—প্রতীকী ছবি।
এক সময়ে চারপাশে জমে থাকত ভিড়। স্তাবকদের সংখ্যাই বেশি। মন্ত্রী বা প্রভাবশালী যেখানেই যাচ্ছেন, সঙ্গে পারিষদ, গাড়ি। পুলিশ সেলাম ঠুকছে। বেশির ভাগ সময়ে মঞ্চের প্রধান আসনটা তাঁরই জন্য। খানাপিনা, প্রশংসা, তোয়াজ ও সর্বোপরি ক্ষমতা।
গত কয়েক বছরে কখনও সারদা, কখনও নারদ, কখনও নিয়োগ-দুর্নীতির অভিযোগে ধরা পড়ার পরে এক নিমেষে বদলে যাচ্ছে প্রভাবশালীদের জীবন। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত যাঁকে ঘিরে থাকত মানুষ, তিনি দিনের বেশিরভাগ সময়েই দরজা-বন্ধ, জানলাহীন (থাকার মধ্যে আছে একটা ঘুলঘুলি) ঘরে থাকছেন। থাকতে হচ্ছে একা।
জেল-জীবনে ঢুকে তাই দু’-তিন দিনের মধ্যে আকুতি আসছে ওয়ার্ডে রাখার। সেখানে একটি বিশাল ঘরে পাশাপাশি খাট পাতা। অনেক মানুষ। কেউ বিচারাধীন, কেউ সাজাপ্রাপ্ত। তবু তাঁদের মধ্যেই থাকতে চান প্রভাবশালীরা। সারা দিনে অন্য মানুষের মুখ তো দেখা যাবে!
কিন্তু, মন্ত্রী বা প্রভাবশালীদের নিরাপত্তার বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। তাই, তাঁদের ওয়ার্ডে রাখার ঝক্কি অনেক। সবচেয়ে বড় ঝুঁকি— অন্য কোনও বন্দির কাছ থেকে আঘাত আসার সম্ভাবনা। তাই, যে নিরাপত্তা এককালে তাঁরা প্রতিটি মুহূর্তে তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করেছেন, সেই নিরাপত্তাই জেল-জীবনে এসে কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জেল কর্তৃপক্ষের দাবি, শুধু প্রভাবশালী নন, যে বন্দিদেরই ওই একক ঘরে রাখা হয়, তাঁরা কমবেশি সকলেই ওয়ার্ডে থাকতে চান। কারণটা, সেই একাকিত্বের ফাঁস। ছোট সেই ঘরে একটি উঁচু বেদি। যেখানে কম্বল বিছিয়ে শোয়ার ব্যবস্থা। ওই ঘরেরই এক কোণে সারতে হয় শৌচকর্ম। অনেকে বই, খবরের কাগজ চেয়ে নিয়ে পড়েন বটে। তবে, এক জেল কর্তার কথায়, ‘‘যে ঘরে থাকছেন, তার দরজা যদি বাইরে থেকে বন্ধ রাখা হয়, সেই ঘরে যদি কোনও জানলা না থাকে, তা হলে সেই মানসিক চাপ যে কতটা, তা তিনিই একমাত্র বুঝতে পারবেন, যিনি সেখানে থাকছেন।’’
তবে, দিনের কিছুটা সময় জেল চত্বরের খোলা হাওয়ায় ঘুরে বেড়ানোর অনুমতি থাকে সকল বন্দিরই। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে খুলে দেওয়া হয় ঘরের দরজা। সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ ফিরে আসতে হয় ঘরে। আবার বিকেল ৩টে নাগাদ বেরোনোর অনুমতি মেলে। ফিরতে হয় সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে।
জেল কর্তৃপক্ষ সূত্রের খবর, এই মানসিক চাপ ইদানীং কমার সুযোগ এসেছে ভিডিয়ো কনফারেন্সে। সারা দেশেই এখন বন্দির পরিবার বা আইনজীবী চাইলে প্রতি দিন বন্দির সঙ্গে ভিডিয়ো কনফারেন্সে কথা বলতে পারেন। এর জন্য প্রতিটি জেলে এখন ভিসি বা ভিডিয়ো কনফারেন্স রুম তৈরি হয়েছে। সেখানে সার দেওয়া মনিটর রয়েছে। যে সময়টুকু বন্দি ঘর বা ওয়ার্ডের বাইরে থাকেন, তার মধ্যে যে কোনও সময়ে ভিডিয়োর মাধ্যমে কথা বলার সুযোগ পাওয়া যায়। তার জন্য সংশ্লিষ্ট বন্দির বাড়ির লোককে ই-প্রিজ়ন সাইটে গিয়ে ইমেল ও ফোন নম্বর দিয়ে ফর্ম পূরণ করতে হয়। তাতে তাঁদের কাছে একটি ওটিপি যায়।
তবে জেল সূত্রের দাবি, বেশির ভাগ বন্দির পরিবার বা আইনজীবী লগ ইন করেন না। যে প্রভাবশালীরা জেলে ছিলেন বা রয়েছেন, তাঁদের সঙ্গেও পরিবারের লোক নিয়মিত ভিডিয়ো কলে যোগাযোগ রাখেন না বলেও সূত্রের দাবি।
তবে ভিডিয়ো কলের এই পদ্ধতিটি বেশ জটিল বলেও মেনে নিচ্ছেন কারা দফতরের কেউ কেউ। সেটি আরও সরল করতে সম্প্রতি ‘কিউআর কোড’ চালু করেছেন প্রেসিডেন্সি জেলের সুপার দেবাশিস চক্রবর্তী। জানা গিয়েছে, সেই ‘কিউআর কোড’ স্ক্যান করলেই ই-ফর্ম পাওয়া যাবে এবং তা সহজে ভর্তি করা যাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy