Advertisement
E-Paper

ডাইন অপবাদে বৃদ্ধাকে খুনের নালিশ

ঝাড়গ্রাম শহর থেকে এই গ্রামের দূরত্ব মাত্র ১২ কিলোমিটার। কাছের স্কুলেই পড়তে যায় গ্রামের সব কচিকাঁচারা। ঝাড়গ্রাম-ধেড়ুয়া পিচ রাস্তার পাশে লালগড়ের এই রাসমণ্ডল গ্রামেই রবিবার সন্ধ্যায় ডাইনি অপবাদে এক বৃদ্ধাকে পিটিয়ে মারার অভিযোগ উঠল। বাড়ির উঠোনে সালিশি বসিয়ে সত্তরোর্ধ্ব কালন্দি মুর্মুকে খুন করা হয় বলে অভিযোগ। মূল অভিযুক্ত কালন্দিদেবীর দেওর সত্য মুর্মু পলাতক।

কিংশুক গুপ্ত

শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৫ ০০:২৮
গ্রামে পুলিশি টহল। —নিজস্ব চিত্র।

গ্রামে পুলিশি টহল। —নিজস্ব চিত্র।

ঝাড়গ্রাম শহর থেকে এই গ্রামের দূরত্ব মাত্র ১২ কিলোমিটার। কাছের স্কুলেই পড়তে যায় গ্রামের সব কচিকাঁচারা। ঝাড়গ্রাম-ধেড়ুয়া পিচ রাস্তার পাশে লালগড়ের এই রাসমণ্ডল গ্রামেই রবিবার সন্ধ্যায় ডাইনি অপবাদে এক বৃদ্ধাকে পিটিয়ে মারার অভিযোগ উঠল।
বাড়ির উঠোনে সালিশি বসিয়ে সত্তরোর্ধ্ব কালন্দি মুর্মুকে খুন করা হয় বলে অভিযোগ। মূল অভিযুক্ত কালন্দিদেবীর দেওর সত্য মুর্মু পলাতক। সত্যবাবুর তিন ছেলে-সহ ৯ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে আটজনকে সোমবার ঝাড়গ্রাম দ্বিতীয় এসিজেএম আদালতে তোলা হলে তিন অভিযুক্তের তিনদিন পুলিশ হেফাজত ও বাকি ৫ জনের ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ হয়। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ বলেন, ‘‘অভিযোগ পাওয়া মাত্রই ৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে। বাকিদের ধরতে তল্লাশি চলছে।’’
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, শুধু কুসংস্কারের বশেই নয়। দুই পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থানগত পার্থক্যও এ দিনের ঘটনার অন্যতম কারণ। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রামে টালির ছাউনি দেওয়া মাটির বাড়িতে মেয়ে-জামাইয়ের সঙ্গে থাকতেন বিধবা কালন্দিদেবী। তাঁর মেয়ে আহ্লাদী মুর্মু বৈতায় একটি ইটভাটার শ্রমিক। তবে জামাই দুখু মুর্মু বেকার। কালন্দিদেবী প্রতি মাসে এক হাজার টাকা করে আদিবাসী পেনশন পেতেন। বাড়িতে বিপিএল বিদ্যুত্‌ সংযোগও পেয়েছিলেন তিনি। মেয়ের দিনমজুরির রোজগার ও তাঁর মাসিক আদিবাসী পেনশনের টাকায় দিন কেটে যেত তাঁদের।

একই উঠোনে খড়ের ছাউনি দেওয়া অন্য একটি মাটির বাড়িতে থাকেন কালন্দিদেবীর সৎ নাতি বাহাদুর হাঁসদা। শনিবার বিকেলে বাহাদুরের স্ত্রী বাসিমণি হাঁসদার (৩০) হঠাৎ পেটে ব্যথা শুরু হয়। বাসিদেবীকে ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হলে রবিবার ভোরে হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়, রক্তাপ্লতার কারণে হৃদযন্ত্র বিকল হয়ে বাসিদেবীর মৃত্যু হয়েছে। গ্রামের আদিবাসী মোড়ল সত্য মুর্মু (সম্পর্কে কালন্দিদেবীর দেওর) বলতে শুরু করেন, বাসিমণির মৃত্যু হয় নি। তাঁর শরীরে ডাইনি রক্ত চুষে খাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে রবিবার সন্ধ্যায় কালন্দিদেবীর বাড়ির উঠোনে বসে সালিশি সভাও। ফতোয়া দেওয়া হয়, ‘হয় প্রাণ বাঁচাও, নয়তো প্রাণ দাও’। মৃত নাতবৌয়ের ফেরাতে পারেন নি কালন্দিদেবী। তাই সকলের মারের চোটে প্রাণ হারান তিনি। কালন্দিদেবীর মেয়ে আহ্লাদি মুর্মুর অভিযোগ, “সত্য মুর্মু-সহ ১৪ জন মাকে ডাইনি অপবাদ দিয়ে লাঠিপেটা করে। মাকে বাঁচাতে গিয়ে আমিও মার খাই।’’

কিন্তু কী কারণে এমন বিরোধ? স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সত্যবাবুর সঙ্গে কালন্দিদেবীর বনিবনা ছিল না। কালন্দিদেবীর স্বামী দ্বিতীয় বার বিয়ে করেছিলেন। সত্‌ ছেলেদের সঙ্গেও কালন্দিদেবীর সম্পর্ক ভাল ছিল না। অন্য দিকে, সত্যবাবুর সঙ্গে কালন্দিদেবীর সত্‌ ছেলেদের সদ্ভাব রয়েছে। তাই রক্তাল্পতায় বাসিদেবীর মৃত্যুর বিষয়টিকে নিয়ে গ্রামে জলঘোলা শুরু হয়। খবর পেয়ে পুলিশ রাতেই মৃতদেহটি উদ্ধার করে। গ্রেফতার করা হয় এক মহিলা সহ ৮ জনকে। সত্য মুর্মু-সহ বাকি ছয় অভিযুক্ত পলাতক।

রাসমণ্ডল গ্রাম থেকে মাত্র আধ কিলোমিটার দূরে রামজীবনপুর গ্রামে থাকেন স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য তথা বৈতা গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান নির্মল সরেন। নির্মলবাবুর বক্তব্য, “আমি দলের কাজে ব্যস্ত ছিলাম। খবর পেয়ে যখন পুলিশের সঙ্গে পৌঁছই, তখন সব শেষ।” পঞ্চায়েত প্রধান অবশ্য বলছেন, “ডাইনি বলে যে কিছু নেই, সে বিষয়ে সচেতন করার জন্য প্রচার করা হবে।”

স্বেচ্ছাসেবী মহিলা সংস্থা ‘সুচেতনা’র সম্পাদক স্বাতী দত্ত বলেন, “রাসমণ্ডল গ্রামটি আদৌ প্রত্যন্ত নয়। আমরা দেখেছি, ওই ঘটনার পিছনে ব্যক্তিগত আক্রোশ ও মহিলার বাস্তুদখল করাটাই মুখ্য উদ্দেশ্য।” লালগড়ের বিডিও অভিজিত্‌ সিংহ বলেন, “ওই গ্রামে ডাইনি বিরোধী সচেতনতা প্রচারের জন্য জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতরের সঙ্গে কথা বলেছি।”

jhargram dherua village kingshuk gupta witchcraft jhargram village jhargram witchcraft suspicious witch woman beaten to death
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy