শুভেন্দু অধিকারী। —ফাইল চিত্র।
তাজপুরে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের প্রকল্পের সঙ্গে আদানি গোষ্ঠীর সম্পর্ক পুরোপুরি ছিন্ন হল কি না, সেই বিতর্ক আরও ঘনীভূত হল। বিশ্ববাংলা বাণিজ্য সম্মেলনের মঞ্চ থেকে মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, তাজপুরে বন্দর প্রকল্পের জন্য সরকার দরপত্র চাইবে। ওই প্রকল্পের জন্য আগে আদানিদের প্রস্তাব-পত্র দেওয়ার পরে এখন আবার দরপত্রের ঘোষণায় জল্পনা তৈরি হয়েছিল। আসরে নেমে বিজেপি বুধবার দাবি করেছে, তাজপুরের জন্য আদানিদের আদৌ কোনও আগ্রহই ছিল না! অন্য স্বার্থ সিদ্ধ করার জন্য রাজ্য সরকার ও আদানিদের সমঝোতা হয়েছিল বলে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর দাবি। প্রশাসনিক স্তরে তাজপুর-প্রশ্নে স্পষ্ট আর কোনও ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। তবে বিজেপির দাবিকে ‘অনুমান নির্ভর’ বলে খারিজ করে দিচ্ছে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস।
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু এ দিন আদানি প্রসঙ্গে দীর্ঘ এক কাহিনি প্রকাশ্যে এনেছেন। নিজের এক্স হ্যান্ড্লে (পূর্বতন টুইটার) তাঁর দাবি, আদানিদের একটি সংস্থা এপিজেএল বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রফতানির প্রকল্প হাতে নিয়েছিল। ঝাড়খণ্ডের গোড্ডায় বিদ্যুৎ উৎপাদন করে বাংলাদেশে তা পাঠানোর জন্য চুক্তি হয়েছিল। কিন্তু সমস্যা ছিল, ওই চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশে বিদ্যুৎ পাঠাতে গেলে খুঁটি ও তার নিয়ে যেতে হত মুর্শিদাবাদ জেলার ফরাক্কা এলাকা দিয়ে। সেখানে বহু বছরের আম ও লিচু বাগান থাকায় কৃষকেরা বেঁকে বসেছিলেন। শুভেন্দুর দাবি, এই কারণেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের সঙ্গে আদানির সমঝোতা হয় এবং বিশ্ববাংলা শিল্প সম্মেলনে এসে আদানি মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর সরকারের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তার পরে রাজ্য সরকারের পুলিশ নৃশংস ভাবে আম ও লিচু চাষিদের প্রতিবাদ দমনে নেমেছিল বলে অভিযোগ। বিরোধী দলনেতার বক্তব্য, ‘‘আদানিরা কখনওই তাজপুরের প্রকল্প নিয়ে উৎসাহিত ছিল না। এখন স্বার্থ পূরণ এবং সেই সমঝোতা সম্পূর্ণ হয়ে যাওয়ার পরে আদানিরা মনে হচ্ছে তাজপুর বন্দর থেকে সরে দাঁড়িয়েছে এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওই প্রকল্পের জন্য নতুন উৎসাহী খুঁজতে নেমেছেন। প্রায় এক দশক ধরে এই তাজপুর নিয়ে তিনি বড় গলা করে প্রচার চালাচ্ছেন কিন্তু সেখানে এক বর্গ ইঞ্চির পরিকাঠামোও তৈরি করা হয়নি!’’
শুভেন্দু তোপ দাগার পরে বিজেপির তরফেও এ দিন অভিযোগ করা হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী তাজপুর নিয়ে ‘মিথ্যাচার’ করছেন। দলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় এ দিন দাবি করেছেন, তাজপুরে নয়, আদানি গোষ্ঠী মন্দারমণিতে গভীর সমুদ্র বন্দরের পরিবর্তে স্থল বন্দর তৈরিতে আগ্রহী। সেই কাজ অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে। এই কাজের জন্য প্রচুর জমির প্রয়োজন। রাজ্য প্রশাসন, জেলা প্রশাসন ও আদানি গোষ্ঠীর প্রতিনিধিদল সম্প্রতি জমি চিহ্নিতকরণের কাজ সেরেছে। সেই জমি রাজ্যকেই অধিগ্রহণ করতে হবে। বিজেপি নেতার প্রশ্ন, ‘‘তা হলে কি রাজ্য সরকার নিজের জমি অধিগ্রহণ নীতি বদলে ফেলল? মন্দারমণিতে স্থল বন্দরের জন্য আলাদা করে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে? নাকি পুরোনো দরপত্রেই এই প্রকল্পের কাজ চলছে? এক প্রকল্পের দরপত্রে অন্য প্রকল্প কী করে হয়?’’ সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী ফের বলেছেন, সাগরে গভীর সমুদ্র বন্দরের পরিকল্পনা অনেক দূর এগিয়ে যাওয়ার পরেও তাজপুরে তা সরিয়ে নেওয়ার কথা বলে তৃণমূলের সরকার এমন অনিশ্চয়তা তৈরি করছে, যাতে আখেরে ক্ষতি হয়েছে রাজ্যেরই।
গোটা বিতর্কে এ দিনও প্রশাসনের তরফে স্পষ্ট কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। প্রশাসনিক কর্তাদের একাংশের দাবি, তাঁরাও রয়েছেন কার্যত অন্ধকারেই। শিল্প সম্মেলনের শেষে এ দিন মুখ্যমন্ত্রী এবং অর্থ দফতরের মুখ্য উপদেষ্টা অমিত মিত্রের কাছ থেকেও এই নিয়ে কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে তৃণমূলের নেতা তাপস রায়ের বক্তব্য, ‘‘যাঁরা রাজ্যের শিল্প সম্পর্কে এ সব তথ্য দিচ্ছেন, তাঁরা কোনও খবর রাখেন না। কেবল অনুমানের ভিত্তিতে রাজ্য সম্পর্কে একটা নেতিবাচক ধারণা তৈরি করতে চাইছেন। দুর্ভাগ্যের বিষয়, এঁরা তৃণমূলের বিরোধিতা করতে গিয়ে রাজ্যের স্বার্থের বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছেন।’’ তাঁর আরও মন্তব্য, ‘‘রাজ্যে বিনিয়োগের সম্ভাবনা যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক। শিল্প হবে রাজ্যের মানুষের কথা ভেবে। কোনও শিল্পপতি বা গোষ্ঠীকে দেখে হবে নয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy