Advertisement
১৮ মে ২০২৪

ট্রেনে ধৃত সশস্ত্র যুবক কি আইএস, তদন্তে সিআইডি

গুলশনের ক্ষত যখন ও পার বাংলায় টাটকা, তখনই ইসলামিক স্টেট বা আইএস-এর সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ফের ধরা পড়ল পশ্চিমবঙ্গের এক বাসিন্দা। মহম্মদ মুসাউদ্দিন ওরফে শেখ মসিউদ্দিন মিয়ঁা ওরফে মুসা নামে বীরভূমের লাভপুরের বাসিন্দা, বছর আঠাশের ওই যুবককে সোমবার রাতে বর্ধমান স্টেশনে আটক করা হয়। সেখান থেকে আনা হয় ভবানী ভবনে। মঙ্গলবার বিকেলে সিআইডি তাকে গ্রেফতার করে।

ধৃত মুসা। মঙ্গলবার ভবানী ভবনে সুদীপ্ত ভৌমিকের তোলা ছবি

ধৃত মুসা। মঙ্গলবার ভবানী ভবনে সুদীপ্ত ভৌমিকের তোলা ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০১৬ ০৩:২৯
Share: Save:

গুলশনের ক্ষত যখন ও পার বাংলায় টাটকা, তখনই ইসলামিক স্টেট বা আইএস-এর সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ফের ধরা পড়ল পশ্চিমবঙ্গের এক বাসিন্দা। মহম্মদ মুসাউদ্দিন ওরফে শেখ মসিউদ্দিন মিয়ঁা ওরফে মুসা নামে বীরভূমের লাভপুরের বাসিন্দা, বছর আঠাশের ওই যুবককে সোমবার রাতে বর্ধমান স্টেশনে আটক করা হয়। সেখান থেকে আনা হয় ভবানী ভবনে। মঙ্গলবার বিকেলে সিআইডি তাকে গ্রেফতার করে।

গত দেড় বছরে এই নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের তিন জন বাসিন্দাকে আইএসে জড়িত সন্দেহে ধরা হয়েছে।

শুক্রবার রাতে ঢাকার গুলশনে জঙ্গি হামলার জেরে এ পার বাংলাও যখন কিছুটা তটস্থ, তার মধ্যেই এই কাণ্ড। গোয়েন্দাদের একটি সূত্রের দাবি, বাংলাদেশের দুই সন্দেহভাজন আইএস জঙ্গির সঙ্গে মুসার নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। আর সিরিয়া থেকে সোশ্যাল মিডিয়া এবং ই-মেলের মাধ্যমে তার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রাখত আইএসের অন্যতম শীর্ষনেতা শফি আরমার। কর্নাটকের ভটকলের বাসিন্দা শফির উপরে সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশে সংগঠনের কাজকর্ম দেখার দায়িত্ব। সিরিয়ায় আইএসের সদর দফতর হিসেবে গণ্য রাকা থেকে মুসার কাছে টাকাও পাঠানো হয়েছে বলে ধারণা গোয়েন্দাদের একাংশের।

তদন্তকারীরা প্রাথমিক ভাবে জেনেছেন, সিরিয়ায় আইএস নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে এই রাজ্যে নাশকতা ঘটানোর ছক ছিল মুসা ও তার সহযোগীদের। তার সঙ্গীদের খোঁজ চলছে। কোনও রাজনীতিবিদকে তারা ‘টার্গেট’ করেছিল, এমন আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না।

এর আগে ২০১৪-র ডিসেম্বরে, কৈখালির বাসিন্দা মেহেদি মসরুর বিশ্বাসকে বেঙ্গালুরুতে গ্রেফতার করা হয়। তার বিরুদ্ধে আইএসের সব চেয়ে প্রভাবশালী ‘টুইটার হ্যান্ডল’ তৈরি ও সেটি চালানোর অভিযোগ ছিল। চলতি বছর মার্চে হুগলির ধনেখালির বাসিন্দা, কাঁকসার একটি পলিটেকনিক কলেজের ছাত্র আশিক আহমেদকে গ্রেফতার করা হয়। তার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল মূলত আইএসের ভারতীয় শাখার দু’জন চাঁইয়ের। নাশকতারও ছক কষেছিল আশিক। তবে তদন্তকারীদের বক্তব্য, আশিকের আবেগ যতটা ছিল, বিবেচনা ততটা ছিল না।

কিন্তু জঙ্গি হিসেবে মুসার গুরুত্ব এদের চেয়ে অনেক বেশি বলে গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন। গোয়েন্দাদের একটি সূত্রের খবর, দেশি-বিদেশি মিলিয়ে মুসা সাত-আটটি ভাষা জানে। জেরায় সে গোয়েন্দাদের বলেছে, ‘আমি ছোটখাটো। আমার উপরে অনেক মাথা রয়েছে।’

এ দিন সিআইডি-র ডিআইজি (অপারেশনস) দিলীপ আদক বলেন, ‘‘ধৃত মুসার কাছ থেকে ১৩ ইঞ্চি লম্বা একটি ধারালো ছোরা এবং তিন রাউন্ড গুলি-সহ একটি দেশি বন্দুক উদ্ধার করা হয়েছে। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে তার মোবাইল ফোনটি।’’ মুসার মোবাইল ফোন থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সূত্র ইতিমধ্যেই পেয়েছেন গোয়েন্দারা। আপাতত ধৃতের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা রুজু করা হয়েছে। এক গোয়েন্দা-কর্তা মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘‘আইএস দুনিয়ায় প্রচার করছে যে, বিস্ফোরণ করে বা গুলি চালিয়ে নাশকতা ঘটাতে হবে, তার কোনও মানে নেই— ছোরা দিয়ে এক জন শত্রুকে খুন করাটাও জেহাদ।’’

ওই যুবক বছর পাঁচেক ধরে স্ত্রী ও দুই কন্যাকে নিয়ে তামিলনাড়ুতে ছিল। তামিলনাড়ু-সহ দক্ষিণ ভারতের বিস্তীর্ণ অংশে আইএসের প্রভাব বিস্তারের কথা গোয়েন্দাদের অজানা নয়। তাঁদের ধারণা, সেখানেই আইএসের কোনও মডিউলের (শাখা) সঙ্গে মুসার যোগাযোগ হয়েছিল, পরে সাইবার-মাধ্যমে তার মগজধোলাই করেছিল শফি আরমার।

গোয়েন্দা সূত্রের খবর, সোমবার দুপুরে নিউ মার্কেট চত্বর থেকে এয়ারগান কিনতে দেখা যায় মুসাকে। পরে ধর্মতলা এলাকা থেকে সে ছোরা কেনে। সেখান থেকে সে হাওড়া স্টেশনের উদ্দেশে রওনা হয়। ওঠে বিশ্বভারতী ফাস্ট প্যাসেঞ্জারে। পুলিশ সূত্রের খবর, সিআইডি থেকে বর্ধমানের এসপি-র কাছে খবর যায়, আপ বিশ্বভারতী ফাস্ট প্যাসেঞ্জার ট্রেনের বাতানুকূল ডি-১ কামরায় থাকা বছর আঠাশের এক যুবককে আটক করতে হবে। বীরভূমের পুলিশ সুপারকে বলা হয়, আমোদপুর স্টেশনে ওই যুবকের অপেক্ষায় রয়েছে দু’জন, তাদেরও ধরতে হবে।

ট্রেন বর্ধমান স্টেশন ঢোকার পরেই সাদা পোশাকের পুলিশ ওই ট্রেনের ডি-১ কামরার ১৭ নম্বর আসন থেকে মুসাকে তুলে জিআরপি থানায় নিয়ে চলে যায়। আটক করা হয় আমোদপুর স্টেশনে মুসার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকা দু’জনকেও। তবে তাদের পরিচয় নিয়ে মুখে কুলুপ গোয়েন্দাদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

CID investigation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE