মে মাসে বঙ্গোপসাগরে জন্ম নেওয়া ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল বর্ষা। নির্ধারিত সময় পার করে দক্ষিণবঙ্গে হাজির হয়েছিল সে। আসার পরেও কার্যত ঝিমিয়েই ছিল তার মেজাজ। কিন্তু পরে সেই বঙ্গোপসাগরের নিম্নচাপের কল্যাণে বর্ষার ব্যাটে এমন রানের বন্যা ছুটল যে, অগস্ট শেষেই বৃষ্টির ভাঁড়ার উদ্বৃত্ত। এখনও খেলা শেষ হচ্ছে না তার। সেপ্টেম্বর শুরু হতে না-হতেই ফের নিম্নচাপ দানা বাঁধছে সাগরে।
আবহাওয়া অফিসের খবর, শনিবার বঙ্গোপসাগরে একটি ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হয়েছে। আজ, রবিবার সেটি নিম্নচাপের চেহারা নিতে পারে। আলিপুর হাওয়া অফিসের অধিকর্তা গণেশকুমার দাস জানান, এই নিম্নচাপের হাত ধরে দক্ষিণবঙ্গে ফের দিন কয়েক জোরালো বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
কিন্তু ওই নিম্নচাপ পুরোদস্তুর দানা বাঁধার আগেই এ দিন ভারী বৃষ্টি শুরু হয়ে গিয়েছে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গে। কেন? এর পিছনে রয়েছে উত্তরবঙ্গ থেকে দক্ষিণবঙ্গের উপর দিয়ে বিস্তৃত একটি নিম্নচাপ অক্ষরেখা। যার টানে বঙ্গোপসাগর থেকে হু হু করে জোলো হাওয়া ঢুকেছে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে। সেই জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়েই বজ্রগর্ভ মেঘপুঞ্জ তৈরি করেছে। রেডার চিত্র বিশ্লেষণ করে আবহবিদেরা জানান, কলকাতার উপরে তৈরি হওয়া সেই মেঘপুঞ্জ থেকেই এ দিন হুড়মুড়িয়ে বৃষ্টি হয়েছে। যার জেরে কিছু ক্ষণের মধ্যেই জলমগ্ন হয়ে পড়ে শহরের অনেক এলাকা।
মৌসম ভবনের হিসেব বলছে, জুন থেকে অগস্ট মাস পর্যন্ত গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে স্বাভাবিকের থেকে ৫ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে। আমজনতার অভিজ্ঞতা বলছে, এ বার টানা বৃষ্টি হয়নি। তা হলে বাড়তি বৃষ্টি হল কী ভাবে? আবহবিদেরা বলছেন, টানা বৃষ্টি না হলেও নিম্নচাপের প্রভাবে বার কয়েক ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হয়েছে এ রাজ্যে। তাতেই মোট বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেড়েছে। বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনন্দময় পুস্তে জানান, আমন ধান লাগানোর পরে জমিতে জল দাঁড়ানো প্রয়োজন। জুলাই, অগস্টে যা বৃষ্টি হয়েছে, তাতে জমিতে পর্যাপ্ত জল জমেছে। নদিয়া, হুগলি, বর্ধমানের মতো কৃষিপ্রধান জেলা ঘুরে এসে আনন্দময়বাবুর মন্তব্য, ‘‘আমন চাষের উপযোগী পরিস্থিতি রয়েছে।’’ কিন্তু নয়া নিম্নচাপ তাতে বাগড়া দেবে না তো? ওই কৃষিবিজ্ঞানীর মনে করেন, এ রকম এক-আধটা নিম্নচাপে হয়তো তেমন সমস্যা হবে না। কিন্তু পরের পর নিম্নচাপের জেরে যদি ভারী বর্ষা হতে থাকে, তা হলে তা চিন্তার কারণ হতে পারে।
দিল্লির মৌসম ভবনের তথ্য বলছে, অগস্ট মাসের শেষে এসে উত্তরবঙ্গে সাত শতাংশ কম বৃষ্টি হয়েছে। স্বাভাবিকের থেকে কিছু কম হলেও চাষের সমস্যা হবে না বলেই মনে করছেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা। আবহাওয়া দফতরের খবর, গত দু’দিন ধরে একটি ঘূর্ণাবর্তের জেরে তরাই-ডুয়ার্স এলাকায় ভারী বৃষ্টি হয়েছে। শুক্রবার বানারহাটে এক দিনে ২৫০ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। প্রবল বৃষ্টি হয়েছে ময়নাগুড়ি, জলপাইগুড়ি, হাসিমারায়। সেচ দফতর সূত্রের খবর, জলঢাকা, সঙ্কোশ, তোর্সার জলস্তর বেড়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy