Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Pollution

Pollution: ছাই-দূষণে ক্ষতি ফুসফুসে, কী করে যুঝবে করোনা

সাগরদিঘি তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র লাগোয়া মনিগ্রামের বাসিন্দাদের অভিযোগ, গ্রামের অন্তত ৮০ শতাংশ শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ভুগছেন।

কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের দূষণ থেকে বাঁচতে এলাকা ছেড়েছিলেন, দাবি মেচেদার মন্মথ দাসের।

কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের দূষণ থেকে বাঁচতে এলাকা ছেড়েছিলেন, দাবি মেচেদার মন্মথ দাসের। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০২১ ০৬:৩৪
Share: Save:

বিদ্যুৎকেন্দ্রের ছাই বাতাসে মিশে মূলত বাড়ছে শ্বাসকষ্টজনিত রোগ। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বজবজ থেকে পশ্চিম বর্ধমানের দুর্গাপুর বা মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘি থেকে বাঁকুড়ার মেজিয়া—অভিযোগ সর্বত্র একই। পাশাপাশি, বায়ুদূষণে ক্ষতিগ্রস্ত ফুসফুস করোনা-পরিস্থিতিতে যোঝায় পিছিয়ে পড়বে, মত ডাক্তারদের।

সাগরদিঘি তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র লাগোয়া মনিগ্রামের বাসিন্দাদের অভিযোগ, গ্রামের অন্তত ৮০ শতাংশ শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ভুগছেন। এলাকার বাসিন্দা শিক্ষক দেবজ্যোতি দে-র দাবি, “গত সাত-আট বছর ধরে গ্রামের ৮০ শতাংশ শিশু শ্বাসকষ্টে ভুগছে। আমার ছেলেরও একই সমস্যা রয়েছে। ডাক্তার বলেছেন, ‘অ্যাজ়মাটিক ব্রঙ্কাইটিস। নিয়মিত ইনহেলার বা নেবুলাইজ়ার দিতে হয়। এলাকার এই পরিস্থিতি নিয়ে কোনও সমীক্ষা হয়নি।’’

দেবজ্যোতি বাড়িয়ে বলছেন না বোঝা যায় পূর্ব মেদিনীপুরের কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র লাগোয়া এলাকার শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ প্রবীর ভৌমিকের কথায়। তাঁর দাবি, ‘‘তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের দূষণের কারণে কোলাঘাট এলাকার শিশুদের মধ্যে সর্দি, কাশি, হাঁপানির মতো রোগের প্রকোপ প্রায়ই দেখা যায়। শীতকালে রোগের প্রকোপ বাড়ে। এর একটাই প্রতিকার— দূষণ বন্ধ করতে হবে।’’

১৯৮৪ সালে চালু হয় কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। অভিযোগ, তার পর থেকে ছাই-দূষণে জেরবার হয়ে পড়েন কোলাঘাট ও পার্শ্ববর্তী এলাকার মানুষজন। কৃষিক্ষেত্রে ক্ষতির পাশাপাশি, চর্মরোগ, হৃদ্‌যন্ত্রের অসুখ, চোখের রোগ, হাঁপানিতে আক্রান্ত হতে শুরু করে শিশু থেকে বয়স্ক।

বছর দশেক আগে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হন মেচেদার বাসিন্দা বৃদ্ধ মন্মথ দাস। তখন তাঁর বয়স ছিল ৬৭। বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মতো ওষুধ খেয়েও শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়নি মন্মথের। রোগ সারাতে গেলে মেচেদা ছেড়ে অন্যত্র থাকতে হবে— পরামর্শ দেন ডাক্তার। অগত্যা মেচেদা থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে রামতারক এলাকায় একটি ভাড়া বাড়িতে গিয়ে ওঠেন মন্মথ। টানা দু’বছর সেখানে ছিলেন। সুস্থ হয়ে ফেরেন মেচেদায়। ততদিনে কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ বিদ্যুৎকেন্দ্রের চিমনিগুলিতে দূষণরোধী যন্ত্র লাগানোর কাজ শুরু করে দিয়েছেন। মন্মথর দাবি, ‘‘একটা সময় কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছাই-দূষণ মারাত্মক আকার নিয়েছিল। হার্টের রোগ সারছিল না। এলাকা ছেড়ে অন্যত্র গিয়ে সুস্থ হয়েছি।’’

বাঁকুড়া স্বাস্থ্য-জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (সিএমওএইচ) শ্যামল সরেন জানান, বাতাসে ভাসমান ছাইয়ের কণা শ্বাস নেওয়ার সময় শ্বাসনালী হয়ে ফুসফুসে পৌঁছলে ধীরে ধীরে কমতে থাকে ফুসফুসের কর্মক্ষমতা। দীর্ঘদিন অত্যধিক মাত্রায় ছাই ঢুকলে সংক্রমণ ঘটে ফুসফুসে। হাঁপানি বা শ্বাসকষ্টজনিত রোগ দেখা দেয়। ডাক্তারদের একাংশের দাবি, বায়ু দূষণের জন্যই দুর্গাপুর শহরে দিন দিন ‘ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজ়িজ়’ (সিওপিডি) আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। চোখের সংক্রমণও বাড়ছে দূষণের জন্য। এ ছাড়া, বিদ্যুৎকেন্দ্রের বর্জ্য ছাই থেকে ‘সিলিকোসিস’ ও যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও অনেকটাই বেশি বলে মত বিশেষজ্ঞদের।

বজবজ বিদ্যুৎকেন্দ্র লাগোয়া এলাকার অনেক ডাক্তারের দাবি, প্রতি মাসেই তাঁদের কাছে শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ভোগা বহু রোগী আসেন। স্থানীয় পুরসভা দাবি করেছে, কয়েক বছরে নানা বিধি-নিষেধ জারি করার পরে, এলাকায় বায়ুদূষণ অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত। কিন্তু বজবজ পুরসভার চড়িয়াল এলাকার বাসিন্দা চিকিৎসক অনাথবন্ধু নাথ বলছেন, ‘‘শ্বাসকষ্টের উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীর সংখ্যা কমেনি। অতএব, দূষণের মাত্রা একই রয়েছে বলে ধরে নিচ্ছি।’’

পুরুলিয়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক তথা বিজ্ঞান মঞ্চের পুরুলিয়ার সম্পাদক নয়ন মুখোপাধ্যায় মনে করিয়ে দিয়েছেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রের ছাই থেকে তৈরি দূষণে ফুসফুসের ক্ষতির সম্ভাবনা থাকেই, করোনা-পরিস্থিতিতে যা বিপজ্জনক। তিনি বলেন, ‘‘বিদ্যুৎকেন্দ্রর ছাই ও কয়লার গুঁড়ো উড়ে জলাশয়ে পড়ে আস্তরণ তৈরি হয়। ওই ঘটনাও মারাত্মক। তাতে জলে দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রা কমে, জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদের ক্ষেত্রে বিপদ তৈরি হয়। সমস্যাগুলো থেকে মুক্তি পেতে দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা ছাড়া, অন্য উপায় নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Pollution COVID-19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE