Advertisement
E-Paper

পরিবারের সঙ্গে লড়ে মাধ্যমিকে

ছোটখাটো মেয়েটি উপরের ঠোঁট দিয়ে নীচের ঠোঁটটা চেপে ধরল। শান্ত স্বরে বলল, ‘‘আগের দু’টো পরীক্ষায় ফেল করেছি। এ বার পাশ করতে চাই।’’

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:২৮
কুলসুম খাতুন। —ফাইল চিত্র

কুলসুম খাতুন। —ফাইল চিত্র

ছোটখাটো মেয়েটি উপরের ঠোঁট দিয়ে নীচের ঠোঁটটা চেপে ধরল। শান্ত স্বরে বলল, ‘‘আগের দু’টো পরীক্ষায় ফেল করেছি। এ বার পাশ করতে চাই।’’

কুলসুম খাতুন। দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুর থানার বিকোইর গ্রামের মেয়ে। বাবা যখন তার বিয়ে ঠিক করে, মেয়ে বলেছিল, সে পড়তে চায়। সে কথা শোনা হয়নি। গত বছর ৫ মে তার বিয়ে হয়ে যায়। কুলসুমের শ্বশুরবাড়িও তার কথা শোনেনি। পড়ার কথা বললে রাগের মুখে পড়তে হত।

বাধ্য হয়ে ওই বছর পনেরোর মেয়েটি শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে বাপের বাড়িতেই ফেরে। কিন্তু বাড়ির লোক তাকে শ্বশুরবাড়িতেই ফিরে যেতে জোর করে। কিন্তু কুলসুম বালুরঘাটের ‘চাইল্ড লাইন’-এ ফোন করে সহায়তা চায়। জীবনও বদলে যায়।

কুলসুমের কথায়, ‘‘বিয়েটা রুখতে পারিনি। এ বার মাধ্যমিক পাশ করে নিজের পায়ে দাঁড়াব।’’ ‘চাইল্ড লাইন’-এর জেলা কো-অর্ডিনেটর সুরজ দাস জানান, কুলসুমের লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ দেখে তাঁরা তার বাবা মাকে অনেক বার বোঝানোর চেষ্টা করেও পারেননি। শেষে জেলা উইমেন প্রোটেকশন অফিসার এবং সিডব্লিউসির সহায়তায় বালুরঘাটের একটি মহিলা হোমে ঠাঁই জোটে। সেখানে থেকেই পড়াশোনা। এরপরই তার বাবা মা ধীরে ধীরে নরম হতে থাকেন। কুলসুমের বাবা কলিমুদ্দিন বলেন, ‘‘নাবালিকা মেয়ের পড়া বন্ধ করে বিয়ে দিয়ে ঠিক করিনি। ও আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে।’’

মুর্শিদাবাদের নবগ্রামের মেয়ে জুলেখার বক্তব্য কিন্তু ঠিক উল্টো। বাবা-মা জোর করে বিয়ে দিচ্ছেন বলে বেঁকে বসেছিল সে-ও। জানিয়ে দিয়েছিল, আগে পরীক্ষা, তার পরে বিয়ে। কিন্তু সে কথা শুনছে কে? বাড়ি ছেড়ে তাই স্কুলে এসেই শিক্ষকদের জানিয়েছিল— ‘‘আমাকে বাঁচান স্যার!’’

আরও পড়ুন:

আপনাকে কত জরিমানা চাপাব, প্রশ্ন কোর্টের

শিক্ষকেরা বিয়ে তখনকার মতো ঠেকিয়েছিলেন বটে, তবে তাঁরা ফিরতেই ফের শুরু হয় বিয়ের তোড়জোড়। প্রশাসনের কাছে নালিশ করে মেয়েটি। পুলিশ টিকটিকিপাড়া গ্রামে গিয়ে ধমকায় জুলেখার বাবা-মাকে। সেই থেকে গত আড়াই মাস ধরে স্কুলের ল্যাবরেটরি ঘরটাই হয়ে উঠেছিল তার ঠিকানা। সেখান থেকেই এ দিন মাধ্যমিক দেওয়া শুরু করল মেয়েটি। পরীক্ষার দিনেও বাবা, মা আসেননি। মন খারাপ করেনি? জুলেখার উত্তর— ‘‘আমার জীবনে বাবা-মা নেই বলেই তো মাধ্যমিক পরীক্ষাটা দিতে পারছি।’’

বাবা-মাকে ছেড়ে হোমে থেকে পরীক্ষা দিচ্ছে বর্ধমানের মেমারির উল্লেরা-সোয়েরাপাড়া গ্রামের অঞ্জলি মান্ডিও। তার বিয়ে ঠিক হয়েছিল শক্তিগড়ের কাছে। বিয়েতে আপত্তি জানিয়ে সে মেমারি থানা ও পঞ্চায়েত সদস্যের দ্বারস্থ হয়। কিন্তু সেখান থেকে সাহায্য না পেয়ে নিজে ‘চাইল্ডলাইন’-এর নম্বরে ফোন করে। সেই সূত্রে অঞ্জলি এখন রয়েছে বর্ধমানের ঢলদিঘির শিশুকল্যাণ কমিটির হোমে। সেখান থেকেই এ দিন সুভাষপল্লির একটি স্কুলে মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসল বছর ষোলোর মেয়েটি।

এদের মতোই এ দিন পরীক্ষা দিল দক্ষিণ ২৪ পরগনার উস্তির এক মেয়েও। ৮ ফেব্রুয়ারি রাতে এক আত্মীয়ের সঙ্গে কারবালা বাজার থেকে জুতো কিনে ফিরছিল। উল্টো দিক থেকে সাইকেলে এসে এক কিশোর তার মুখে অ্যাসিড ছুড়ে পালায়। অভিযুক্ত এখনও ধরা পড়েনি। তার দাদা জানান, যন্ত্রণা সহ্য করেই তাঁর বোন প্রস্তুতি নিয়েছে।

রাজ্যের চার কোণে এই চার কন্যারই এ দিন পরীক্ষা ভাল হয়েছে।

Secondary Exam Family
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy