Advertisement
E-Paper

কোর্টে বুঝে নিতে হল মায়ের অধিকার! স্বস্তিতেও আক্ষেপ বৃদ্ধার

মহকুমাশাসকের অফিসের দোতলার সিঁড়ি ভাঙতে বেশ কষ্ট হচ্ছিল তাঁর। বয়স তো কম হল না! দ্রুত হাঁফ ধরে যায়। বুধবার বিকেলে ফের সিঁড়ি ভেঙে যখন নীচে নামলেন ৭০ বছরের সাদেকা বিবি, তখন তাঁর চোখেমুখে স্বস্তি। সঙ্গে আফসোসও। স্বস্তি, জীবনে যে ক’টা দিন বেঁচে থাকবেন, অন্তত সামান্য অর্থের জন্য তাঁকে অন্যের কাছে হাত পাততে হবে না।

কেদারনাথ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:১৮
সাদেকা বিবি। নিজস্ব চিত্র।

সাদেকা বিবি। নিজস্ব চিত্র।

মহকুমাশাসকের অফিসের দোতলার সিঁড়ি ভাঙতে বেশ কষ্ট হচ্ছিল তাঁর। বয়স তো কম হল না! দ্রুত হাঁফ ধরে যায়। বুধবার বিকেলে ফের সিঁড়ি ভেঙে যখন নীচে নামলেন ৭০ বছরের সাদেকা বিবি, তখন তাঁর চোখেমুখে স্বস্তি। সঙ্গে আফসোসও। স্বস্তি, জীবনে যে ক’টা দিন বেঁচে থাকবেন, অন্তত সামান্য অর্থের জন্য তাঁকে অন্যের কাছে হাত পাততে হবে না। আফসোসের কারণ, এই বয়সেও এসডিএম আদালতে এসে বড় ছেলের বিরুদ্ধে মামলা করে তাঁকে বুঝে নিতে হল নিজের প্রাপ্য।

মন্তেশরের ময়নামপুর গ্রামের বাসিন্দা সাদেকা বিবি অবশ্য এই ভেবে সান্ত্বনা খুঁজে নিতে পারেন, তিনি একা নন, এ পোড়া দেশে তাঁর মতো ‘দুর্ভাগা’ অসংখ্য রয়েছেন। কোথাও বাবা-মাকে নিজেদের বাড়িতেই ছেলে-বৌমার মর্জিমাফিক থাকতে হয়, কোথাও বৃদ্ধা বিধবাকে তাঁর স্বামীরই তৈরি করা ভিটে থেকে উচ্ছেদ করে দেন সন্তানেরা। ক’দিন আগেই কলকাতার বাগুইআটি এলাকার এমন একটি ঘটনায় মাকে বাড়ি থেকে উৎখাত করে দেওয়ায় অভিযুক্ত পুত্র-পুত্রবধূকে কড়া নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট—মায়ের বাড়িতে থাকতে হলে মাথা নিচু করে, শিরদাঁড়া ঝুঁকিয়ে থাকতে হবে।

এ দিন কালনার এসডিএম আদালতও সাদেকার বড় ছেলেকে মায়ের প্রাপ্য জমি এবং মাসিক দেড় হাজার টাকা করে খোরপোশ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। আপাতত একটা হিল্লে হয়েছে অসহায় বৃদ্ধার।

সাদেকার পারিবারিক অবস্থা কিন্তু খারাপ নয়। চাষের যা জমি রয়েছে, তাতে তাঁর এবং ছেলেমেয়েদের ভাল ভাবে সংসার চলে যাওয়ার কথা। সাদেকা জানালেন, বছর তিরিশেক আগে স্বামী আবদুল সামাদ মারা যাওয়ার সময় রেখে গিয়েছিলেন প্রায় ৩৫ বিঘা জমি। বড় ছেলে আবু বক্করের কাছে থাকতে প্রথমে কোনও অসুবিধা হয়নি। বৃদ্ধার অভিযোগ, বছর চারেক আগে ছেলে-বৌমা ঝগড়া করে তাঁর সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দেয়। বাধ্য হয়ে তাঁকে আশ্রয় নিতে হয় নিজের বাড়িতেই বিবাহিত মেয়ের কাছে। সাদেকার কথায়, ‘‘মেয়ের কাছে থাকলেও প্রতি মুহূর্তে ছোটখাটো বিষয়েও ওর কাছে হাত পাততে ভাল লাগত না। সামান্য খাবার, ওষুধ বা লৌকিকতার জন্যও তো কিছু টাকা হাতে দরকার! সেটুকুও আমার কাছে নেই।’’ তাঁর অভিযোগ, পারিবারিক সম্পত্তি থেকে তাঁর যা প্রাপ্য, তা দিয়ে দিতে বারবার বড় ছেলেকে বললেও সে কথা তিনি কানে তোলেননি। উল্টে মায়ের প্রতি দুর্ব্যবহার করেছেন।

আরও পড়ুন:

লড়বেন পথেই, বার্তা অধীরের

বাধ্য হয়েই নিজের অধিকার বুঝে নিতে ২০১৫ সালে ২১ সেপ্টেম্বর অশক্ত শরীরেই বাড়ি থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে কালনা মহকুমাশাসকের আদালতে এসে ছেলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন সাদেকা বিবি। ওই আদালতের বিচারক তথা মহকুমাশাসক ২০১৬ সালে ৭ জুলাই বৃদ্ধার বড় ছেলেকে হাজির করার জন্য মন্তেশ্বর থানার ওসিকে নির্দেশ দেন। পুলিশ সেই সময় হাজিরার জন্য কিছুটা সময় চেয়ে নেয়। এর পরে এসডিএম আদালত মন্তেশ্বরের বিডিওকে বিষয়টি নিয়ে একটি রিপোর্ট দিতে বলে। সম্প্রতি সে রিপোর্ট জমা পড়েছে। সেই রিপোর্টে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, সাদেকাকে তাঁর প্রাপ্য সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করার অভিযোগ ঠিক। তার পরেই এ দিন বৃদ্ধা ও তাঁর বড় ছেলেকে ডেকে পাঠায় আদালত।

বৃদ্ধার আইনজীবী আহমেদ শেখ জানান, তাঁর মক্কেলের পাওয়ার কথা ছিল পাঁচ বিঘা জমি। তবে ছেলে তাঁকে চার বিঘা জমি দিতে চেয়েছেন। তাতেই তিনি রাজি হয়ে যান। পাশাপাশি মাসে দেড় হাজার টাকা করে মাকে খোরপোশ দেওয়ার নির্দেশও আবু বক্করকে দিয়েছেন বিচারক। দু’পক্ষের মধ্যে এ ব্যাপারে একটি লিখিত চুক্তি হয়েছে। ওই আইনজীবীর আরও দাবি, মায়ের সঙ্গে দুর্ব্যবহার এবং নির্দেশমতো খোরপোশ না দিলে ছেলেকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেওয়া হবে বলেও আদালত জানিয়েছে।

এ দিন বাড়ি ফেরার পথে বৃদ্ধা বলছিলেন, ‘‘এ বার অন্তত কারও কাছে টাকার জন্য হাত পাততে হবে না। আফসোস একটাই, যে ছেলেকে কষ্ট করে মানুষ করলাম, তার জন্যই আদালতে এসে বুঝে নিতে হল মায়ের অধিকার।’’ ছেলে অবশ্য অভিযোগ মানেননি। তাঁর দাবি, সাদেকাই তাঁর কাছে থাকতে চাননি। বছরে ৭০ বস্তা করে ধান দিতে চাইলেও নিতে চাননি।

Mother Son Court Case
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy