Advertisement
০৫ মে ২০২৪

অন্ডাল ‘বিকল্প’ হোক, চায় বহু বিমান সংস্থাই

বিপদে-আপদে তো বটেই, অন্য সময়েও অন্ডাল হয়ে উঠতে পারে কলকাতার দোসর ও বিকল্প! এমন একটি সম্ভাবনার কথা শুনিয়েছেন কাজী নজরুল ইসলাম বিমানবন্দর ও বিমানসংস্থাগুলির কর্তারা। বাণিজ্যিক ভাবে লাভজনক হয়ে ওঠার পথে যা অনেকটাই সাহায্য করতে পারে দেশের প্রথম বেসরকারি বিমানবন্দরটিকে।

সুনন্দ ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৫ ০৩:৪১
Share: Save:

বিপদে-আপদে তো বটেই, অন্য সময়েও অন্ডাল হয়ে উঠতে পারে কলকাতার দোসর ও বিকল্প! এমন একটি সম্ভাবনার কথা শুনিয়েছেন কাজী নজরুল ইসলাম বিমানবন্দর ও বিমানসংস্থাগুলির কর্তারা। বাণিজ্যিক ভাবে লাভজনক হয়ে ওঠার পথে যা অনেকটাই সাহায্য করতে পারে দেশের প্রথম বেসরকারি বিমানবন্দরটিকে।

দোসর বলতে ঠিক কী বোঝাচ্ছেন ওই বিমানকর্তারা?

তাঁদের বক্তব্য, বড় বিমানবন্দর থেকে নির্দিষ্ট গন্তব্যে রওনা দেওয়ার আগে প্রতিটি বিমানকেই একটি বিকল্প তথা ‘পরিবর্ত’ বিমানবন্দর বেছে রাখতে হয়। এটি বাধ্যতামূলক। শুধু ভারত নয়, বিশ্বের সব দেশেই এই নিয়ম মেনে চলা হয়। বিশেষজ্ঞদের ব্যাখ্যা, ‘‘খারাপ আবহাওয়া বা অন্য কোনও জরুরি কারণে গন্তব্যে না নামতে পারলে সংশ্লিষ্ট বিমানটিকে ওই পরিবর্ত বিমানবন্দরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।’’ যেমন, দিল্লি থেকে কোনও বিমান কলকাতায় আসার আগে তাকে পরিবর্ত বিমানবন্দর হিসেবে বেছে নিতে হয় রাঁচি, পটনা বা ভুবনেশ্বরকে। কলকাতার ক্ষেত্রে এ বার অন্ডালকে সেই পরিবর্ত বিমানবন্দর হিসেবে ব্যবহার করার ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে। এটা হলে অন্ডালের শুধু নয়, লাভ হবে বিমানসংস্থাগুলিরও। যে কারণে অন্ডাল বিমানবন্দরকে কলকাতার ‘পরিবর্ত বিমানবন্দর’ হিসেবে ব্যবহার করতে ইতিমধ্যেই আগ্রহ দেখিয়েছে দেশের বেশির ভাগ বিমানসংস্থা।

কেন এই আগ্রহ? বিমানকর্তারা জানাচ্ছেন, কলকাতা গন্তব্য হলে রাঁচি, পটনা বা ভুবনেশ্বরকে পরিবর্ত হিসেব ব্যবহার করা যায় শুধুমাত্র দিনের বেলা। বিমানবন্দরগুলির এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (এটিসি) রাত ১০টার বেশি চালু থাকে না। তাই বেশি রাতে আসা বিমান কলকাতায় নামতে না পারলে বিমানকে পরিবর্ত হিসেবে বেছে নিতে হয় লখনউ, নাগপুরের মতো অনেক দূরের বিমানবন্দরকে।

কলকাতাগামী বিমানের ক্ষেত্রে তাই রাঁচি, ভুবনেশ্বর, লখনউ, নাগপুরের চেয়ে ঢের বেশি সুবিধেজনক পরিবর্ত হতে পারে অন্ডাল। সুবিধেগুলি কী কী?

বাঁচবে তেল। কমবে খরচ। বিমান পরিবহণের সঙ্গে যুক্ত বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিবর্ত বিমানবন্দরটি গন্তব্যের চেয়ে কত দূরে, সেই হিসেব মাথায় রেখেই যাত্রা শুরুর আগে বাড়তি জ্বালানি ভরে নেয় সব বিমান। কারণ, গন্তব্যে নামতে না-পারার অর্থ আকাশে কয়েক বার চক্কর কেটে বিমানটিকে যেতে হবে পরিবর্ত বিমানবন্দরে। এ ক্ষেত্রে দূরত্ব যত বেশি হবে তত বেশি জ্বালানি নিতে হয় বিমানকে। বর্তমান পরিবর্তগুলির চেয়ে অন্ডাল ঢের কাছে। বাড়তি জ্বালানি নেওয়ার জন্য খরচ করবে।
বিমান যত কম ওজন নিয়ে উড়বে তাতে জ্বালানিরও সাশ্রয় হবে। বিমানসংস্থার এক অফিসারের কথায়, ‘‘কম জ্বালানি নিতে হলে বিমানের ওজনও কমবে। আর তা হলে আকাশে ওড়ার সময়ে জ্বালানি খরচও হবে কম।’’
বড় বিমানেরও সমস্যা হবে না। অন্ডাল বিমানবন্দরের রানওয়েতে এয়ারবাস ৩২০ বা বোয়িং ৭৩৭ বিমান অনায়াসে ওঠানামা করতে পারে। রয়েছে চারটি পার্কিং বে এবং একটি হেলিপ্যাডও।
কমবে সময়ের অপচয়। এবং অবশ্যই যাত্রীদের দুর্ভোগ। ‘‘কলকাতার পরিবর্ত অন্ডাল হলে বিমানযাত্রীরা মনে করলে সড়ক পথেই কলকাতায় চলে আসতে পারবেন। কারণ, গাড়িতে অন্ডাল থেকে কলকাতায় ফিরতে সময় লাগে বড়জোর আড়াই ঘণ্টা,’’ বললেন কলকাতা বিমানবন্দরের ওই কর্তা।
রাতে বিমান ওঠানামার সুবিধাও রয়েছে এখানে।

কিন্তু নতুন বিমানবন্দরে কি ২৪ ঘণ্টা এটিসি চালু থাকার ব্যবস্থা রয়েছে? বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের এক কর্তার কথায়, ‘‘এখনকার চুক্তিতে ২৪ ঘণ্টা এটিসি পরিষেবা দেওয়ার কথা বলা নেই। ২৪ ঘণ্টা এটিসি চালু রাখতে গেলে আমাদের সঙ্গে অন্ডাল-কর্তাদের চুক্তি করতে হবে।’’ এ প্রসঙ্গে কলকাতা বিমানবন্দরের এক কর্তার কথায়, ‘‘এটিসি ২৪ ঘণ্টা চালু হলে স্বচ্ছন্দে অন্ডালকে পরিবর্ত হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।’’

অন্ডালের এতে লাভ কী হবে? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দিনে ক’টি বিমান ওঠানামা করবে, কত যাত্রী হবে — তা কেউ জানে না। এই অবস্থায় পরিবর্ত বিমানবন্দর হিসেবে ব্যবহৃত হলে লাভ অন্ডালেরও। কলকাতায় নামতে না-পেরে কোনও বিমান যদি সেখানে অবতরণ করে, তা হলে তারা টাকা পাবে। সেখানে বিমান দাঁড় করিয়ে রাখার জন্যও টাকা পাবে।

বাগডোগরা-অন্ডালকে জুড়ে কোচবিহার-কলকাতা বিমান পরিষেবা চালু হওয়ার কথা ছিল আজ, মঙ্গলবার। কিন্ত তা পিছিয়ে গিয়েছে এক সপ্তাহ। এয়ারপোর্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়ার (এএআই) বাগডোগরা বিমানবন্দরের অধিকর্তা রাকেশ সহায় জানিয়েছেন, ‘‘আপাতত ১৮ মে দিন ঠিক করা রয়েছে।’’ প্রশাসনিক সূত্রের খবর, কোচবিহারের বিমান বন্দরেও এটিসি-কে ঢেলে সাজা হয়েছে। সেখানে বাদবাকি পরিকাঠামোও পুরো তৈরি বলে জানিয়েছেন কোচবিহারের জেলাশাসক পি উল্গানাথন। এএআই সূত্রের খবর, একটি বেসরকারি সংস্থা কলকাতা, অন্ডাল, বাগডোগরা হয়ে কোচবিহার রুটে ১৯ আসনের বিমান চালাবে। ভাড়া পড়বে প্রায় ৬ হাজার টাকা। কিন্তু লাভজনক হয়ে ওঠার মতো যথেষ্ট যাত্রী পাবে তো বেসরকারি বিমানবন্দর অন্ডাল? এই প্রশ্নের মুখে দাঁড়িয়েও অন্ডাল আশাবাদী। কলকাতার দোসর হবে। এই বিমানবন্দরের কর্তা পার্থ ঘোষের কথায়, ‘‘আমরা এই ব্যবস্থায় রাজি। এমন একটি প্রস্তাব নিয়ে ইতিমধ্যেই আলোচনা হয়েছে। তবে, আদৌ এই বিমানবন্দরকে কলকাতার পরিবর্ত হিসেবে ব্যবহার করা হবে কি না, তার সিদ্ধান্ত বিমান মন্ত্রক নেবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE