উদ্ধারকাজে: বন্যাকবলিত ঘাটালের উপরে আকাশে চক্কর কাটছে হেলিকপ্টার। শুক্রবার। ছবি: কৌশিক সাঁতরা
ঘরে হাঁটুজল, রাস্তায় নৌকো, ত্রাণ শিবিরে দিনগুজরান— ফি বর্ষায় এ সব চেনা ছবি ঘাটালে। ভারী বৃষ্টি মানেই বানভাসি হবে এলাকা, এটাই যেন দস্তুর। শুক্রবারের পরে সেই ঘাটালের বাসিন্দারাই থরহরিকম্প। কারণ, এ বন্যা তাঁদেরও অচেনা। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে বায়ুসেনার হেলিকপ্টার নামিয়েও উদ্ধার করা যাচ্ছে না জলবন্দিদের।
শেষ কবে উদ্ধারকাজে ঘাটালে হেলিকপ্টার নেমেছিল তা মনে করতে পারছেন না কেউ। এ বছর নামল। প্রতাপপুরে শিলাবতীর বাঁধ ভাঙে বুধবার রাতে। তখন থেকেই পানচাঁদা গ্রামের একটি অংশে কয়েকটি বাড়ির ছাদে আটকে রয়েছেন জনা ষাটেক মানুষ। বিদ্যুৎ নেই। প্রবল স্রোতে তাঁদের কাছে পৌঁছনো যাচ্ছে না। স্পিডবোট নামিয়েও জলবন্দিদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। ফলে, তাঁরা কী খাচ্ছেন, কী ভাবেই বা আছেন, জানা যাচ্ছে না কিছুই।
শেষে এ দিন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশের তরফে কলকাতা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। এর পর রাজ্য প্রশাসনের পক্ষে থেকে বায়ুসেনার সাহায্য চাওয়া হয়। ব্যারাকপুর থেকে বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ পৌঁছয় একটি কপ্টার। আকাশে চক্কর কাটতে কাটতে কোন কোন বাড়িতে জলবন্দিরা রয়েছেন, তার খোঁজ শুরু হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কাউকেই উদ্ধার করা যায়নি।
বায়ুসেনার তরফে দাবি করা হয়েছে, কপ্টার থেকে নামানো দড়ির মইয়ে উঠতে সাহস করেননি অনেকে। অনেকে আবার বাড়ি ছেড়ে আসতে চাননি। জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা বলেন, ‘‘আজ, শনিবার ফের উদ্ধারকাজ চালানো হবে।’’ জল নামলে প্রয়োজনে সেনার সাহায্য নিয়ে বাঁধ মেরামতি করা হবে বলেও জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর।
আরও পড়ুন: শেষ লগ্নে নাটক, বাতিল কি বিকাশ
এ দিন নবান্ন ছেড়ে যাওয়ার সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘১৯৭৮ সালের পরে এত বেশি জল দেখছি। সাঙ্ঘাতিক স্রোত। স্পিডবোট নিয়েও পৌঁছনো যাচ্ছে না। তাই হেলিকপ্টার পাঠাতে হয়েছে।’’
এ দিন ঘাটালে বন্যা পরিদর্শনে এসেছিলেন রাজ্যের সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় এবং জলসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র। রাস্তায় হাঁটুজল। তাই ট্রাক্টরে চেপেই দাসপুরে পৌঁছন মন্ত্রীরা। সেখানে রাজীবও বলেন, ‘‘অবস্থা ১৯৭৮ সালের থেকেও খারাপ। পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হয়েছে।”
ভারী বৃষ্টিতে সপ্তাহখানেক আগে থেকেই ঘাটাল মহকুমার একের পর এক এলাকা জলমগ্ন হতে শুরু করে। পরিস্থিতি সবথেকে খারাপ হয় গত বুধবার রাতে। ওই রাতে প্রতাপপুরের কাছে শিলাবতীর বাঁধ ভেঙে যায়। হু হু করে জল ঢুকতে শুরু করে। ভাসে গোটা ঘাটাল শহর। পুরসভার ১৬টি ওয়ার্ডের মধ্যে যে চারটি তুলনায় উঁচু, গত কয়েক বছরে ভারী বৃষ্টিতেও যেখানে জল দাঁড়ায়নি, সেই সব এলাকা জলের তলায় চলে যায়।
পাশাপাশি, শহরের আশপাশের ৪১টি পঞ্চায়েত এলাকা পুরোপুরি জলমগ্ন হয়ে পড়ে। গ্রামে গ্রামে খোলা হয় ত্রাণ শিবির। গোটা ঘাটাল মহকুমায় এই মুহূর্তে ত্রাণ শিবিরের সংখ্যা ৪৭টি। সেখানে সব মিলিয়ে ঠাঁই নিয়েছেন ৫০৮০ জন দুর্গত।
শুক্রবারও ঘাটালের এই বিপর্যস্ত দশা কাটেনি। মহকুমা হাসপাতাল, স্কুল, কলেজ, বাজার, পুরসভা, থানা— সর্বত্রই থইথই দশা। সাব-স্টেশন ডুবে থাকায় বিদ্যুৎ সংযোগও পুরোপুরি ফেরেনি। দাসপুরের সাব-স্টেশন থেকে বিদ্যুৎ এনে ঘাটাল শহরের একাংশে পরিষেবা সচল রাখার চেষ্টা হচ্ছে। তবে রাত পর্যন্ত নতুন করে বানভাসি এলাকায় মৃত্যুর কোনও খবর নেই। সব মিলিয়ে ঘাটালের দুর্গতরাই এখন রাজ্য প্রশাসনের দুর্ভাবনার কেন্দ্রে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy