মেজাজে: ক্যামেরাবন্দি বাঘ। শুক্রবার সকাল সওয়া ৬টায়।ছবি: বন দফতরের সৌজন্যে প্রাপ্ত
এতদিন ছিল বাঘের গুজব! এ বার জলজ্যান্ত বাঘ! ক্যামেরা ট্র্যাপে ধরা পড়েছে রীতিমতো বয়স্ক এক বাঘের ছবি। শুক্রবার বন দফতর সরকারি ভাবে লালগড়ের জঙ্গলে বাঘের উপস্থিতির কথা জানিয়ে দিয়েছে। আর তাতেই থরহরিকম্প লালগড়ের। শুধু কি লালগড়! ঝাড়গ্রাম ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার জঙ্গল এলাকার বাসিন্দারাও চিন্তায় রয়েছেন। কারণ, লালগড়ের জঙ্গলপপথ ধরে অনায়াসে পৌঁছে যাওয়া যায় ঝাড়গ্রাম, বিনপুর ও বেলপাহাড়ির বিভিন্ন জঙ্গলে। আবার লালগড় থেকে শালবনি ও গোয়ালতোড় জঙ্গলে সহজেই যাওয়া যায়। তাই বাঘটিকে ঘিরে উদ্বেগ বাড়ছে দুই জেলাবাসীর। বাসিন্দারা বলছেন, সারা বছর হাতি নিয়ে জেরবার থাকতে হয়, এখান আবার বাঘ!
বাঘের উপস্থিতির প্রমাণ মেলার পরে এলাকায় প্রচার শুরু করেছে বন দফতর। মেদিনীপুরের ডিএফও রবীন্দ্রনাথ সাহার কথায়, “এই প্রথম আমরা নিশ্চিত হলাম ওখানে বাঘ রয়েছে। তারপরই প্রচার শুরু হয়েছে।আমরা বলছি, যদি একান্তই প্রয়োজন হয় জঙ্গলে যাওয়ার তাহলে দিনে দল বেঁধে যান। যাওয়ার সময় মুখে আওয়াজ করুন। পাশাপাশি অনুরোধ, যত দিন না বাঘটাকে ধরা যায় তত দিন গৃহপালিত পশুকেও ছাড়বেন না।” লালগড়ের বিডিও জ্যোতিন্দ্রনাথ বৈরাগীরও বক্তব্য, “ব্লক প্রশাসন থেকে মাইকে এলাকাবাসীকে সতর্ক করা হচ্ছে। আপাতত যাতে কেউ জঙ্গলে না ঢোকেন। বন দফতর বাঘটিকে ধরার চেষ্টা করছে।”
লালগড়ের জঙ্গল এলাকার বাসিন্দারা মাস খানেক ধরে বাঘের গুজবে ভয়ে ছিলেন। কয়েকটা গরু-বাছুর মরেছিল, বেশ কয়েকটা গরু জখম হয়েছিল, কয়েকটা গরু নিখোঁজ। কিন্তু সেই হামলা হায়না জাতীয় কোনও হিংস্র প্রাণীর বলে দাবি করেছিল বন দফতর। কয়েকদিন আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় বাঘের রাস্তা পেরনোর ছবি ভাইরাল হওয়ায় ‘ভুয়ো’ পোস্টের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপের হুঁশিয়ারিও দিয়েছিল বন দফতর।
পাশাপাশি প্রাণীটি কি বুঝতে মঙ্গলবার লালগড়ের মেলখেড়িয়ার মধুপুর, কামরাঙি, আমলিয়ার জঙ্গলগুলিতে সাতটি ট্র্যাপ ক্যামেরা বসানো হয়েছিল। আশপাশে ছড়ানো হয়েছিল মাংসের টুকরো। শুক্রবার ভোরে মেলখেরিয়ার জঙ্গলে একটি ক্যামেরায় বাঘের স্পষ্ট ছবি উঠেছে। আর তাতেই বেড়েছে আতঙ্ক।
মেলখেরিয়ার গোপীনাথ মুর্মু বলেন, “গত রবিবার গ্রামের অদূরে মধুপুর জঙ্গলে গরু চরানোর সয় স্পষ্ট বাঘ দেখেছিলাম। তারপর থেকে ভয়ে জঙ্গলে যেতে পারছি না।” গ্রামবাসী গায়েন মুর্মুর কথায়, ‘‘রবিবার জঙ্গলে চরার সময় আমার একটা বাছুর মেরে দেয় বাঘটি। খুবই আতঙ্কে আছি।” অনেকে এখন বোরো ধান চাষ করছেন। মেলখেরিয়ার হেম মাহাতো, বড়পেলিয়ার শ্যামচরণ মাহাতোরা বলেন, “বাঘের ভয়ে জমিতে সেচ দিতে যেতে পারছি না।” আতঙ্ক ছড়িয়েছে লালগড় ব্লক সদরেও। বাঘের আতঙ্কে দিন তিনেক বন্ধ ছিল লালগড়ের জঙ্গল ঘেরা পডিহা শিশুশিক্ষাকেন্দ্র। এখন বাঘের ছবি মেলায় আতঙ্কিত অভিভাবক ও শিক্ষিকারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy