয়ে টুম্পা ও ছোট মেয়ে ঝর্নার পড়াশোনার জন্য ওদের বাবা কম কষ্ট করেনি।
সেই মানুষটাই আজ শয্যাশায়ী। অভাবের জন্য মেয়েদের পড়ার খরচ জোগাতে পারিনি।’’

বর্মন পরিবারের এই অবস্থা দেখে পাশে দাঁড়িয়েছে গড়বেতার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। সংস্থার সদস্য পাড়ার ছেলে চন্দন মাইতি বলেন, ‘‘অসহায় পরিবারটির পাশে থাকার চেষ্টা করছি।’’ টুম্পার স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা উষ্ণা সানগিরিও বলছেন, ‘‘দুঃস্থ ছাত্রীদের পাশে স্কুল থাকে। এ ক্ষেত্রেও সাহায্য দরকার হলে আমি ব্যক্তিগতভাবেও করতে রাজি আছি।’’ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের আশ্বাস দিচ্ছেন গড়বেতা ১-এর বিডিও শেখ ওয়াসিম রেজাও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kanyashree Tea Seller
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE