Advertisement
০৭ মে ২০২৪

অভিষেক-মামলা খারিজ হল, জরিমানা বিজেপির

তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ‘উস্কানিমূলক বক্তব্য’ পেশের অভিযোগ এনে দায়ের করা মামলায় মুখ পুড়ল বিজেপির। এই সংক্রান্ত আবেদনটি খারিজ করার পাশাপাশি বিকৃত নথি পেশ ও তথ্য গোপন করে আদালতের সময় নষ্ট করার জন্য মঙ্গলবার বিজেপি-কে ১০ লক্ষ টাকা জরিমানা করেছেন হাইকোর্টের বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০১৫ ০৩:৪৬
Share: Save:

তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ‘উস্কানিমূলক বক্তব্য’ পেশের অভিযোগ এনে দায়ের করা মামলায় মুখ পুড়ল বিজেপির। এই সংক্রান্ত আবেদনটি খারিজ করার পাশাপাশি বিকৃত নথি পেশ ও তথ্য গোপন করে আদালতের সময় নষ্ট করার জন্য মঙ্গলবার বিজেপি-কে ১০ লক্ষ টাকা জরিমানা করেছেন হাইকোর্টের বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত। এক মাসের মধ্যে এই জরিমানা জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

গত ২১ জুন বসিরহাটের প্রান্তিক ময়দানে বক্তৃতা দিয়েছিলেন অভিষেক। বিজেপির অভিযোগ, সেখানে তিনি বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থাকতে বাংলার মানুষকে চোখ দেখালে চোখ ছিঁড়ে আমরা রাস্তায় ফেলে দিতে পারি, হাত দেখালে হাত কেটে নিতে পারি। কিন্তু মাথায় রাখতে হবে যে মানুষই শেষ কথা বলে এবং শেষ কথা বলবে...।’’ এই বক্তৃতার মাধ্যমে অভিষেক হিংসায় উস্কানি দিয়েছেন বলে অভিযোগ করে ৫ অগস্ট হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করে বিজেপি। ওই আবেদনে বলা হয়, অভিষেকের বক্তৃতার পরে ২৩ জুন দলের সম্পাদক কমল বেরিওয়াল জোড়াসাঁকো থানায় অভিযোগ জানান। দু’দিন পরে ২৫ তারিখ আরও একটি অভিযোগ জমা দেন দলের সাধারণ সম্পাদক অসীম সরকার। কিন্তু তার পরেও এফআইআর দায়ের করেননি জোড়াসাঁকো থানার ওসি। সাংসদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থাও নেননি। তাই নিরপেক্ষ কোনও সংস্থাকে দিয়ে ঘটনার তদন্ত করার জন্য হাইকোর্টের কাছে আর্জি জানায় বিজেপি।

মামলার শুনানির সময় গত ১০ অগস্ট রাজ্যের গভর্নমেন্ট প্লিডার (জিপি) অভ্রতোষ মজুমদার দাবি করেন, বিজেপির অভিযোগ ঠিক নয়। জোড়াসাঁকো থানা তাদের অভিযোগকে ‘জেনারেল ডায়েরি’ হিসাবে নথিভুক্ত করেছে। এই সংক্রান্ত যে নথিটি বিজেপির পক্ষ থেকে আদালতে পেশ করা হয়েছে, তাতে বিকৃতি ঘটানো হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। জিপি আরও জানান, জোড়াসাঁকো থানায় অভিযোগ জানানোর আগে বসিরহাট থানাতেও বিজেপির পক্ষ থেকে আর একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়। সেই অভিযোগটি পুলিশ বসিরহাটের সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এই তথ্যটিও বিজেপি আদালতের কাছে গোপন করেছে।


বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের রায়।

জিপি-র এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিজেপির আইনজীবী ফিরোজ এডুলজি আদালতে জানান, পরে তিনি ওই সঠিক নথি পেশ করবেন। পরে তা পেশ করা হলেও সন্তুষ্ট হয়নি আদালত।

মঙ্গলবার বিচারপতি দত্ত মামলাটি খারিজ করে বিজেপির কড়া সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধি’-র জন্য আদালতকে বিপথে চালানো ও তথ্য গোপন করে আদালতের সময় নষ্ট করা হয়েছে। বিচারপতি তাঁর রায়ে বলেছেন, ‘‘মানুষ মাত্রেই ভুল করে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, কোনও উটকো লোক বা সস্তা জনপ্রিয়তা অর্জনের জন্য তড়িঘড়ি কেউ জনস্বার্থ রক্ষার নামে এই মামলা করেছেন, এমনটা নয়। এমন একটি রাজনৈতিক দল এই মামলা করেছে, যারা গত লোকসভা নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে এখন দেশ শাসন করছে।’’ তাঁর মতে, স্পর্শকাতর একটি বিষয়কে অত্যন্ত অগোছালো ও গা-ছাড়া ভঙ্গিতে আদালতে পেশ করা হয়েছে। যখন মামলার পাহাড় জমে আছে, তখন রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য আদালতের সময় নষ্ট করা মেনে নেওয়া যায় না। এই অবস্থায় আবেদনটি শোনারই কোনও কারণ নেই বলে জানিয়েছে আদালত।

পাশাপাশি, আর্থিক জরিমানা করার কারণ ব্যাখ্যা করে বিচারপতি দত্ত তাঁর রায়ে বলেছেন, ‘এর মাধ্যমে এই বার্তাই যাবে যে, মামলার আবেদনকারী যত শক্তিশালী বা রাজনৈতিক প্রভাবসম্পন্ন হোন না কেন, মামলা দায়ের করার সময় তাঁদের দেশের আইনকে শ্রদ্ধা করা উচিত এবং নিজেদের স্বার্থে সত্য গোপন করা বা বিকৃত নথি পেশ করা ঠিক নয়।’ মোট দশ লক্ষ টাকা জরিমানার অর্ধেক দিতে হবে রাজ্য লিগাল এড সার্ভিসকে। বাকিটা দিতে হবে হাইকোর্টের লিগাল সার্ভিস কমিটিকে। এক মাসের মধ্যে জরিমানা দেওয়া না-হলে রাজ্য আবেদনকারীর বিরুদ্ধে আইন মোতাবেক ব্যবস্থা নিতে পারবে।

আদালত বিজেপির আর্জি খারিজ করে দেওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই স্বস্তির হাওয়া তৃণমূল শিবিরে। অভিষেক নিজে এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য না-করলেও তাঁর আইনজীবী সঞ্জয় বসুর দাবি, ‘‘অভিষেকবাবুর মর্যাদা ও ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য উদ্দেশপ্রণোদিত ভাবে এই রিট পিটিশন করা হয়েছিল। এটা সত্য এবং ন্যায়বিচারের জয়।’’

নিজেদের ভুল স্বীকার করে নিলেও তৃণমূলের দাবি অবশ্য মানতে রাজি হননি বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ। আদালতের রায়কে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘রায় বিরুদ্ধে গেলে তার সমালোচনা করাই এখানকার রেওয়াজ। আমরা তা করছি না। আমরা বলছি, পদ্ধতিগত ভুলের জন্য আদালত জরিমানা করেছে। আমাদের আইনজীবীরা এই ভুল করেছেন। ভবিষ্যতে এ ধরনের ভুল যাতে না হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকব।’’ রাহুলবাবুর দাবি, মামলার মূল বিষয় অর্থাৎ অভিষেকবাবুর উস্কানিমূলক বক্তব্য নিয়ে আদালত কোনও রায় দেয়নি। তাই অভিযোগের গুরুত্ব কমেনি। তাঁর কথায় ‘‘আমরা আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনা করে ডিভিশন বেঞ্চে যেতে পারি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE