Advertisement
E-Paper

ইলিশের সাত-পদের স্বপ্ন দেখিয়ে পগার পার

গঙ্গাবক্ষে ইলিশ— উপরি পাওনা ‘হাত বাড়ালেই’ চা-কফি, ‘মন ভোলানো গান’ আর শ্রাবণের সকাল থেকে সাঁঝ নেমে আসা পর্যন্ত ভরা বর্ষার গাঙে ভিজে-মিঠে বাতাস গায়ে মেখে একেবারে ‘অন্যরকম’ একটা দিন কাটানোর হাতছানি।

তাপস ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০১৫ ০৩:৩৭
অঙ্কন: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য

অঙ্কন: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য

গঙ্গাবক্ষে ইলিশ— উপরি পাওনা ‘হাত বাড়ালেই’ চা-কফি, ‘মন ভোলানো গান’ আর শ্রাবণের সকাল থেকে সাঁঝ নেমে আসা পর্যন্ত ভরা বর্ষার গাঙে ভিজে-মিঠে বাতাস গায়ে মেখে একেবারে ‘অন্যরকম’ একটা দিন কাটানোর হাতছানি।

সরু রাস্তায় অনর্গল অটোর ফটফট আর লজঝড়ে রিকশার নাছোর প্যাঁক প্যাঁক হর্নের দাপট উজিয়ে মাস খানেক ধরে চুঁচুড়ার বাসিন্দাদের কানের পোকা খেয়ে ফেলেছিল চোঙা মাইকের প্রচারটা।

সকাল থেকে সন্ধ্যা, ঘড়ির মোড় থেকে খাদিনা, কারবালা থেকে নদীর পাড় ঘেঁষা রাস্তা, কান পাতলেই শোনা যাচ্ছিল— ‘ভাবুন তো, আপনার পাতে একে একে এসে পড়ছে ভাপা ইলিশ, ইলিশ-পাতুরি, সর্ষে ইলিশ, ভাজা ইলিশ, দই ইলিশ, জিরে-বেগুনের পাতলা ঝোলে ইলিশ আর হ্যাঁ, ইলিশের ডিমের বড়া...হাত বাড়ালেই পাচ্ছেন চা-কফি। একেবারে অন্যরকম একটা দিন কাটিয়ে যান, মাত্র সা-ড়ে আ-ট-শো টা-কা-য়...’ শেষ দিকে লম্বা টান।

চুঁচুড়ার পুরনো বাসিন্দা নীলিমেশ সান্যাল বলছেন, ‘‘ইলিশের সাত-পদের নাম শুনে টাকার অঙ্কটা শোনার জন্য কান খাড়া রাখতাম। বার কয়েক শোনার পরে বুঝলাম ভুল শুনিনি, সাড়ে আটশো।’’ ওই সামান্য টাকায় এত পদ? নিজেকে আর বেঁধে রাখতে পারেননি ওই প্রৌঢ়। নীলিমেশবাবু একা নন। ইলিশ উৎসবের এই ‘কলকাত্তাইয়া ট্রেন্ডে’ পা বাড়িয়েছিলেন অন্তত জনা সত্তর— প্রৌঢ় থেকে মাঝবয়সি প্রমীলা, চাপা জিনস্-প্যান্টে যুগল। এমনকী সদ্য সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেওয়া চুঁচুড়ার ক্রুকেট লেনের সপরিবার বিজন মিত্রও। হুগলির কৃষ্ণপুরের বিরূপাক্ষ কর্মকার বলছেন, ‘‘এমন ইলিশ উৎসব-টুৎসব তো কলকাতায় হয় বলে শুনেছি। আমাদের এখানে এমন একটা সুযোগ পেয়ে সময় নষ্ট করিনি।’’ কারবালার বাসিন্দা ইলিশ উৎসবের এক মাত্র উদ্যোক্তা সঞ্জীব ঘোষের কাছে তড়িঘড়ি টাকা জমা দিয়েছিলেন তিনি।

রবিবার টিপ টিপ বৃষ্টির মধ্যেই চুঁচুড়ার লঞ্চ ঘাটে পৌঁছে তাঁরা পেয়ে গিয়েছিলেন রঙিন বেলুন, শিকলিতে সাজানো ইলিশ-লঞ্চ। বিরূপাক্ষ বলছেন, ‘‘ঘাটে এসে দেখি হারমোনিয়াম, তবলা, ব্যাঞ্জো নিয়ে মিউজিক পার্টিও হাজির।’’ বিজনবাবু ব্যাজার মুখে বলছেন, ‘‘আয়োজন সম্পূর্ণ, ভাবতেই পারিনি দিনটা সত্যিই অন্য রকম হবে!’’

বৃষ্টি ধরে আসে, বেলা বাড়তে থাকে। আকাশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে শ্রাবণের চড়া রোদ্দুর। কপালে ঘাম মুছে ইলিশ-প্রেমী চুঁচুড়ার বিজনবাবুরা গোমড়া মুখে পায়চারি করতে থাকেন ঘাটে। গানের দল ঘাটে বসেই কিঞ্চিৎ মকশো সেরে নিয়ে কপালে ভাঁজ ফেলে গজর গজর করতে থাকে। আর মৃদু বর্ষার হাওয়ায় গঙ্গাবক্ষে মৃদু-মন্দ দুলতে থাকে ইলিশ-লঞ্চ।

কিন্তু বেলা গড়িয়ে দুপুর, ক্রমে অলস রবিবার বিকেলের দিকে গড়িয়ে গেলেও ইলিশ-উদ্যোক্তা সঞ্জীবের দেখা নেই। তাঁর ফোন ক্রমাগত বলে চলেছে ‘পরিষেবা সীমার বাইরে’। সহ্যের সীমাও ভাঙতে থাকে ইলিশ-অভুক্ত নীলিমেশবাবুদের। বিকেল ফুরিয়ে আসতে অনেকেই ফিরে যেতে থাকেন বাড়ি। অনেকে পুলিশে যাওয়ার তোড়জোড় শুরু করেন। তাঁদেরই এক জনের কথায়, ‘‘ক্ষোভটা সাড়ে আটশো টাকা গেল বলে নয়, এ মরসুমে এক বারও ইলিশটা চেখে দেখিনি। সেই খিদেটা নিয়ে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে বলেই ক্ষোভ।’’ তবে মাঝবয়সি এক দম্পতি বলে গেলেন, ‘‘রাগ নয় বড্ড লজ্জা হচ্ছে জানেন, লোভ করা যে পাপ তা হাড়ে হাড়ে মালুম হচ্ছে।’’

সন্ধ্যায় চুঁচুড়া থানায় একটা প্রতারণার অভিযোগ হয়েছে বটে। তবে পুলিশ কারবালায় সঞ্জীবের ঠিকানায় গিয়ে দেখেছে। সেখানে মস্ত তালা ঝুলছে। ইলিশের স্বপ্ন দেখিয়ে তিনি যে তখন পরিষেবা সীমার বাইরে!

chuchura hilsa festival tapas ghosh money
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy