Advertisement
E-Paper

পরিবর্তনের ডাক জেটলিরও

সরকার চালানোর ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো মেনে রাজ্যের সঙ্গে সহযোগিতার নীতি। আর রাজনৈতিক ভাবে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলকে সরিয়ে ফের ‘পরিবর্তন’-এর ডাক। অমিত শাহের এই কৌশলই কলকাতায় এসে স্পষ্ট করে দিয়ে গেলেন বিজেপির অন্যতম শীর্ষ নেতা এবং প্রতিরক্ষা ও কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। সরকারি স্তরে আদানপ্রদান এবং রাজনৈতিক স্তরে বিরোধিতা, এই দুই বিষয়ই এক সঙ্গে চলবে বলে দলের সর্বভারতীয় সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে স্পষ্ট করে দিয়েছেন অমিত। জেটলির দু’দিনের বঙ্গ সফরে বিজেপির সেই নীতিরই হুবহু প্রতিফলন ঘটেছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৪ ০৩:৩৫
কাঁকুড়গাছির সভায়। রবিবার। নিজস্ব চিত্র

কাঁকুড়গাছির সভায়। রবিবার। নিজস্ব চিত্র

সরকার চালানোর ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো মেনে রাজ্যের সঙ্গে সহযোগিতার নীতি। আর রাজনৈতিক ভাবে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলকে সরিয়ে ফের ‘পরিবর্তন’-এর ডাক। অমিত শাহের এই কৌশলই কলকাতায় এসে স্পষ্ট করে দিয়ে গেলেন বিজেপির অন্যতম শীর্ষ নেতা এবং প্রতিরক্ষা ও কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি।

সরকারি স্তরে আদানপ্রদান এবং রাজনৈতিক স্তরে বিরোধিতা, এই দুই বিষয়ই এক সঙ্গে চলবে বলে দলের সর্বভারতীয় সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে স্পষ্ট করে দিয়েছেন অমিত। জেটলির দু’দিনের বঙ্গ সফরে বিজেপির সেই নীতিরই হুবহু প্রতিফলন ঘটেছে। রাজ্য সরকারের অনুরোধ মেনে শনিবারই নবান্নে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাজ্যের অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। সেখানে রাজ্যের দাবিদাওয়া নিয়ে আলোচনা হয়েছে। রাজ্যে এখন এক দিকে সারদা-কাণ্ডে সিবিআই তদন্তে অভিযান ও ধরপাকড় চলছে এবং অন্য দিকে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ক্রমাগত সুর চড়াচ্ছে বিজেপি। এই সময়ে ওই বৈঠক থেকে যে কোনও ভুল বার্তা যাওয়ার অবকাশ নেই, ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন জেটলি। ভোট লুঠ, সন্ত্রাস থেকে শুরু করে শিল্প এবং অর্থনীতির প্রশ্নে তিনি তীব্র আক্রমণ করেছেন তৃণমূলকে।

রবিবার কাঁকুড়গাছিতে পূর্বাঞ্চল বিদ্যামন্দির অডিটোরিয়ামে বিজেপির বিদ্বজ্জন শাখার সভায় দলের কেন্দ্রীয় নেতা সিদ্ধার্থনাথ সিংহ, রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ, এম জে আকবর, সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়দের উপস্থিতিতে জেটলির কটাক্ষ, “সরকার কেমন করে চালানো উচিত নয়, সেটাই তৃণমূলের থেকে শেখা উচিত!” তিন বছর আগে পশ্চিমবঙ্গে ৩৪ বছরের বাম শাসনের অবসান ঘটিয়ে নতুন সরকার গড়েছেন মমতা। কিন্তু রাজ্যে কোনও পরিবর্তন হয়নি। প্রকৃত পরিবর্তন আনতে পারে বিজেপিই। বিশিষ্টজনেদের সভায় এ দিন জেটলির বক্তব্যের মূল নির্যাস ছিল এটাই।

এ রাজ্যে বিজেপির এক জনও বিধায়ক নেই। তা সত্ত্বেও এ বার লোকসভা ভোটে বিজেপি এখানে যথেষ্ট ভাল ফল করেছে। সেই প্রসঙ্গ টেনে দলীয় কর্মীদের উজ্জীবিত করতে জেটলি বলেন, “আমরা উত্তরপ্রদেশে ৭১টি আর গোটা দেশে ২৮৮টি আসন পাব, সে কথা কেউ ভাবেনি। পশ্চিমবঙ্গ এর চেয়েও বড় বিস্ময় তৈরি করতে পারে।” অমিতও সম্প্রতি বলেছেন, ২০১৬-র বিধানসভা ভোটেই তৃণমূলকে সরিয়ে রাজ্যে পরিবর্তন আনতে হবে, এই লক্ষ্যেই তাঁরা দলকে প্রস্তুত করছেন। জেটলি এ দিন পরামর্শ দিয়েছেন, ওই সাফল্য পেতে হলে বাম এবং তৃণমূলের রাজনীতির সঙ্গে বিজেপি-র রাজনীতির স্পষ্ট ফারাক মানুষকে বুঝিয়ে দিতে হবে। পাশাপাশি বুঝিয়েছেন, বাম ভোটব্যাঙ্কে ইতিমধ্যেই থাবা বসিয়েছে গেরুয়া বাহিনী। এ বার তৃণমূলের ভোটও নিজেদের ঝুলিতে টানতে হবে।

জেটলির অভিযোগ, “বামেদের সঙ্গে তৃণমূলের কোনও তফাত নেই। দু’পক্ষের একই রাজনীতি। ভোট লুঠের সংস্কৃতি থেকে শুরু করে আর্থিক নীতি, সবই এক।” মুখ্যমন্ত্রী সবেমাত্র শিল্প-সফর সেরে সিঙ্গাপুর থেকে ফিরেছেন। রাজ্য সরকারের দাবি, সেখান থেকে অনেক বিনিয়োগ এ রাজ্যে আসবে। কিন্তু মমতা বিরোধী নেত্রী থাকাকালীন তাঁর সিঙ্গুর আন্দোলনের জেরে টাটার ন্যানো প্রকল্প এ রাজ্য থেকে গুজরাতে পাড়ি দিয়েছিল। সরাসরি সে প্রসঙ্গ উল্লেখ না করলেও এ দিন জেটলি প্রশ্ন তোলেন, “যাঁর রাজনীতি এ রাজ্য থেকে বিনিয়োগ তাড়িয়েছে, তিনি এখন লগ্নি চাইলে কি তা আসবে?” বামেদের মতোই তৃণমূল প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) বিরোধিতা করেছিল। সেই সূত্রেই জেটলির কটাক্ষ, “তৃণমূল বিদেশি লগ্নির বিরুদ্ধে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তবে সিঙ্গাপুরে গেলেন কেন? নীতি তো একটা থাকা চাই!”

কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর প্রশ্নের সরাসরি উত্তর না-দিলেও তাঁকে অবশ্য পাল্টা কটাক্ষ ফিরিয়ে দিয়েছে রাজ্যের শাসক দল। রাজ্যের অর্থমন্ত্রী রাতে বলেন, “জেটলির কাছ থেকে এমন বক্তব্য দুঃখজনক। হয় তিনি জানেন না, নয়তো জেনেও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে এ সব বলছেন।” তাঁর দাবি, শিল্প ও বাণিজ্য জগতের প্রায় দেড়শো প্রতিনিধি মুখ্যমন্ত্রীর সিঙ্গাপুর সফরে অংশ নিয়েছেন। রাজ্যের অর্থমন্ত্রীর কথায়, “তাঁরা নিশ্চয়ই বিনা কারণে অংশ নেননি! চাঙ্গি, এইচ আর জনসনের মতো সংস্থার কাছ থেকে বাংলা বিনিয়োগ পেয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী ১০ দিন আগেই বড়জোড়ায় সিমেন্ট কারখানার উদ্বোধন করেছেন। এ সবের পরেও জেটলির এমন মন্তব্য মেনে নেওয়া যায় না।”

তৃণমূলের মহাসচিব তথা রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, “পশ্চিমবঙ্গ সম্পর্কে প্রত্যক্ষ ধারণা জেটলির নেই। কিছু শোনা কথার ভিত্তিতে তিনি মন্তব্য করেছেন। তৃণমূলকে দেখে গোটা দেশকে শিখতে হবে। অর্থনৈতিক প্রতিকূলতা এবং নানা বাধার মধ্যেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তিন বছরে রাজ্যকে কী ভাবে উন্নয়নের পথে নিয়ে গিয়েছেন, কী ভাবে শিল্প ও বিনিয়োগ আনতে আন্তরিক ভাবে চেষ্টা করছেন, কটাক্ষ না করে সে সবই ইতিবাচক দৃষ্টিতে শেখা উচিত।”

জেটলি এ দিন মনে করিয়ে দিয়েছেন, ধার করে কখনও রাজ্য চলে না। এ ক্ষেত্রেও বাম ও তৃণমূলের মধ্যে বিশেষ ফারাক টানেননি তিনি। যদিও তৃণমূলের পার্থবাবুর বক্তব্য, “দু’লক্ষ তিন হাজার কোটি টাকার ঋণের বোঝা সামলে কী ভাবে কাজ করা সম্ভব, সে সম্পর্কে তিনি দু-চারটে পরামর্শ দিয়ে গেলে বরং ভাল হতো! মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি ওঁদের ভালবাসা না থাকতে পারে। কিন্তু যে রাজ্যের মানুষের মন জয় করতে ওঁরা মরিয়া হয়ে উঠেছেন, তাঁদের স্বার্থে এটা তো করতে পারতেন!”

জেটলির বক্তব্য, এক সময়ে পশ্চিমবঙ্গ দেশের শিল্প মানচিত্রে উজ্জ্বল জায়গায় থাকলেও বাম আমল থেকেই এ রাজ্যের শিল্পের ছবি মলিন হতে শুরু করে। রাজ্য ঋণে জড়িয়ে পড়ে। তৃণমূল ক্ষমতায় এসে ওই পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটাতে পারেনি। শিল্প না থাকায় এখানে কর্মসংস্থান নেই। তাই যুব সম্প্রদায় এ রাজ্য থেকে অন্যত্র চলে যাচ্ছে। এই অবস্থায় তৃণমূলের প্রতি মানুষের ক্রোধ বাড়ছে। এখনই বিজেপিকে বোঝাতে হবে যে, তারাই এ রাজ্যে একমাত্র বিকল্প। সন্ত্রাসের রাজনীতি থেকে আর্থিক বিশৃঙ্খলা, সঙ্গে শিল্পে হতাশার ছবির ক্ষেত্রে বাম আমলের তুলনা টেনে জেটলি এ দিন যে ভাবে তৃণমূলকে আক্রমণ করে গিয়েছেন, তাতে বিজেপি শিবির যথেষ্টই উজ্জীবিত।

যদিও তৃণমূলের তরফে পার্থবাবুর মন্তব্য, “বাম ও কংগ্রেসের যৌথ অপশাসনের বিরুদ্ধে লড়াইটা তো করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপি তখন কোথায়? এ রাজ্যে তারা অতীতে যেটুকু ছিল, তা তৃণমূল নেত্রীরই সৌজন্যে।” আর রাজ্যের অর্থমন্ত্রী বলেছেন, “জেটলি রাজনীতি করছেন। পশ্চিমবঙ্গ এ সব কথা তাঁর কাছ থেকে আশা করেনি।”

bjp tmc arun jaitley
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy