Advertisement
১১ মে ২০২৪

কিসান মান্ডিতেও দুর্নীতি, মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি প্রধানের

চাষিরা যাতে ফলনের ন্যায্য দাম পান, ফড়েরা যাতে লাভের গুড় খেয়ে যেতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে প্রতি ব্লকে কিসান মান্ডি গড়ে তোলার কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সরাসরি তাঁকেই চিঠি দিয়ে শাসকদলের এক পঞ্চায়েত প্রধান অভিযোগ করলেন, এখন সেই কিসান মান্ডিতেই ধান কেনা নিয়ে দুর্নীতি চলছে। বুধবার চাষিরাও এই নিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন।

কেদারনাথ ভট্টাচার্য
কালনা শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০১৫ ০৪:২৬
Share: Save:

চাষিরা যাতে ফলনের ন্যায্য দাম পান, ফড়েরা যাতে লাভের গুড় খেয়ে যেতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে প্রতি ব্লকে কিসান মান্ডি গড়ে তোলার কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সরাসরি তাঁকেই চিঠি দিয়ে শাসকদলের এক পঞ্চায়েত প্রধান অভিযোগ করলেন, এখন সেই কিসান মান্ডিতেই ধান কেনা নিয়ে দুর্নীতি চলছে। বুধবার চাষিরাও এই নিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন।

বর্ধমানের কালনা ১ ব্লকে বেগপুর পঞ্চায়েতের প্রধান শিউলি মল্লিক গত সোমবার নবান্নে ই-মেল করে জানান, তাঁর এলাকার সিংহ ভাগ মানুষই কৃষিজীবী। অথচ এলাকায় সদ্য গড়ে ওঠা কৃষক বাজারে সহায়ক মূল্যে
ধান কেনা নিয়ে যথেষ্ট প্রচার তো নেই-ই, উল্টে দুর্নীতি হচ্ছে। খোলা বাজারে এক বস্তা (৬০ কেজি) বোরো ধানের দাম ৪৫০ টাকায় নেমেছে। সরকারি দর ৮১৬ টাকা। অথচ বহু চাষিই সেই সুবিধা নিতে পারছেন না। বরং ‘কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কিছু দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মচারীদের সাহায্যে অসাধু কারবার চালাচ্ছে’ বলে চিঠিতে অভিযোগ করেছেন প্রধান। জেলাশাসক, কালনা মহকুমাশাসক এবং ব্লক প্রশাসনের আধিকারিকদেরও চিঠি দিয়েছেন।

এই অভিযোগ নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশাসনিক মহলে তোলপাড় শুরু হয়েছে। স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক তথা মন্ত্রী স্বপন দেবনাথের কাছেও বিষয়টি পৌঁছেছে। এ দিন কালনা ১ ব্লক অফিসে একটি বৈঠক ডাকেন বিডিও সব্যসাচী রায়চৌধুরী। মহকুমা খাদ্য নিয়ামক, কালনা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, কিসান মান্ডির মনিটরিং অফিসার ও বিভিন্ন পঞ্চায়েতের প্রধানেরা সেখানে হাজির ছিলেন। সভা চলাকালীনই বেগপুর, কাকুরিয়া, নান্দাই এবং সিমলন আটঘরিয়া পঞ্চায়েত এলাকার শ’খানেক চাষি ব্লক অফিসের সামনে এসে বিক্ষোভ দেখান। তাঁদের অভিযোগ, কৃষক বাজারে ধান বিক্রি করতে গেলে বলা হচ্ছে, সে দিনের মতো টোকেন শেষ। বারবার ঘুরেও তাঁরা ধান বিক্রি করতে পারেননি। বাধ্য হয়ে অনেক কম দামে ফড়েদের হাতে ধান তুলে দিচ্ছেন। তারা কিসান মান্ডিতে সেই ধান বিক্রি করে সরকারি টাকা ঘরে তুলছে।

নিয়ম অনুযায়ী, জমির দলিল-পর্চা বা কিসান ক্রেডিট কার্ড দেখিয়ে ‘চাষি’ হিসেবে প্রমাণ দিয়ে এক জন ৩০ বস্তা পর্যন্ত ধান বেচতে পারেন। রোজ কমবেশি ৩০ জনের কাছ থেকে ধান কেনার কথা মান্ডির। তার জন্য ‘আগে এলে আগে পাবেন’ ভিত্তিতে টোকেন দেওয়া হয়। কিন্তু কর্মীদের একাংশের সঙ্গে যো‌গসাজসে কিছু ফড়ে ভিতর থেকে সেই টোকেন আগেই বের করে নিচ্ছে এবং তার ফলে আসল চাষিরা মান্ডিতে গিয়েও টোকেন পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ।

কিন্তু ফড়েরা ‘চাষি’ বলে পরিচয় দিচ্ছে কী ভাবে? বিক্ষোভে যোগ দেওয়া অমিত পাল, বাবলু ঘোষ, শ্যামল বর্মণ, বিনয় ঘোষদের অভিযোগ, অসাধু ব্যবসায়ীরা অসৎ উপায়ে বেশ কিছু কিসান ক্রেডিট কার্ড, দলিল-পর্চা জোগাড় করেছে। সেগুলি দেখিয়েই তারা এক সঙ্গে প্রচুর ধান বিক্রি করে দিচ্ছে। এমনকি একই কিসান ক্রেডিট কার্ড দেখিয়ে বারবার ধান বিক্রির অভিযোগও রয়েছে।

কালনা ১ ব্লকের কিসান মান্ডির পারচেজিং অফিসার অলোক বল্লভ অবশ্য দুর্নীতির অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী টোকেন বিলি করা হয় জানিয়ে তাঁর দাবি, ‘‘কিছু দিন আগে এক যুবক ছ’টি কার্ড নিয়ে এসে ধান বিক্রি করতে চাইলে তাকে তো বাধা দেওয়া হয়েছে!’’

একই কার্ড দেখিয়ে একাধিক বার ধান বিক্রির প্রমাণ যে মিলেছিল, তা অবশ্য তিনি মেনে নিয়েছেন। তবে তাঁর বক্তব্য, ‘‘তার পর থেকেই কার্ডের পিছনে ধান বিক্রির পরে স্ট্যাম্প মেরে দেওয়া চালু হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE