Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
দেশদ্রোহের মামলা রুজু

ফৌজের ঘরে চরের বাসা বুনছিল আখতার

সেনাবাহিনীর মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকবে চরের দল। আর তাদের হাত দিয়ে শত্রুর কাছে নিয়মিত পাচার হয়ে যাবে দেশের প্রতিরক্ষা-নিরাপত্তার হাল-হকিকত। লালবাজার-সূত্রের দাবি, কলকাতায় বসে এই বন্দোবস্তই পাকাপোক্ত করার চেষ্টায় ছিল আখতার খান।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০১৫ ০৪:১৯
Share: Save:

সেনাবাহিনীর মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকবে চরের দল। আর তাদের হাত দিয়ে শত্রুর কাছে নিয়মিত পাচার হয়ে যাবে দেশের প্রতিরক্ষা-নিরাপত্তার হাল-হকিকত।

লালবাজার-সূত্রের দাবি, কলকাতায় বসে এই বন্দোবস্তই পাকাপোক্ত করার চেষ্টায় ছিল আখতার খান, পাকিস্তানি এজেন্ট সন্দেহে শনিবার যাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কলুটোলায় প্রায় পৌনে দু’লক্ষ ভারতীয় টাকার জাল নোট-সহ আখতারকে জালে ফেলার পরে গোয়েন্দারা তাকে দফায় দফায় জেরা করছেন। রবিবার ব্যাঙ্কশাল কোর্টে আখতারের ১৪ দিন পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ হয়েছে। তার বিরুদ্ধে দেশদ্রোহের মামলা রুজু করেছে পুলি‌শ।

তদন্তকারীদের দাবি, ভারতীয় সেনার ইস্টার্ন ও নর্থ ইস্টার্ন কমান্ডের বেশ কিছু গোপন নথি ইতিমধ্যে পাকিস্তানে পাচারও করে ফেলেছে আখতার। ফৌজের অন্দরে ‘নিজের লোকজন’ না-থাকলে যেগুলো পাওয়া কার্যত অসম্ভব বলে গোয়েন্দারা মনে করছেন। ‘‘শুধু সেনা ছাউনি বা ঘাঁটির ছবি তুলে পাঠালে অন্য কথা ছিল। কিন্তু ছবির পাশাপাশি ইস্টার্ন ও নর্থ ইস্টার্ন কমান্ডের এমন কিছু তথ্য আখতার পাঠিয়েছে, যেগুলো সাধারণ লোকের হাতে আসার কথা নয়।’’— বলছেন কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)-এর এক অফিসার।

এমতাবস্থায় গোয়েন্দাদের ধারণা, ফৌজেরই কেউ কেউ আখতারকে এ সব নথি সরবরাহ করেছে। এক গোয়েন্দা-কর্তার দাবি, ‘‘আখতার সেনাবাহিনীর কিছু লোককে মোটা টাকা দিয়ে নিয়োগ করেছিল। তারাই ওর হাতে কাগজপত্র তুলে দিত। ওদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি।’’

এবং এ কাজে সেনা-গোয়েন্দারাও কলকাতা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। কিন্তু জাতীয় প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত গোপনীয় নথিপত্র পাচার হতো কী ভাবে?

গোয়েন্দা-সূত্রের ইঙ্গিত, ই-মেল মারফত সেগুলো পাকিস্তানে। পাঠানো হয়েছে। লালবাজারের খবর: আখতার তার ই-মেল অ্যাকাউন্ট থেকে পাঠানো প্রচুর মেল মুছে ফেলেছে। সেগুলো ফিরিয়ে আনার (রিট্রিভ) চেষ্টা হচ্ছে। আখতার এত টাকা পেত কোথায়?

শনিবার কলুটোলার অভিযানে এসটিএফের সঙ্গে সামিল হয়েছিল যারা, সেই কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এসআইবি’র দাবি: পাকিস্তান থেকে নিয়মিত মোটা টাকা আসত আখতারের কাছে। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের বক্তব্য, আখতারের কাছে পাকিস্তানের হাবিব ব্যাঙ্কের (এইচবিএল) একটা ডেবিট কার্ড মিলেছে, যার মাধ্যমে দুনিয়ার যে কোনও প্রান্তে এটিএম থেকে নগদ তোলা যায়। ‘‘আখতারের নিয়োগকর্তারা ওই ব্যাঙ্কের একটা বিশেষ অ্যাকাউন্টে টাকা ফেলে দিত। কলকাতায় এটিএম থেকে ও টাকা তুলে নিত দরকারমতো।’’— মন্তব্য এক এসআইবি-আধিকারিকের।

উল্লেখ্য, এইচবিএলের সদর অফিস পাকিস্তানের করাচিতে। আর আখতারের ‘নিয়োগকর্তা’ হিসেবে গোয়েন্দাদের আঙুল পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআইয়ের দিকে। তদন্তকারীদের দাবি: আখতার জেরার মুখে জানিয়েছে, তার জন্ম ভারতে। শৈশব কেটেছে বাংলা-বিহারে। ২০১১-য় আইএসআই এজেন্টের দায়িত্ব নিয়ে নেপাল সীমান্ত টপকে পশ্চিমবঙ্গে ঢোকার আগে কুড়ি বছর আখতারের ডেরা ছিল পাকিস্তানে। সেখানে তার চরবৃত্তির পুঙ্খানুপুঙ্খ তালিম হয়েছে।

ঘটনা হল, এ হেন ‘ষড়যন্ত্রী’র গ্রেফতারি ঘিরে কলকাতা পুলিশ এবং এসআইবি-র কিঞ্চিৎ বিতণ্ডা দানা বেঁধেছে। কী রকম?

এসটিএফের বক্তব্য: আখতারের হদিস মিললেও তাকে তড়িঘড়ি গ্রেফতার না-করে গত সাত দিন ধরে নজরবন্দি করে রাখা হয়েছিল। যাতে ওর সূত্র ধরে আরও কিছু চরের সন্ধান পাওয়া যায়। কিন্তু এসআইবি খবরটা ফাঁস করে দেওয়ায় সব পরিকল্পনা ভেস্তে গিয়েছে, আখতারকে শেষমেশ ‘গ্রেফতার’ দেখাতে বাধ্য হয়েছে এসটিএফ। অন্য দিকে এসআইবি’র যুক্তি: আখতারের দিদি জাহানারা গত মঙ্গলবার তিলজলা থানায় নিখোঁজ-ডায়েরি করে জানিয়েছিলেন, ৭ নভেম্বর (যে দিন আখতারকে আটক করা হয়েছিল) থেকে ভাইয়ের খোঁজ মিলছে না। সাত দিন ধরে এক জনকে গ্রেফতার না-করে স্রেফ এ ভাবে আটকে রাখাটা ঝুঁকির ব্যাপার হয়ে যেত বলে মনে করছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা।

বস্তুত এ দিন ব্যাঙ্কশাল কোর্টে আখতারের কৌঁসুলি ফজলে আহমেদ খানও অভিযোগ করেন, পুলিশ তাঁর মক্কেলকে সাত দিন ধরে বেআইনি ভাবে আটকে রেখেছিল। বাড়ির লোককে কিছু জানানো হয়নি। একেবারে শনিবার রাতে গ্রেফতারির সংবাদ দেওয়া হয়েছে। আখতারকে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে অভিহিত করে ফজলের দাবি, পুলিশ জাল নোট উদ্ধারের কথা বললেও প্রমাণ করতে পারেনি যে, আখতার তা অন্যত্র পাচার করেছে। পাল্টা সওয়ালে সরকারি কৌঁসুলি অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায় বলেন, আখতারের বিরুদ্ধে প্রাথমিক ভাবে বিস্তর প্রমাণ মিলেছে।

প্রসঙ্গত, নিখোঁজ ডায়েরি অনুযায়ী আখতার খানের নিবাস তপসিয়া রোডে। অথচ আধার কার্ডে ঠিকানা হিসেবে কলিন স্ট্রিটের উল্লেখ রয়েছে বলে পুলিশ-সূত্রের খবর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Akhtar Khan sedition
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE