Advertisement
০২ মে ২০২৪

নারদ-বিতর্ক এড়াতে পুরসভার অধিবেশনে অশোভন দাপাদাপি

দু’দিন আগে ‘নারদ হুলে’ বিদ্ধ হয়েছেন তিনি। বুধবার সেই মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়কে ঘিরেই উত্তাল হল পুর-অধিবেশন। অধিবেশনের শুরুতেই ঘুষ-কাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে মেয়রের পদত্যাগের দাবি তোলেন বিরোধী বাম, কংগ্রেস ও বিজেপি কাউন্সিলরেরা।

পুর-অধিবেশনে তৃণমূল কাউন্সিলর আনোয়ার খানকে ঘিরে চরম উত্তেজনা।

পুর-অধিবেশনে তৃণমূল কাউন্সিলর আনোয়ার খানকে ঘিরে চরম উত্তেজনা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০১৬ ০০:২০
Share: Save:

দু’দিন আগে ‘নারদ হুলে’ বিদ্ধ হয়েছেন তিনি। বুধবার সেই মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়কে ঘিরেই উত্তাল হল পুর-অধিবেশন। অধিবেশনের শুরুতেই ঘুষ-কাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে মেয়রের পদত্যাগের দাবি তোলেন বিরোধী বাম, কংগ্রেস ও বিজেপি কাউন্সিলরেরা। এ নিয়ে ধুন্ধুমার বাধে। শাসক তৃণমূলের একাধিক সদস্যের দাপাদাপিতে সেই উত্তেজনা চরমে ওঠে। মারধরও চলে। এক মহিলা বাম-কাউন্সিলর শাসক পক্ষের এক জনের বিরুদ্ধে শারীরিক নিগ্রহের অভিযোগ তোলেন। পরে মেয়রের প্রতিক্রিয়া, ‘‘টু এভরি অ্যাকশন, দেয়ার ইজ অ্যান ইকুয়াল অ্যান্ড অপোজিট রিঅ্যাকশন।’’ (প্রতিটি ক্রিয়ারই বিপরীত প্রতিক্রিয়া থাকে।)

কী হয়েছিল এ দিন?

দুপুর একটায় পুরভবনে অধিবেশন শুরু হয়। প্রথমেই সদ্য প্রয়াত বামপন্থী নেতা অশোক ঘোষ-সহ একাধিক বিশিষ্ট জনের মৃত্যুতে শোকপ্রস্তাব পাঠ শেষে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন অধিবেশনের হাজির কাউন্সিলরেরা। তার পরে চেয়ারপার্সন মালাদেবী কিছু বলার জন্য প্রস্তুত হতেই বাম কাউন্সিলর রত্না রায়মজুমদার, চয়ন ভট্টাচার্য, কংগ্রেসের প্রকাশ উপাধ্যায়, বিজেপি-র মীনাদেবী পুরোহিত, বিজয় ওঝা-সহ প্রায় সব বিরোধী কাউন্সিলরেরা ওয়েলে নেমে চিৎকার করতে থাকেন, ‘মেয়রের পদত্যাগ চাই।’

এমনটা আগে থেকেই বোধহয় আঁচ করেছিলেন শাসক দলের কাউন্সিলরেরাও। তাঁরাও সঙ্গে সঙ্গে এগিয়ে যান বিরোধী কাউন্সিলরদের দিকে। চলে স্লোগান, পাল্টা স্লোগান। এর মধ্যেই একাধিক বাম কাউন্সিলর মেয়রের বিরুদ্ধে লেখা পোস্টার তুলে ধরেন। কংগ্রেস কাউন্সিলর প্রকাশ উপাধ্যায়ের হাতে ছিল নকল টাকার বান্ডিল। তা দেখেই তৃণমূলের কাউন্সিলর আনোয়ার খান দ্রুত প্রকাশের হাত মুচড়ে বান্ডিল কেড়ে নেন। বাম কাউন্সিলর দেবাশিস মুখোপাধ্যায়ের হাতে ধরা মেয়র বিরোধী পোস্টার ছিনিয়ে নেন আর এক তৃণমূল কাউন্সিলর বিজয় উপাধ্যায়। এর মধ্যেই চেয়ারপার্সন মেয়রকে ভোট অন অ্যাকাউন্ট-এর ভাষণ পড়তে বলেন।

নিশ্চিন্ত আয়েশে মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। বুধবার। — রণজিৎ নন্দী

তুমুল হট্টগোলের মধ্যেই বক্তৃতা শুরু করেন মেয়র। গোলমাল অবশ্য থামেনি। প্রথম দিকে এক বার চিৎকার করলেও পরে কার্যত নীরব থাকেন চেয়ারপার্সন মালা রায়। মেয়রের বক্তব্য চলাকালীনই প্রকাশ উপাধ্যায় তাঁর পকেটে থাকা নকল টাকা ছুড়ে দেন ওয়েলে। বিজেপি-র মীনাদেবী পুরোহিতও প্রকাশবাবুর কাছ থেকে টাকা নিয়ে ছুড়তে থাকেন। তা দেখে আরও তেতে ওঠেন তৃণমূলের পবিত্র বিশ্বাস, আশুতোষ দাস এবং বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায়েরা। এর মধ্যেই দেখা যায় প্রকাশের টুঁটি চেপে ধরার চেষ্টা করছেন পবিত্র, কলার ধরেছেন আরও এক কাউন্সিলর। আসন থেকে উঠে আসেন মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার। পবিত্র ও আনোয়ার-সহ দলের অন্য কাউন্সিলরদের সরিয়ে নিয়ে যান। ততক্ষণে মেয়রের বক্তব্য শেষ হয়েছে।

এ বার চরম ব্যবস্থা নেন মালাদেবী। জাতীয় সঙ্গীত চালানোর নির্দেশ দেন পুরকর্মীদের। চেয়ারপার্সনের সেই ‘শাসনে’ শান্তও হয় অধিবেশন কক্ষ। অধিবেশন পর্ব শেষ হতেই শাসক দলের হাতে মারধর খাওয়ার অভিযোগ তোলে বিরোধী তিন দলেরই কাউন্সিলর। ঘটনার প্রতিবাদে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করার সিদ্ধান্ত নেন বিরোধী কাউন্সিলরেরা। পরে চেয়াপার্সনের হস্তক্ষেপে তা বাতিল করে সর্বদলীয় বৈঠকে বসতে রাজি হন তাঁরা। আগামী সোমবার সেই বৈঠক হবে।

বেরিয়ে এসে ভিতরের ঘটনার প্রতিবাদে বাম ও কংগ্রেস কাউন্সিলরেরা মেয়রের ঘরের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। সেখানে হঠাৎই তৃণমূলের আনোয়ার খানের সঙ্গে বচসা শুরু হয় বাম কাউন্সিলর রীতা চৌধুরীর। রীতার অভিযোগ, তাঁকে নিগৃহীত করেছেন ওই কাউন্সিলর। তাতে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন বিরোধী কাউন্সিলরেরা। সিপিএমের মৃত্যুঞ্জয় চক্রবর্তীর অভিযোগ, ‘‘শুধু রীতাকে নিগ্রহ নয়, আমার পাঞ্জাবীও ছিঁড়ে দিয়েছেন ওই কাউন্সিলর।’’ সিপিএমের চয়ন ভট্টাচার্য এবং কংগ্রেসের প্রকাশের অভিযোগ, ঘুষ-কাণ্ডের সঙ্গে মেয়র জড়িত এই অভিযোগ তোলায় ওঁরা আক্রমণ করলেন। তাঁরা জানান, এর বিধান চাওয়া হবে সর্বদলীয় বৈঠকে। যদিও যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই আনোয়ার খানের বক্তব্য, ‘‘ভিতরে নকল টাকার বান্ডিল কেড়ে নিয়েছি, এটা ঠিক। কিন্তু কোনও মহিলা কাউন্সিলরের গায়ে হাত দিইনি। এটা মিথ্যা অপবাদ।’’

তবে অধিবেশন কক্ষে মেয়র অনেকটা রক্ষণাত্মকই ছিলেন। বাইরে অবশ্য বলেছেন, ‘‘সীমাহীন অভব্য আচরণ করেছে বিরোধী কাউন্সিলরেরা। তাতে প্রতিক্রিয়া আসতেই পারে।’’ পাশাপাশি তিনি এও বলেছেন, ‘‘প্রত্যেক কাউন্সিলরের একটা সীমাবদ্ধতা থাকা উচিত। এ ধরনের ঘটনা কখনওই কাম্য নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

assembly election 2016
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE