Advertisement
২২ মে ২০২৪

সরলো এয়ার ইন্ডিয়া, বন্ধ অন্ডাল বিমানবন্দর

ছ’মাসও পুরো হয়নি। এর মধ্যেই দুর্গাপুরের অন্ডাল বিমানবন্দর থেকে ভর্তুকির উড়ান বন্ধ করে দিল এয়ার ইন্ডিয়া। এর ফলে আপাতত বন্ধ হয়ে গেল দেশের প্রথম এই বেসরকারি বিমানবন্দরটি।বিমানবন্দর চালুর গোড়ার দিকে একটি ছোট সংস্থা ‘স্পিরিট এয়ার’ অন্ডাল থেকে বিমান চালাচ্ছিল। সে’টিও চলছিল ভর্তুকিতে। গত মার্চে তারা পাততাড়ি গুটোনোর পরে শুধু এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানটিই চলছিল।

পরীক্ষামূলক ভাবে প্রথম বিমানটি নামার পরে জলকামান দিয়ে স্বাগত জানানো হয়েছিল অন্ডালে। — ফাইল চিত্র।

পরীক্ষামূলক ভাবে প্রথম বিমানটি নামার পরে জলকামান দিয়ে স্বাগত জানানো হয়েছিল অন্ডালে। — ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা ও দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০১৬ ১০:২৩
Share: Save:

ছ’মাসও পুরো হয়নি। এর মধ্যেই দুর্গাপুরের অন্ডাল বিমানবন্দর থেকে ভর্তুকির উড়ান বন্ধ করে দিল এয়ার ইন্ডিয়া। এর ফলে আপাতত বন্ধ হয়ে গেল দেশের প্রথম এই বেসরকারি বিমানবন্দরটি।

বিমানবন্দর চালুর গোড়ার দিকে একটি ছোট সংস্থা ‘স্পিরিট এয়ার’ অন্ডাল থেকে বিমান চালাচ্ছিল। সে’টিও চলছিল ভর্তুকিতে। গত মার্চে তারা পাততাড়ি গুটোনোর পরে শুধু এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানটিই চলছিল।

বিমান বন্দর সূত্রের খবর, আজ বুধবার এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান অন্ডাল-দিল্লি-অন্ডাল ঘুরে কলকাতায় ফিরবে। তার পর আর ওই রুটে উড়ান চালাবে না এয়ার ইন্ডিয়া। তারা জানিয়েছে, বুধবারের পরেও যাঁরা ওই উড়ানের টিকিট কেটে রেখেছেন, তাঁরা পুরো দাম ফেরত পাবেন।

অন্ডাল নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা কম হয়নি। কিছু দিনের জন্য হেলিকপ্টার চালু হয়েছিল। এ ছাড়াও সুহান অ্যাভিয়েশন, গ্লোবাল এয়ার, এয়ার চার্টার সার্ভিস, ক্লাব-ওয়ান এয়ার, সাথী অ্যাভিয়েশন, পিনাকল-সহ বেশ কিছু ছোট ছোট সংস্থাকে ভর্তুকি জুগিয়ে বিমান চালানোর চেষ্টা হয়েছে। কোনওটাই দিনের আলো দেখেনি।

গত বছর ২১ ডিসেম্বর থেকে সোম, বুধ, শুক্র— সপ্তাহে তিন দিন এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান চালু হয়েছিল মূলত একটি শর্তের ভিত্তিতে। এই বিমান সংস্থা বলেছিল, উড়ান চালানোর লোকসান কর্তৃপক্ষকে পুষিয়ে দিতে হবে। এই শর্তে অনেক শহর থেকেই উড়ান চালায় এয়ার ইন্ডিয়া। সেখানে ভর্তুকি দেয় সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকার। অন্ডালের ক্ষেত্রে ভর্তুকির চুক্তি হয়েছিল অন্ডাল বিমানবন্দরের মালিক বেঙ্গল এরোট্রোপলিস প্রাইভেট লিমিটেড (বিএপিএল)-এর। বিমান সংস্থা সূত্রের খবর, ভর্তুকির কয়েক কোটি টাকা বকেয়া পড়েছে। সেই টাকা না-পেয়ে ভবিষ্যতে এই রুটে লাভের আশা নেই বুঝেই তারা উড়ান তুলে নিচ্ছে।

গত বছর মে মাসে এয়ার ইন্ডিয়ার সঙ্গে চুক্তিটি করে বিএপিএল। ঠিক হয়, সপ্তাহে ছ’দিন কলকাতা-অন্ডাল রুটে ছোট এটিআর বিমান চালাবে এয়ার ইন্ডিয়া। কলকাতা-অন্ডাল ছোট বিমানে গড়ে ১০-১৫ জন যাত্রী পাওয়ায় লোকসান হচ্ছিল। কিন্তু, ভর্তুকির টাকা দিয়ে দিচ্ছিল বিএপিএল।

এর পরে ডিসেম্বরে ঠিক হয়, এয়ার ইন্ডিয়া বড় বিমানই চালাবে। কিন্তু জানিয়ে দেয়, বিমান চালানোর ন্যূনতম খরচ না-পেলে এগোনো হবে না। সেই শর্তে রাজিও হয় বিএপিএল। প্রশ্নটা অবশ্য তখনই উঠেছিল— ছোট বিমানেই যখন যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না, তখন বড় বিমান কী করে লাভজনক হতে পারে? এ প্রশ্নও ওঠে, ভর্তুকি দিয়ে কত দিন বিমান চালানো সম্ভব? বিএপিএল কেনই বা ভর্তুকি দিয়ে উড়ান চালাবে?

এই সব প্রশ্নের জবাবে তখন রাজ্য সরকার এবং বিএপিএল-এর যুক্তি ছিল, এ বার গন্তব্যে দিল্লিকেও জোড়া হচ্ছে। সুতরাং যাত্রীর সমস্যা হবে না।

বাস্তবে তা হয়নি। অভিযোগ, পাওনা ভর্তুকির টাকা পুরোটা দেয়নি বিএপিএল। কেন? এর জবাব মেলেনি সংস্থার কর্তা পার্থ ঘোষের কাছ থেকে। তিনি ফোন ধরেননি। মোবাইলে পাঠানো বার্তারও জবাব দেননি। অন্ডাল থেকে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান তুলে নেওয়া নিয়ে পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘পার্থবাবুর সঙ্গে এয়ার ইন্ডিয়ার টাকা পয়সা নিয়ে গণ্ডগোল হয়েছে বলে শুনেছি। দফতরের সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে বলেছিলাম খোঁজ নিতে। তিনি জানিয়েছেন, সমস্যাটি সাময়িক।’’ শুভেন্দুবাবু জানিয়েছেন, পার্থবাবুকে একটি রিপোর্ট দিতে বলেছেন, যা মুখ্যমন্ত্রীকে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। প্রয়োজনে বিমান মন্ত্রকের সঙ্গেও তিনি কথা বলবেন।

বিমান সংস্থা সূত্রে খবর, বড় বিমানের ‘অপারেটিং কস্ট’ ঘণ্টায় প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ টাকা। কলকাতা থেকে অন্ডাল ঘুরে দিল্লি যাতায়াত করতে প্রায় ৫ ঘণ্টা লাগে। প্রতি বার বিমান চালাতে খরচ প্রায় ১৪ লক্ষ টাকা। সূত্রের খবর, গত ছ’মাসে একটা দিনও টিকিট বিক্রি থেকে জ্বালানির খরচটুকুও ওঠেনি। বিমান সংস্থা সূত্রেই খবর, কলকাতা থেকে অন্ডাল ঘুরে দিল্লি গিয়েছেন দৈনিক গড়ে ৩০ জন। কলকাতা থেকে অন্ডাল গিয়েছেন গড়ে ৫ জন। আর অন্ডাল থেকে দিল্লি গিয়েছেন গড়ে ৫০ জন। হিসেবে দেখা গিয়েছে, গড়ে বিমানে যাত্রী হয়েছে মোট আসনের ৭০ শতাংশেরও কম। এ থেকে এয়ার ইন্ডিয়ার মনে হয়েছে, আগামী দিনেও এর চেয়ে বেশি যাত্রী পাওয়া সম্ভব নয়।

এয়ার ইন্ডিয়ার এক মুখপাত্র জানান, সপ্তাহে তিন দিন অন্ডালে উড়ান চালাতে গিয়ে একটি ১২২ আসনের ‘এয়ারবাস ৩১৯’ বিমান সকাল সাড়ে ৮টা থেকে দুপুর সাড়ে ৩টে পর্যন্ত আটকে রাখতে হয়। অথচ, ওই সময়ে বিমানটিকে অনায়াসে দু’টি লাভজনক রুটে চালানো সম্ভব।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Air India Andal Airport
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE