সোশ্যাল মিডিয়াতে আসা ‘ব্লু হোয়েল গেম’-এর একটি লিঙ্ক পরীক্ষা করছিলেন সাইবার গোয়েন্দারা। যা পেলেন, তাতে তাঁরা স্তম্ভিত। গোয়েন্দারা দেখলেন, ওই লিঙ্কের সঙ্গে গেমটির আদৌ কোনও সম্পর্ক নেই। আসলে সেটি পাঠিয়েছে কোনও হ্যাকার। যারা ভারত-সহ নানা দেশে ‘ব্লু হোয়েল’ ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ নিয়েই খুলে বসেছে লুঠপাটের নয়া কারবার। কাজেই ওই সমস্ত লিঙ্কে ক্লিক করলেই খোয়া যেতে পারে টাকা, কিংবা মোবাইল বা কম্পিউটারের সমস্ত তথ্য।
‘ব্লু হোয়েল’-এর কবলে পড়ে এ দেশেই প্রাণ হারিয়েছে বেশ কয়েক জন কিশোর-কিশোরী। তাই ফেসবুক-টুইটারের মতো সোশ্যাল সাইট থেকে ‘ব্লু হোয়েল’ সংক্রান্ত সমস্ত লিঙ্ক সরানো শুরু করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। কারা লিঙ্ক ছড়াচ্ছে, কারা কৌতূহল দেখাচ্ছে— সবেতেই চলছে পুলিশের নজরদারি। এক সিআইডি কর্তার কথায়, ‘‘অপরিণত মাথার কিশোর-কিশোরীরা বুঝতে পারছে না, এই খেলা পুরোটাই পাগলামি। মাঝপথে খেলা ছেড়ে দিলে কোনও মতেই দূরে বসে থাকা ‘অ্যাডমিন’ তাদের ক্ষতি করতে পারবে না।’’
আরও পড়ুন: কী ভাবে কাটব হাত, উদ্ধার ছাত্র
সাইবার গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, এই সুযোগেই ‘ব্লু হোয়েল’-কে নকল করে একগুচ্ছ গেম ছড়িয়ে পড়েছে। এর অনেকগুলোই আসলে দুষ্কৃতীদের জাল। সম্প্রতি বিশ্বের নানা প্রান্তের কম্পিউটারে ‘ওয়ানাক্রাই’ র্যানসমওয়্যার ছড়িয়ে মুক্তিপণ আদায় করছিল হ্যাকারেরা। গোয়েন্দাদের সন্দেহ, এ বারও সাইবার দুষ্কৃতীরা সে ভাবে তথ্য চুরি করতে পারে। কিংবা গেম খেলতে শুরু করা কাউকে হুমকি দিয়ে মুক্তিপণ দাবি করতে পারে। বলতে পারে, তাদের টাকা দিলে তবেই মাঝপথে গেম ছেড়ে দেওয়া যাবে। কম্পিউটারে ভাইরাস ঢুকিয়ে নেটব্যাঙ্কিং পাসওয়ার্ড হাতিয়ে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টও খালি করতে পারে তারা।
‘ব্লু হোয়েল’ খেলার আসল বা ভুয়ো লিঙ্ক অনেক সময়েই ছড়ানো হচ্ছে আফ্রিকা বা পূর্ব ইউরোপের কিছু দেশের সার্ভার ব্যবহার করে। সিআইডি সূত্র জানাচ্ছে, সাইবার জগতের বেশির ভাগ দুষ্কর্মে ওই সব দেশের সার্ভার ব্যবহার করা হয়। কিন্তু গেমটি বন্ধ করা যাচ্ছে না কেন? কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা ‘সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট অব অ্যা়ডভান্সড কম্পিউটিং’ (সি-ড্যাক)-এর ডিরেক্টর নবারুণ ভট্টাচার্য বলছেন, কোনও লিঙ্ক বা ওয়েবসাইট ব্লক করা হলেও তাতে উল্টো পথে ঢোকার সুযোগ থাকে। এবং এ ক্ষেত্রে গোটা ছকের উৎস খুঁজে পাওয়া কঠিন। লালবাজারের এক পুলিশকর্তার ব্যাখ্যা, একটি সন্দেহজনক ‘ইন্টারনেট প্রোটোকল অ্যাড্রেস’ (আইপি) ব্লক করা হলে ‘ব্লু হোয়েল’-এর অ্যাডমিনরা সঙ্গে
সঙ্গে অন্য ‘আইপি’ থেকে ফের খেলাটি ছড়াচ্ছে।
একই সুর ইন্ডিয়ান স্কুল অব এথিক্যাল হ্যাকিংয়ের কর্তা সন্দীপ সেনগুপ্তের। তিনি জানান, ‘ব্লু হোয়েল’-এর নির্দিষ্ট কোনও ওয়েবসাইট বা অ্যাপ নেই যে, সেটি একেবারে বন্ধ করা যাবে। এর লিঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে ফেসবুকের মতো জনপ্রিয় সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটের মাধ্যমে। একটি প্রোফাইল বন্ধ হলে আরও একটি খোলা হচ্ছে। সিআইডি-র এক কর্তার কথায়, ‘‘এই খেলার লিঙ্ক সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যক্তিগত চ্যাটবক্স থেকে স্মার্টফোনে খোলা হচ্ছে। ফলে গোড়া থেকে কে, কাকে সেটি ছড়িয়েছে— তা খুঁজে পাওয়া কষ্টসাধ্য।’’ তবে সাইবার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারত-সহ বহু দেশই নীল তিমির কারিগরদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছে। ফলে এই বিপদকে নিকেশ করা যাবে বলেই তাঁদের আশা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy