Advertisement
E-Paper

‘ভোট করতে’ পাড়ি দক্ষিণ থেকে উত্তর

বাইক-বাহিনীর নজরদারি, চাপা স্বরে হুমকি, চোরাগোপ্তা দলীয় কার্যালয়ের দখলদারি—সন্ত্রাসের চেনা আবহে শিলিগুড়ি পুর-নির্বাচনের চব্বিশ ঘণ্টা আগে দোসর হয়েছে ‘বহিরাগত’র অনুপ্রবেশ। নির্বাচনের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে বৃহস্পতিবার বিরোধীরা তাই এক জোট হয়ে দাবি করেছেন ‘ওরা’ এসে গিয়েছে। কারা? সিপিএমের দাবি, কলকাতা পুরভোটে শাসক দলের যে ‘বিশেষ বাহিনী’ পুলিশ-প্রশাসনের ছত্রচ্ছায়ায় প্রায় নির্বিঘ্নে যথেচ্ছ ‘রিগিং’ করেছে, শিলিগুড়িতে বৃহস্পতিবার পা পড়েছে তাদেরই একাংশের।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:২৬

বাইক-বাহিনীর নজরদারি, চাপা স্বরে হুমকি, চোরাগোপ্তা দলীয় কার্যালয়ের দখলদারি—সন্ত্রাসের চেনা আবহে শিলিগুড়ি পুর-নির্বাচনের চব্বিশ ঘণ্টা আগে দোসর হয়েছে ‘বহিরাগত’র অনুপ্রবেশ।

নির্বাচনের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে বৃহস্পতিবার বিরোধীরা তাই এক জোট হয়ে দাবি করেছেন ‘ওরা’ এসে গিয়েছে। কারা?

সিপিএমের দাবি, কলকাতা পুরভোটে শাসক দলের যে ‘বিশেষ বাহিনী’ পুলিশ-প্রশাসনের ছত্রচ্ছায়ায় প্রায় নির্বিঘ্নে যথেচ্ছ ‘রিগিং’ করেছে, শিলিগুড়িতে বৃহস্পতিবার পা পড়েছে তাদেরই একাংশের।

তড়িঘড়ি সাংবাদিক বৈঠক ডেকে এ দিন সিপিএমের মেয়র পদপ্রার্থী অশোক ভট্টাচার্য জানিয়ে দিয়েছেন, যে কোনও মূল্যে বুথ দখল রুখবেন তাঁরা। পুলিশ-প্রশাসনের উপরে ‘নজরদারি’ চালানোর কথা বলে পাল্টা চাপ দেওয়ার মরিয়া চেষ্টাও করেছেন তিনি। বামেদের সঙ্গে গলা মিলিয়ে বিজেপি’ও দাবি করেছে শিলিগুড়িতে জমি হারানোর আশঙ্কায় এখন বহিরাগতের ভরসাতেই বোর্ড দখলের অঙ্ক কষছে তৃণমূল।

বিরোধীদের দাবি, শাসক দলের ওই ‘বিশেষ বাহিনী’ ইতিমধ্যেই পৌঁছে গিয়েছে শিলিগুড়ি। ট্রেনে নয়, কলকাতা থেকে সরাসরি বাসেই তাদের পৌঁছে দেওয়া হয়েছে শহরের উপকণ্ঠে। ঠাঁই হয়েছে শহর লাগোয়া কয়েকটি ‘নব্য’ এলাকার নির্মীয়মাণ বহুতলে। ভোটের দিন সকালে সেখান থেকেই গাড়িতে তাঁদের পৌঁছে দেওয়া হবে নির্দিষ্ট গন্তব্যে।

সিপিএমের এক তাবড় নেতার কথায়, ‘‘এ যেন ও পাড়ার দক্ষ খেলোয়াড় এ পাড়ায় খেপ খেলতে এসেছে।’’ কলকাতার প্রাক্তন মেয়র, সিপিএম নেতা বিকাশ ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘কলকাতা এবং তার লাগোয়া এলাকার কুখ্যাত বেশ কিছু দুষ্কৃতীকে শিলিগুড়ির ভক্তিনগর এলাকায় জড়ো করা হয়েছে।’’ তাঁর আশঙ্কা, ভোটের দিন ‘রিগিং’-এ এরাই হবে তৃণমূলের হাতিয়ার।

উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব অবশ্য পাল্টা দাবি করেছেন, ‘‘বহিরাগত, সন্ত্রাস বা ভয় দেখানোর কোনও প্রয়োজনই নেই তৃণমূলের।’’

তৃণমূলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, দলের কিছু নেতা-কর্মী বাসে এবং ট্রেনে শিলিগুড়ি গিয়েছেন। তবে ছাপ্পা ভোট নয়, ‘নজরদারি’ই তাঁদের লক্ষ্য।


সবিস্তার দেখতে ক্লিক করুন

তবে, শাসক দলের একটি সূত্র জানাচ্ছে, কলকাতা পুর-নির্বাচনে যারা ‘দক্ষতা’র সঙ্গে বুথ দখল করে ইভিএম-এ বোতাম টিপেছে, তাঁদেরই বাছাই করা একটি দল বুধবার রাতে শিলিগুড়ি রওনা হয়েছে। তারা যে ভক্তিনগর এলাকাতেই তৃণমূলের ডেরায় রয়েছে তা-ও জানিয়েছে তৃণমূলের ওই সূত্রটি।

কলকাতার ১০৮ নম্বর ওয়ার্ডের এক তৃণমূল নেতা অবশ্য রাখঢাক না রেখেই বলছেন, ‘‘কলকাতা ও সংলগ্ন কাশীপুর, বামনঘাটা, মুকুন্দপুর, মার্টিন পাড়া এলাকার স্টার প্লেয়ারদের পাঠানো হয়েছে শিলিগুড়ি।’’

এমনই এক ‘স্টার প্লেয়ার’ বলছেন, ‘‘আমরা বাসে এসে গিয়েছি, নেতারাও আসছেন ট্রেনে। শিলিগুড়ি শহর থেকে দু-তিন কিলোমিটার দূরে বাস থেকে নামিয়ে নেওয়ার পরে আমাদের গাড়িতে ভক্তিনগরে আনা হয়েছে। সেখানে কয়েকটি নির্মীয়মাণ বাড়িতে আমাদের রাখা হয়েছে। তবে ভোটের আগে আমাদের অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া হতে পারে।’’

দলীয় সূত্রে ‘আশ্বস্ত’ করা হয়েছে, ওই বহিরাগতেরা বাইক বাহিনীর সঙ্গে থাকবে না। তাদের সঙ্গে থাকবে না কোনও আগ্নেয়াস্ত্রও। শুধু নির্বাচনের দিন সকাল থেকে বিরোধী দলের এজেন্টদের হটিয়ে দেওয়ার পরেই বুথে ঢুকে নিজেদের ‘কেরামতি’ শুরু করবে ওই ‘স্টার প্লেয়াররা’। কী ভাবে?

শাসক দলের অন্দরের খবর, ভোটের দিন সকালে ওই বহিরাগতদের হাতে ভোটার তালিকা তুলে দেওয়া হবে। চিনিয়ে দেওয়া হবে কারা বিরোধী ভোটার। তার পর বিরোধী এজেন্টদের হটিয়ে বুথ ‘ফাঁকা’ করে দেওয়ার পরে ওই তালিকা মিলিয়ে ইভিএমে বোতাম টিপবেন ওই স্টার প্লেয়াররা। পুলিশ এবং নির্বাচন কর্মীরা কোনও ভাবেই তাদের ‘বিরক্ত’ করবে না বলেও ‘নির্দেশ’ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। তবে সব বুথে ওই বহিরাগতদের ব্যবহার করা হবে না।

‘অপারেশন চালানো হবে ওয়ার্ড পিছু ৫ থেকে ৭টি বুথে, এমনই সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। শিলিগুড়ির কোন বুথগুলিতে ওই ‘প্লেয়ারদের’ ব্যবহার করা হবে তার একটি প্রাথমিক তালিকা পাওয়া গিয়েছে—ডিআই ফান্ড মার্কেট, বিধান মার্কেট, হাসমিচক, বাগরাকোট তারই কয়েকটি নমুনা।

কলকাতা উজিয়ে যাওয়া এই ‘বিশেষ বাহিনী’র সঙ্গেই রয়েছে শিলিগুড়ির লাগোয়া এলাকা থেকে বহিরাগত নিয়ে আসার অভিযোগও। বামেদের দাবি, এ দিন শেষ প্রচারের পরে শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে তৃণমূলের মিছিলে দেখা গিয়েছে এমন কিছু মুখ যাঁরা মাটিগাড়া, ফাঁসিদেওয়া, ফুলবাড়ি কিংবা ডাবগ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার তৃণমূলের পরিচিত নেতা-কর্মী। নিউ জলপাইগুড়ি এলাকায় শাসক দলের মিছিলে দেখা মিলেছে অনেকের যাঁরা তৃণমূলের স্থানীয় প্রার্থীদের নামও জানেন না।

বহিরাগতের পাশাপাশি, প্রচারের শেষ লগ্নে দলীয় মিছিলে কর্মীদের আসা বাধ্যতামূলক করে ‘টিকিট’ ধরানোর খবরও মিলেছে এ দিন।। দলের শ্রমিক সংগঠনের ছাপ মারা ওই টিকিট ধরানো হয়েছিল অটোচালকদের মধ্যে। মিছিলে এসে টিকিট জমা না দেওয়ার অর্থ মিছিলে অনুপস্থিত। সে ক্ষেত্রে ‘শাস্তি’ ৫ দিন অটো না-চালানোর ফরমান। ফতোয়া-টোকেনের দাবি মানতে চাননি অটো চালকদের আইএনটিটিইউসি অনুমোদিত সংগঠন।

বহিরাগত নিয়ে আসার সঙ্গে শাসক দলের বিরুদ্ধে শেষ বেলায় সন্ত্রাসের অভিযোগও কম নয়। ‘অনুব্রত মডেল’ অনুসরণ করে শিলিগুড়ির ৪৭ নম্বর ওয়ার্ডের পরিচিত এক সিপিএম সমর্থকের বাড়ি ‘উড়িয়ে’ দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। হেনস্থার অভিযোগ করেছেন ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থীও। শাসক দল এমনই পরোক্ষ কিংবা প্রচ্ছন্ন সন্ত্রাসের কাঠগড়ায় দাড়িয়েছে জলপাইগুড়ি, মালদহ কিংবা কোচবিহারেও।

শাসক দলের বিরুদ্ধে ধেয়ে আসা এই অভিযোগের ভিড়ে তৃণমূলের পাল্টা অভিযোগ একটিই—ইসলামপুরে তাদের বুথ ভাঙার চেষ্টা করেছে কংগ্রেস।

abpnewsletters Mamata Bandopadhyay municipal election poll vote trinamool tmc cpm congress bjp siliguri
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy