Advertisement
E-Paper

নম্বরের যোগে ভুল সংসদের, আতান্তরে ছাত্র

আরটিআই বা তথ্য জানার অধিকার আইন অনুযায়ী আবেদন করে জবাব মিলছে, পরীক্ষার্থীটির আরও অন্তত ছ’নম্বর পাওয়ার কথা। অথচ উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভানেত্রী বলে দিয়েছেন, ‘‘ছাত্রটির অঙ্কের খাতায় নম্বর বাড়ার মতো কিছুই পাওয়া যায়নি।’’

সুপ্রিয় তরফদার

শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:৩১

আরটিআই বা তথ্য জানার অধিকার আইন অনুযায়ী আবেদন করে জবাব মিলছে, পরীক্ষার্থীটির আরও অন্তত ছ’নম্বর পাওয়ার কথা।

অথচ উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভানেত্রী বলে দিয়েছেন, ‘‘ছাত্রটির অঙ্কের খাতায় নম্বর বাড়ার মতো কিছুই পাওয়া যায়নি।’’

এই টানাপড়েনে ঘোর আতান্তরে পড়েছেন হুগলির গোঘাট হাইস্কুলের পড়ুয়া সব্যসাচী কোলে। ২০১৫ সালের ওই কৃতী উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী অঙ্কে মাত্র তিন নম্বর কম পাওয়ায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূতত্ত্বে ভর্তি হওয়ার সুযোগ হারিয়েছেন। অথচ তথ্য জানার অধিকার আইনে আবেদন করার পরে তাঁকে জানানো হয়েছে, গণিতে তাঁর আরও ছ’নম্বর পাওয়ার কথা। এবং সেটা যোগ করতে ভুল করেছে সংসদই। কিন্তু সংসদ-প্রধান বাড়তি নম্বরের কথা মানতেই চাইছেন না। এই অবস্থায় যাদবপুর তো হাতছাড়া হয়েছেই। তার উপরে বছর ঘুরতে চলা সত্ত্বেও সংসদ সংশোধিত মার্কশিট না-দেওয়ায় বিড়ম্বনা বেড়েছে ওই পরীক্ষার্থীর।

সম্প্রতি কেন্দ্রের জয়েন্ট পরীক্ষা দিয়েছেন সব্যসাচী। রাজ্যের জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষায় উচ্চ মাধ্যমিকের নম্বর যোগ না-হলেও কেন্দ্রীয় জয়েন্টে তার প্রয়োজন হয়। তাই নতুন মার্কশিট না-পেলে ফের ভুগতে হবে সব্যসাচীকে। সংসদের সচিবকে পুরো বিষয়টি জানিয়েছেন তিনি। তার পরেও সংশোধিত মার্কশিট দিতে সংসদ তৎপর হয়নি বলে অভিযোগ।

হুগলির বাসিন্দা সব্যসাচী জানান, উচ্চ মাধ্যমিকের মার্কশিট হাতে এলে তিনি দেখেন, পদার্থবিদ্যায় ৯৫ এবং রসায়নে ৯৩ পেলেও অঙ্কে তাঁকে মাত্র ৮১ দেওয়া হয়েছে। অঙ্কে প্রত্যাশিত নম্বর না-পেয়ে গত জুনে সংসদে পুনর্মূল্যায়নের জন্য আবেদন করেন তিনি। জুলাইয়ে তাঁকে জানানো হয়, অঙ্কের উত্তরপত্রের পুনর্মূল্যায়নে এক নম্বরও বাড়েনি। জিওলজি বা ভূতত্ত্বে ভর্তি হওয়ার জন্য পদার্থবিদ্যা, রসায়ন ও অঙ্ক মিলিয়ে মোট ৩০০ নম্বরের মধ্যে ২৭২ চেয়েছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। ‘‘কিন্তু আমার ছিল ২৬৯। মাত্র তিন নম্বর কম ছিল। পুনর্মূল্যায়নে নম্বর না-বাড়ায় যাদবপুরে ভর্তি হতে পারিনি,’’ সব্যসাচীর গলায় হতাশা স্পষ্ট।

গত সেপ্টেম্বরে আরটিআই আইনে পরীক্ষার খাতা দেখতে চান ওই ছাত্র। তখন দেখা যায়, প্রাপ্ত নম্বর যোগ করতেই ভুল হয়েছে। বাড়বে ছ’নম্বর। অঙ্কের নম্বর ৮১ থেকে বেড়ে হওয়ার কথা ৮৭। ‘‘কিন্তু শুধু তিন নম্বরের জন্য যাদবপুরে ভর্তি হতে পারলাম না’’— আক্ষেপ ওই ছাত্রের। জয়েন্টে মনোযোগ দেন সব্যসাচী। সেই সঙ্গে সংশোধিত মার্কশিটের জন্য শুরু হয় আবেদন-নিবেদন। কিন্তু বছর ঘুরলেও সমস্যার সমাধান হয়নি। তিনি বলেন, ‘‘সংসদের বর্ধমান আঞ্চলিক অফিসে সব জানিয়েও লাভ হয়নি। পরে সল্টলেকের বিদ্যাসাগর ভবনে উচ্চশিক্ষা সংসদের সদর দফতরে সচিবের কাছে সমস্ত তথ্য ও নথি জমা দিই। বর্ধিত নম্বর যোগ করে সংশোধিত মার্কশিট দেওয়ার জন্য আবেদন করি। তাতেও কাজ হয়নি।’’ ছাত্রটির অভিযোগ, সংসদের সদরে বারবার দরবার করেও ফিরতে হয়েছে শূন্য হাতে। কেন্দ্রীয় জয়েন্টে যে নতুন মার্কশিট দরকার হবে, সংসদকে সেটা জানানো সত্ত্বেও কোনও ফল হয়নি।

পুরো বিষয়টিতে বিস্মিত সংসদের একাংশও। সেখানকার এক আধিকারিকের বক্তব্য, উত্তরপত্রের পুনর্মূল্যায়নে ভুল না-হলে ওই ছাত্র অনায়াসে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারতেন। ভুলের জন্য তাঁর একটি বছর নষ্ট হল। ‘‘এটা ঠিক হয়নি। তার উপরে নতুন মার্কশিট নিয়ে এত টালবাহানা কেন,’’ প্রশ্ন তুলছেন সংসদের ওই আধিকারিক।

জবাবের বদলে সংসদের কেউ কেউ ব্যাখ্যা দিচ্ছেন, বেশ কিছু ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, অঙ্ক ভুল হলে তাতে পরীক্ষকেরা কিছুই উল্লেখ করেন না। অথচ নিয়ম অনুযায়ী সেখানে শূন্য দেওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে তেমন কিছু হয়েছে কি না, সেটাও দেখার বিষয়। অর্থাৎ ভুল অঙ্কের পাশে শূন্যের উল্লেখ না-করায় সেটিতে নম্বর পড়েনি বলে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়ে থাকতে পারে। সংসদেরই অন্য একটি অংশ বলছে, এ ক্ষেত্রে এই সমস্যার কথা ওঠে
না। কারণ, ওই ছাত্রের উত্তরপত্রে ছ’নম্বর দেওয়া সত্ত্বেও সেটা যোগ করতে ভুল হয়েছে বলেই জানিয়েছেন আরটিআই-কর্তৃপক্ষ।

সংসদের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘ছাত্রটি আরটিআই করে যে-খাতা পেয়েছে, তাতে নম্বর বাড়তে পারে। তবে তা বিশেষজ্ঞদের কাছে পাঠানো হয়েছে। ছাত্রটি সুবিচার পাবে।’’

এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে সংসদের সভানেত্রী মহুয়া দাস প্রথমে বলেন, ‘‘আমি এই বিষয়ে কিছুই জানি না। দফতরের কোনও বিষয়ে অভিযোগ থাকলে তা অবশ্যই আমাকে জানাতে হবে। তা না-করে মিডিয়ায় যাওয়াটা আমি ভাল চোখে দেখছি না। সবিস্তার না-জেনে কোনও মন্তব্য করব না।’’

কিন্তু অভিযোগ যদি সত্যি হয়?

‘‘ওই ছাত্রের খাতায় নম্বর বাড়ার মতো কিছু পাওয়া যায়নি,’’ সাফ বলে দেন সংসদ-সভানেত্রী।

marksheet student examination
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy