Advertisement
E-Paper

রাজ্যে জমি ধরে রাখতে ভরসা সেই জোট

বিপর্যয়ের কালো মেঘের মধ্যেও রুপোলি রেখা বার করার চেষ্টা শুরু করল বিরোধী জোট। পরাজয়ের প্রাথমিক ধাক্কা সামলে তথ্য হাতে নিয়ে আলিমুদ্দিন দেখছে, দু’বছর আগের লোকসভা ভোটের তুলনায় এ বার আর নতুন করে ক্ষতি হয়নি।

সন্দীপন চক্রবর্তী ও প্রেমাংশু চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৬ ০৩:৩৬

বিপর্যয়ের কালো মেঘের মধ্যেও রুপোলি রেখা বার করার চেষ্টা শুরু করল বিরোধী জোট।

পরাজয়ের প্রাথমিক ধাক্কা সামলে তথ্য হাতে নিয়ে আলিমুদ্দিন দেখছে, দু’বছর আগের লোকসভা ভোটের তুলনায় এ বার আর নতুন করে ক্ষতি হয়নি। গত লোকসভা নির্বাচনের সমান ভোট এ বার ধরে রেখেছে বাম-কংগ্রেস। লোকসভায় বিজেপি-র বাক্সে চলে যাওয়া ভোটের ঘর ওয়াপসি বিধানসভায় ঘটাতে না পারা অবশ্যই ব্যর্থতা। কিন্তু এই ভরপুর তৃণমূলের বাজারে কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতা না থাকলে আরও রক্তক্ষরণ যে অবধারিত ছিল, সিপিএম রাজ্য নেতৃত্ব এখন সেই ব্যাপারে নিঃসংশয়। এই বাস্তবের মাটিতে দাঁড়িয়েই আলিমুদ্দিনের সিদ্ধান্ত, মানুষের জোট ধরে রেখেই আপাতত পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে। শাসক দলের সন্ত্রাস থেকে তৃণমূল-বিজেপি’র সখ্য— এই সব কিছুর বিরুদ্ধেই জোট কার্যকরী হতে পারে।

বাংলা ব্রিগেডের এই যুক্তিকে অস্ত্র করেই পলিটব্যুরোয় ঝড় মোকাবিলায় তৈরি হচ্ছেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরিও। দলের আদর্শের সঙ্গে আপস করে কংগ্রেসের হাত ধরতে গিয়ে নির্বাচনেও মুখ পুড়ল, এই অভিযোগে পলিটব্যুরোর আসন্ন বৈঠকে ইয়েচুরি এবং আলিমুদ্দিনের নেতাদের চেপে ধরতে চাইছে প্রকাশ কারাট শিবির। সেই আক্রমণ মোকাবিলায় ইয়েচুরির একটাই যুক্তি যে, জোট না থাকলে আরও বড় বিপদ আসত!

একই মত প্রদেশ কংগ্রেসেরও। প্রদেশ সভাপতি অধীর চৌধুরী জানিয়ে দিয়েছেন, বামেদের সঙ্গে জোট বজায় রেখে এগোনোর ব্যাপারে তাঁদের কোনও ছুঁৎমার্গ নেই। কংগ্রেস নেতারাও তাঁদের ময়নাতদন্তে দেখছেন, তাদের ৪৪ এবং বামেদের ৩৩টি আসন ঘরে তোলা সম্ভব হয়েছে জোটের জোরেই। তৃণমূলের বিপুল জয়ের ফলে রাজ্য রাজনীতির বিরোধী পরিসরের যা হাল দাঁড়িয়েছে, সেখানে পানি পেতে গেলে জোট ধরে রেখে এগোনোই যুক্তিযুক্ত।

আলিমুদ্দিনে শনিবার সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে ভোটের ফল নিয়ে প্রাথমিক কাটাছেঁড়ায় দেখা গিয়েছে, গণতান্ত্রিক জোটের মধ্যে বাম, কংগ্রেস ও নির্দল প্রার্থীরা যা ভোট পেয়েছেন, তা একসঙ্গে ধরলে সেই ৩৯%-এর ঘরেই গিয়ে দাঁড়াচ্ছে। যা গত লোকসভা নির্বাচনে বাম ও কংগ্রেসের সম্মিলিত ভোটের সমান। জোট শিবিরের আশা ছিল, দু’বছর আগে বাম বা কংগ্রেসের ঘর থেকে যে অংশের সমর্থন বিজেপি-র দিকে চলে গিয়েছিল, তার কিছুটা হলেও প্রত্যাবর্তন ঘটবে। কিন্তু বাস্তবে তা ঘটেনি। বিজেপি এ বার যে ভোট হারিয়েছে, তার ফায়দা পেয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাতে তৃণমূলের সঙ্গে জোটের ভোট-শতাংশ ও আসনের ফারাক দুই-ই বেড়েছে। আবার এটাও সত্যি যে, জোটের জোরে মমতার ভবানীপুর, অরূপ বিশ্বাসের টালিগঞ্জ বা পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বেহালা পশ্চিম-সহ বহু আসনে শাসক দলের জয়ের ব্যবধান কমিয়ে আনা গিয়েছে। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, ‘‘যে পরিস্থিতিতে গণতান্ত্রিক জোট করা হয়েছিল, সেই সিদ্ধান্তে ভুল ছিল না। ভোটের ফলের প্রবণতায় বোঝা যাচ্ছে, যা পেয়েছি, জোট না থাকলে সেটাও পেতাম না! উল্টে বিজেপি প্রধান বিরোধী শক্তি হিসাবে দ্বিতীয় স্থানে এখনই উঠে আসত!’’

দলে আলোচনার পরে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র এ দিন বলেছেন, ‘‘এত হতাশা ছড়ানোর কারণ নেই। কেন্দ্র ধরে ধরে দেখলে ২০১৪-র পরিস্থিতি থেকে একটু হলেও এগোনো গিয়েছে। শাসক আর বিরোধী জোটের মোট প্রাপ্ত ভোটের মধ্যে ৩০ লক্ষের তফাত।’’ তাঁর সওয়াল, ‘‘যে ভাবে সন্ত্রাস চলছে, গণতন্ত্রের উপরে আক্রমণ হচ্ছে, তাতে মানুষের জোট এখনও প্রাসঙ্গিক। গণতান্ত্রিক জোটে যারা ছিল, সেই বামপন্থী, কংগ্রেস, আরজেডি, জেডিইউ ও নির্দলদের সঙ্গে আমরা

কথা বলব। কে শেষ পর্যন্ত সঙ্গে থাকবেন বা থাকবেন না, তাঁদের ব্যাপার। কিন্তু আমরা চাই একসঙ্গে পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে।’’ জোটে অবিশ্বাসের বাতাবরণ কাটাতে কংগ্রেসের সব ভোট বামেদের বাক্সে গিয়েছে কি না, এই সংশয় নিয়েও জলঘোলা বন্ধ রাখতে চেয়েছেন সূর্যবাবু। সন্ত্রাসের প্রতিবাদে বিরোধী জোটের নবনির্বাচিত বিধায়কদের নিয়ে রাজ্যপালের কাছে দরবার করার পরিকল্পনাও নিচ্ছে আলিমুদ্দিন।

সূর্যবাবুর বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়ে কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্যও বলেছেন, ‘‘ভোটের সময়ে তাড়াহুড়ো করে জোট করতে গিয়ে নিশ্চয়ই কিছু সমস্যা থেকে গিয়েছে।

কিন্তু এখন রাজ্য জুড়ে সন্ত্রাস ও তৃণমূল-বিজেপি’র আঁতাঁতের মোকাবিলায় জোট হিসাবেই আমাদের কর্মসূচি নিতে হবে। আগামী লোকসভা নির্বাচনের আগে এটাই আমাদের জন্য উপযুক্ত পথ হতে পারে।’’ সূর্যবাবু, অধীর বা প্রদীপবাবুর বক্তব্যেই পরিষ্কার, দিল্লিতে এআইসিসি-র মুখপাত্রদের কেউ কেউ বেসুর গাইলেও বাংলায় তাঁরা সে সবে আমল দিচ্ছেন না।

সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে এ দিন কথা হয়েছে, বিপর্যয় ও হামলার সময়ে জোট নিয়ে কাদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ রাখাই ভাল। সূর্যবাবুও পরে বার্তা দিয়েছেন, ‘‘অত্যুৎসাহীদের কেউ ঘোলা জলে মাছ ধরতে পারেন! কিন্তু গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জীবিকা রক্ষায় মানুষের জোট এগোবে।’’ ঘোলা জলে মাছ ধরার লোক অবশ্য সূর্যবাবুদের দলে এখনও মজুত! কারাট শিবিরের অভিযোগ, বিশাখাপত্তনম পার্টি কংগ্রেসের বেঁধে দেওয়া রাজনৈতিক লাইন তো বটেই, কেন্দ্রীয় কমিটি র সিদ্ধান্তও ভেঙে কংগ্রেসের হাত ধরেছে আলিমুদ্দিন। আর সাধারণ সম্পাদক হিসাবে ইয়েচুরি অন্ধ ধৃতরাষ্ট্র হয়ে থেকেছেন। কারাট-শিবিরের একাধিক পলিটব্যুরো সদস্যের দাবি, বাংলার নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে প্রকাশ্যে হাত মিলিয়ে আলিমুদ্দিনের নেতারা যা করেছেন, তা তাঁদের নিজস্ব রণকৌশল। এ সবে কেন্দ্রীয় কমিটির ছাড়পত্র ছিল না।

বাংলার নেতারা আবার বলছেন, আদর্শের দোহাই দিয়ে আলাদা লড়ে বাংলায় আরও খারাপ ফল হলে কে দেখত? বাংলার জন্য কেরলে প্রভাব পড়ার যে আশঙ্কা করা হচ্ছিল, তা-ও অমূলক প্রমাণিত‌। সে রাজ্যে ভাল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ফিরেছে বামেরা। তা হলে বৃথা জলঘোলায় লাভ কী!

assembly election 2016 TMC CPM Congress
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy