Advertisement
E-Paper

শিল্প সম্মেলনের প্রচারে টাটার বক্তব্যই হাতিয়ার

একদা রতন টাটার যে মন্তব্যের জেরে তাঁর মতিভ্রম হয়েছে বলে কটাক্ষ করেছিলেন শিল্পমন্ত্রী অমিত মিত্র, শিল্প সম্মেলনে বিনিয়োগকারী টানতে টাটার সেই বক্তব্যকেই কৌশলে ব্যবহার করছে রাজ্য সরকার। রতন টাটা যে-শহরের বাসিন্দা, সেই মুম্বইয়ে বিশ্ব বঙ্গ সম্মেলনের সাফল্যের জন্য ‘রোড-শো’ করতে গিয়েছিলেন হিডকো চেয়ারম্যান দেবাশিস সেন ও রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর কৃষ্ণ গুপ্ত।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:১৫

একদা রতন টাটার যে মন্তব্যের জেরে তাঁর মতিভ্রম হয়েছে বলে কটাক্ষ করেছিলেন শিল্পমন্ত্রী অমিত মিত্র, শিল্প সম্মেলনে বিনিয়োগকারী টানতে টাটার সেই বক্তব্যকেই কৌশলে ব্যবহার করছে রাজ্য সরকার।

রতন টাটা যে-শহরের বাসিন্দা, সেই মুম্বইয়ে বিশ্ব বঙ্গ সম্মেলনের সাফল্যের জন্য ‘রোড-শো’ করতে গিয়েছিলেন হিডকো চেয়ারম্যান দেবাশিস সেন ও রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর কৃষ্ণ গুপ্ত। বণিকসভা সিআইআই-এর সহযোগিতায় ‘বেঙ্গল লিডস ২০১৫’ নামের এই সম্মেলনে কর্পোরেট মহলের রথী-মহারথী টানতে প্রথম রোড-শো মুম্বইয়ে আয়োজন করেছিল রাজ্য সরকার। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, মঙ্গলবার এই প্রচার অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তথ্যপ্রযুক্তি, ব্যাঙ্কিং-সহ বিভিন্ন শিল্পের ৫০ জন প্রতিনিধি।

এ দিনের অনুষ্ঠানে রাজারহাট উপনগরীকে বিনিয়োগকারীদের সামনে তুলে ধরেন হিডকো কর্তা দেবাশিস সেন। প্রসঙ্গত, এই সম্মেলনের সভাস্থল হিসেবে রাজ্য সরকার রাজারহাটের ‘ইকো ট্যুরিজম পার্ক’-কে বেছে নিয়েছে। বিমানবন্দরের কাছে এই উপনগরীতে গড়ে উঠছে ‘ফিনান্সিয়াল হাব’, যেখানে বিভিন্ন ব্যাঙ্ক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান জায়গা নিয়েছে বলে মুম্বইয়ের কর্পোরেট মহলের সামনে দাবি জানান দেবাশিসবাবু। রীতিমতো পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন করে রাজারহাটের উন্নয়নের মুখ তুলে ধরেন তিনি। এর ১৩ নম্বর স্লাইডে রয়েছে রতন টাটার মন্তব্য, তবে তা ব্যবহার করা হয়েছে আংশিক ভাবে, যাতে মনে হয় টাটা রাজ্যের প্রশংসা করেছেন। একটি ইংরেজি দৈনিকের কাটিং ওই স্লাইডে জায়গা করে নিয়েছে। সেখানে রয়েছে রতন টাটার বক্তব্যটি। গত ৬ অগস্ট বণিকসভার এক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসার সময়ে তাঁর মন্তব্য এখানে রয়েছে: “বিমানবন্দর থেকে শহরে ঢোকার পথে বিভিন্ন নির্মীয়মাণ আবাসনের পরিপ্রেক্ষিতে রাজারহাটের পরিবর্তন অবিশ্বাস্য।”

বস্তুত টাটা তাঁর সম্পূর্ণ বক্তব্যে ওই দিন জানিয়েছিলেন বিমানবন্দর থেকে শহরে ঢোকার পথে রাজারহাটে অনেক নির্মাণ চোখে পড়ছে, যা অবিশ্বাস্য। তবে শিল্পায়ন তেমন নজরে পড়েনি। টাটাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, রাজ্য ছেড়ে যাওয়ার পর থেকে এখন পশ্চিমবঙ্গে তাঁর কি কিছু পরিবর্তন চোখে পড়ছে? এ প্রশ্নের জবাবেই টাটার ওই বহুচর্চিত বক্তব্য। তিনি বলেছিলেন, সেই কঠিন সময়ের পরে সে ভাবে তিনি আর আসেননি এ শহরে। তবে রাজারহাট দিয়ে আসার সময়ে তিনি দেখেছেন কিছু বাণিজ্যিক ও আবাসন প্রকল্প। কিন্তু কোনও শিল্প তাঁর চোখে পড়েনি। তাঁর কথায়, “একটি গ্রামীণ এলাকার উন্নয়নের মতোই দেখাচ্ছে রাজারহাটের ছবি।”

তাঁর এই মন্তব্য ঘিরে রাজ্য সরকারের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন তিনি। অর্থ ও শিল্পমন্ত্রী অমিত মিত্রের কটাক্ষ ছিল, রতন টাটার মতিভ্রম হয়েছে। তাঁর এই বক্তব্য, সার্বিক ভাবেই দেশ জুড়ে আলোড়ন তৈরি করেছিল।

টাটার মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে দাবি করে ফিরহাদ হাকিমও তখন বলেছিলেন, “কিছু লোক আছেন যাঁরা ‘কমিটেড’, বাংলার ভাল চান না। রাগ পুষে রাখেন। তাঁদের কথার উত্তর আমি দিতে চাই না। যে অন্ধ সে-ও রাজারহাটে গেলে বুঝবে কতটা উন্নয়ন হয়েছে। টাটার সার্টিফিকেট-এর দরকার নেই। রতন টাটা যেন দেবপুত্র। মাঝে মাঝে এসে দেববাণী দিয়ে চলে যাবেন। তার চেয়ে সামনে এসে রাজনীতি করুন। হয়তো ওঁর মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে। চেয়ারম্যানশিপও চলে গিয়েছে।” প্রসঙ্গত, ৭৫ বছর বয়স হয়ে যাওয়ার পরে রতন টাটা চেয়ারম্যান পদ ছেড়ে দিলেও টাটা গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান এমেরিটাস হিসেবে রয়েছেন তিনি।

অমিত মিত্র ও ববি হাকিমের পাল্টা সমালোচনা নিয়ে গোটা দেশে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল। ট্যুইটার-সহ বিভিন্ন সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে ক্ষোভে ফেটে পড়েন সাধারণ মানুষ। ট্যুইটারে অনেকেই কার্যত অমিতবাবুর ওই বক্তব্যকে কুরুচিকর এবং অশালীন বলেও ব্যাখ্যা করেছিলেন। গোটা বিষয়টিতে এ রাজ্যের ভাবমূর্তি যে ফের ধাক্কা খেল, তা জানাতেও ভোলেননি সাধারণ মানুষ ও শিল্পমহল।

মুম্বইয়ের রোড-শোয়ে রতন টাটার মন্তব্য রাজ্যের বিপণনের খাতিরে ব্যবহারের মধ্যে নতুন তাৎপর্য দেখছে শিল্পমহল। সিঙ্গুর নিয়ে নভেম্বরেই রায় দিতে পারে সুপ্রিম কোর্ট। তার আগে সোমবার টাটা গোষ্ঠীর এ রাজ্যে ব্যবসা করা সংস্থাগুলির কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জানতে চাইলেন, এখানে কাজ করতে তাঁদের কোনও অসুবিধা হচ্ছে কি না। অনেকের মতে, যাদের সঙ্গে তাঁর বিরোধ সুবিদিত, সেই টাটা গোষ্ঠীকে আলোচনার জন্য ডেকে এক ঢিলে দুই পাখি মারতে চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রথমত, সিঙ্গুর নিয়ে রায়ের আগে টাটাদের দিকে কিছুটা সন্ধির হাত বাড়িয়ে রাখলেন মমতা। দ্বিতীয়ত, পা ফেলতে চাইলেন নিজের এবং দলের শিল্পবিরোধী ভাবমূর্তি মোছার পথে। সেই লক্ষ্যেই আর এক ধাপ এগিয়ে রতন টাটার মন্তব্যকেই হাতিয়ার করে বিনিয়োগকারীদের আস্থা অর্জন করতে চাইছে রাজ্য।

industrial fair west bengal tata amit mitra mamata bandyopadhyay
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy