Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Education

শিক্ষকেরা অনিয়মিত, পড়ুয়াহীন ক্লাসে ঝুলছে তালা, সরকারি স্কুলে ঠাঁই পেয়েছে গরু-ছাগল

ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে তাদের অন্য স্কুলে ভর্তি করিয়েছেন অভিভাবকরা। সাগর ব্লকের তালাবন্ধ স্কুল চত্বর হয়ে উঠেছে গবাদি পশু রাখার জায়গা।

Picture of school in Sagar

সাগর ব্লকের মায়াপুর জুনিয়র হাইস্কুলে ঝুলছে তালা। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সাগর শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৪:৩৮
Share: Save:

স্কুল থাকলেও পড়ুয়াদের দেখা নেই। শিক্ষকেরাও স্কুলে পা রাখেন অনিয়মিত। স্কুলে গেলেও তাঁরা সময়মতো যান না। ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে তাদের অন্য স্কুলে ভর্তি করিয়েছেন অভিভাবকরা। তালাবন্ধ স্কুল চত্বর হয়ে উঠেছে গবাদি পশু রাখার জায়গা।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগর সাগর ব্লকের একটি উচ্চ প্রাথমিক স্কুলের বেহাল দশার অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। সে কথা অস্বীকার করেননি রাজ্যের মন্ত্রী বঙ্কিম হাজরা। এ নিয়ে সরব হয়েছেন জেলা বিজেপি নেতৃত্ব।

সাগর ব্লকের রামকর চর গ্রাম পঞ্চায়েতের মায়াপুর জুনিয়র হাইস্কুলটি শুরু হয়েছিল ২০১৪ সালে। গোড়ায় ৭৫ জন ছাত্র-ছাত্রী ছিল। গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, স্কুল তৈরির জন্য জমি দিয়েছিলেন তাঁরা। এলাকার বাড়ি বাড়ি ঘুরে পড়ুয়া জোগাড়ের কাজও করেছিলেন গ্রামের উপপ্রধান পারুই বইড়া। স্কুলে যাতায়াতের রাস্তার জমিও দেন এলাকাবাসীরা। যাতে গ্রামে ছেলেমেয়েরা এই স্কুলে পড়াশোনা করতে পারে। তবে তাঁদের অভিযোগ, স্কুল তৈরি হলেও গত এক-দেড় বছরে শিক্ষক-শিক্ষিকারা অনিয়মিত হওয়ায় তাঁদের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হতে বসেছে। তাঁদের আরও অভিযোগ, মনোরঞ্জন মণ্ডল প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই স্কুলের অবনতি হয়েছে। প্রায় প্রতি দিন স্কুলে অনুপস্থিত থাকেন তিনি। শিক্ষক-শিক্ষিকারা অনিয়মিত হওয়ার ফলে বন্ধ হয়ে যায় পঠনপাঠনও। ছেলেমেয়েদের অন্য স্কুলে ভর্তি করাতে বাধ্য হন অভিভাবকরা। সেই থেকে তালাবন্ধ স্কুল।

সাগরের এই স্কুলের জন্য জমি দিয়েছিল তাপসী দাসের পরিবার। তাপসী বলেন, ‘‘স্কুল না হলে আমাদের জমি ফেরত দেওয়া হোক। তা না হলে ফিরিয়ে দেওয়া হোক জমির অর্থমূল্য।’’ স্কুল চালু রাখা হোক, এমনটা চান গ্রামের বাসিন্দা ভিগুরাম দাস এবং দিলীপ বইড়া, দু’জনেই। তাঁদের কথায়, ‘‘আমরা চাই, স্কুল আবার চালু হোক। এ নিয়ে সরকার পদক্ষেপ করুক।’’

গ্রামের উপপ্রধান পারুই বইড়া বলেন, ‘‘আমার ছেলেও এই স্কুলেই পড়ত। কিন্তু টিচারেরা না আসায় তাকে অন্য স্কুলে ভর্তি করাতে হয়েছে। বিধায়ক বঙ্কিম হাজরার উদ্যোগে এলাকাবাসীরা মিলে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বাচ্চাদের জোগাড় করে খুব কষ্ট করে স্কুলটা চালু করেছিলাম। গোড়ায় ভালই চলছিল। তবে পরে স্কুলে অনিয়মিত আসতেন শিক্ষকেরা। প্রধান শিক্ষক মনোরঞ্জন মণ্ডল মহাশয় তো প্রায়ই স্কুলে আসেন না।’’ প্রায় একই অভিযোগ করেছেন এ স্কুলের প্রাক্তন ছাত্রী সঙ্গীতা গিরি। তাঁর কথায়, ‘‘মায়াপুর জুনিয়র হাইস্কুলে আমরা ১২-১৩ জন পড়তাম। পঠনপাঠনে উন্নতি না দেখে অন্য স্কুলে চলে গিয়েছি। ২-৩ জন শিক্ষক থাকলেও তাঁরা স্কুলে আসতেন না। ধীরে ধীরে পড়ুয়ারাও কমতে থাকে। অতিমারির আগে মিড-ডে মিল দেওয়া হত। তা-ও বন্ধ হয়ে যায়। এখন স্কুলের ঝাঁপ বন্ধ। এখন ওখানে গরু-ছাগল রাখা হয়।’’

নিজের এলাকার একটি স্কুলের এ দশা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল রাজ্যের সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী বঙ্কিম হাজরা। তিনি বলেন, ‘‘ক্ষমতায় আসার পর সাগর ব্লকে ৮টি উচ্চ প্রাথমিক স্কুলের অনুমোদন দিয়েছিল রাজ্য সরকার। কয়েকটি স্কুলে এখনও পর্যন্ত সরকারি শিক্ষক আসেননি। তবে স্কুলে শিক্ষকেরা অনিয়মিত হওয়ায় অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ সঞ্চারিত হয়েছে।’’ এই স্কুলের বিষয়ে প্রশাসন, অভিভাবক-সহ সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠকে বসেছিলেন তিনি। জেলা স্কুল পরিদর্শককেও বিষয়টি জানান। চলতি বছরও কিছু ছাত্র ভর্তি হয়েছে বলে তাঁর দাবি। কিন্তু ক্লাস না হওয়ায় স্কুল বন্ধ।

স্কুল বন্ধ হওয়া নিয়ে শাসকদলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বিজেপি নেতা অরুণাভ দাস। তাঁর দাবি, ‘‘পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সাগর ব্লকে শিক্ষার হার রাজ্যের মধ্যে বেশ উপরের দিকে। সেখানে একটা জুনিয়র হাইস্কুল উঠে যাচ্ছে। এটা লজ্জার বিষয়। আরও লজ্জার, শিক্ষকেরা বসে বসে বেতন পাচ্ছেন। এই এলাকায় সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রীরও বাড়ি। তিনি তো লজ্জায় মুখ দেখাতে পারবেন না। হাইস্কুলেও ওই শিক্ষকদের ট্রান্সফার করে দিতে পারতেন। এখানেও কাটমানির গল্প। শিক্ষকের বেতনের কিছু অংশ শাসকদলের নেতাদের পকেটে যাচ্ছে। আমরা চাই, পুনরায় স্কুল চালু হোক।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Education sagar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE