স্কুলের প্রদর্শনী উদ্বোধনে স্বামী শুভকরানন্দ, স্বামী সুহিতানন্দ ও মন্ত্রী জেমস কুজুর। -নিজস্ব চিত্র।
পরনে গেরুয়া বসন। মাথায় গেরুয়া পাগড়ি। ছিপছিপে তরুণটির পোশাক বিবেকানন্দের মতো। খানিক পরে তারই দৃপ্তকণ্ঠে শোনা গেল বিবেকানন্দের সেই ঐতিহ্যমণ্ডিত শিকাগো বক্তৃতা। ইংরেজি বা বাংলায় নয়, আগাগোড়া সাঁওতালিতে।
রবিবার দুপুরে ঝাড়গ্রাম একলব্য আদর্শ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বার্ষিক উত্সব ও প্রদর্শনীর উদ্বোধনে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র উদয় মুর্মুর গলায় সাঁওতালিতে ‘শিকাগো বক্তৃতা’ শুনে অভিভূত হন আদিবাসী উন্নয়ন মন্ত্রী জেমস কুজুর, বেলুড় রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সাধারণ সম্পাদক স্বামী সুহিতানন্দ-সহ বিশিষ্ট অতিথিরা। করতালিতে ফেটে পড়ে বিবেকানন্দ সভাঙ্গন।
ঝাড়গ্রামের এই আদিবাসী বিদ্যালয়ে গত এক বছরে বহু ‘একলব্য’ই সব্যসাচীতে উত্তীর্ণ হয়েছে। এ দিন সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে আদিবাসী উন্নয়ন মন্ত্রী বলেন, ‘‘গত বছর জানুয়ারিতে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে ঝাড়গ্রাম একলব্যের পরিচালনার ভার রামকৃষ্ণ মিশনের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এক বছরের মধ্যে স্কুলের সার্বিক ছবিটা বদলে গিয়েছে। একে আদর্শ করেই রাজ্যের অন্যান্য একলব্য স্কুলগুলিতেও পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ হবে।’’ মন্ত্রী আরও জানান, একলব্যের শিক্ষকদের জন্য শীঘ্রই নতুন বেতন কাঠামো ও কিছু সুযোগ-সুবিধার ঘোষণা করা হবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পরে স্কুলের মূল ভবনে প্রদীপ জ্বালিয়ে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন স্বামী সুহিতানন্দ-সহ বিশিষ্টরা। প্রদর্শনীর ১৩টি বিভাগ ঘুরে ছাত্রছাত্রীদের তৈরি কয়েকশো মডেল দেখে অবাক হয়ে যান সকলে। স্বামী সুহিতানন্দ জানান, ঝাড়গ্রামে একলব্য স্কুলের পাশে একটি বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করতে চায় মিশন। এ জন্য রাজ্য সরকারের কাছে জমি চাওয়া হয়েছে। সেখানে একলব্যের পড়ুয়াদের পাশাপাশি অন্যরাও প্রশিক্ষণের সুযোগ পাবে। স্থানীয় আদিবাসী হস্তশিল্প ও লোকসংস্কৃতির বিষয়গুলিকে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের আওতায় নিয়ে আসা হবে। সুহিতানন্দ বলেন, ‘‘সবাই দুর্দান্ত ফল করবে এমন নয়। তাই বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ ও ছাত্রীদের নার্সিং ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে।’’ একলব্য স্কুলে আরও দু’টি মাঠের জন্যও রাজ্য সরকারের কাছে জমি চাওয়া হয়েছে।
একলব্য স্কুলে তিনদিনের উত্সব ও প্রদর্শনী চলবে মঙ্গলবার পর্যন্ত। এ দিন অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা, এসপি ভারতী ঘোষ, ঝাড়গ্রামের পুরপ্রধান দুর্গেশ মল্লদেব, ঝাড়গ্রাম পঞ্চায়েত সমিতির সভানেত্রী রেখা সরেন প্রমুখ। সকলেই স্কুলের ভোলবদলের জন্য বেলুড় রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের প্রচার মাধ্যমের প্রধান স্বামী শুভকরানন্দ (শান্তনু মহারাজ)-এর ভূমিকার প্রশংসা করেন। এসপি ভারতীদেবী বলেন, “মিশনের আদর্শে শান্তনু মহারাজ এই স্কুলটিকে অনন্য প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছেন। উনি ঝাড়গ্রামবাসীর পথ প্রদর্শক হয়ে উঠেছেন।” একলব্য স্কুল নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ব্যক্তিগত ভাবে খোঁজ নেন বলেও জানান ভারতীদেবী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy