আপাত নিরীহ কলিফর্ম প্রজাতির ব্যাক্টিরিয়া। সে-ই এখন কলকাতার ১১টি ওয়ার্ডের মানুষের কাছে ত্রাস। আক্রান্ত এলাকার পাঁচটি জলের নমুনায় এই কলিফর্ম ব্যাক্টিরিয়া খুঁজে পেয়েছে স্কুল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন। তারা এবং পুরসভা উভয়েই এখন ওই ওয়ার্ডগুলি থেকে আরও নতুন নতুন জলের নমুনাতেও কলিফর্ম ব্যাক্টিরিয়া রয়েছে কি না, পরীক্ষা করে দেখছে।
পরজীবী বিজ্ঞানীরা বলছেন, কলিফর্ম কোনও একটি ব্যাক্টিরিয়া নয়, বেশ কিছু ব্যাক্টিরিয়ার সম্মিলিত প্রজাতি। সাধারণত এই প্রজাতির ব্যাক্টিরিয়া ক্ষতিকারক নয়। এরই একটি প্রজাতি ই-কোলাই স্বচ্ছন্দে বাস করে মানুষ এবং জীবজন্তুর অন্ত্রে। এরা আশ্রয়দাতার কোনও ক্ষতি করে না। মানুষ ও জীবজন্তুর মলের নমুনায় তাই ই-কোলাইয়ের উপস্থিতি অতি স্বাভাবিক ঘটনা।
তা হলে কলিফর্ম ব্যাক্টিরিয়া নিয়ে এত আতঙ্ক কেন? সিস্টার নিবেদিতা মহিলা সরকারি মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ, পরজীবী গবেষক কৃষ্ণা রায় বলেন, ‘‘এমনিতে ই-কোলাই কিংবা কলিফর্ম ব্যাক্টিরিয়া নিরীহ হলেও পানীয় জলে তাদের উপস্থিতি স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর।’’ তাঁর ব্যাখ্যা, পানীয় জলের নমুনায় ওই প্রজাতির ব্যাক্টিরিয়া থাকার অর্থ ওই জল কোনও ভাবে মানুষ বা জীবজন্তুর মলবাহিত নোংরা জলের সংস্পর্শে এসেছে। কৃষ্ণাদেবীর কথায়, কলিফর্ম নয়, ভয়টা ওই নোংরা জলেই। ‘‘মলের সঙ্গে নির্গত ক্ষতিকর ভাইরাস, ব্যাক্টিরিয়া, পরজীবী এবং ক্ষতিকারক রাসায়নিক মিশে থাকে নিকাশি জলে। এর কোনও একটা শরীরে গেলেই বিপদ।’’
বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের অধ্যক্ষ উচ্ছ্বল ভদ্রও বলেন, ‘‘সংক্রমণের ধরন দেখে বোঝা যাচ্ছিল জলবাহিত রোগ। নিকাশির জলের সঙ্গে মিশে গিয়েছে পানীয় জল।’’ আইডি-র এক চিকিৎসকের মন্তব্য, ‘‘জলের নমুনায় কলিফর্ম মেলায় আমাদের সন্দেহই বোধহয় সত্যি হতে চলেছে।’’
পানীয় জলে কলিফর্ম ব্যাক্টিরিয়া পাওয়ার পরে পুরসভাকে ওই সব এলাকার জলের নমুনা পুঙ্খানুপুঙ্খ পরীক্ষা করে দেখতে হবে নিকাশি জলের সঙ্গে মিশে যাওয়া ওই জলে কী কী ক্ষতিকর পরজীবী শরীরে ঢুকছে। এক ধরনের ই-কোলাই— ই-কোলাই ০১৫৭: এইচ ৭— মানুষের শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর বলেও জানাচ্ছেন গবেষকেরা।
শুধু জল নয়, আক্রান্ত মানুষের মলের নমুনা পরীক্ষা করেও কলিফর্মযুক্ত পানীয় জলের সঙ্গে কোন কোন ক্ষতিকারক পরজীবী শরীরে ঢুকেছে তার অস্তিত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। বেলেঘাটা আইডি হাসপাতাল থেকে আক্রান্তদের কয়েক জনের মলের নমুনা পাঠানো হয়েছিল ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কলেরা অ্যান্ড এন্টেরিক ডিজিজেস-এ (নাইসেড)। ওই নমুনায় কিছু পায়নি নাইসেড। সংস্থার অধিকর্তা শান্তা দত্ত বলেন, “কোনও ভাইরাস, ব্যাক্টিরিয়া, পরজীবী বা ক্ষতিকারক রাসায়নিকের অস্তিত্ব পেতে হলে আক্রান্ত রোগীর মল সংগ্রহের দুই থেকে তিন ঘণ্টার মধ্যে ভাল ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা শুরু করা জরুরি। অথচ আমাদের কাছেই নমুনা এসেছে মল সংগ্রহের তিন দিন পরে। ফলে কিছুই পাওয়া যায়নি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy