Advertisement
১৮ মে ২০২৪
আসানসোল পুরসভাকে ভর্ৎসনা

মেলা করার অনুমতি দিতে নির্দেশ দিল কোর্ট

আগে ভর্ৎসনা করেছিলেন বিচারপতি হরিশ টন্ডন। সাংসদ মেলা বাতিলের যুক্তি নিয়ে বৃহস্পতিবার আসানসোল পুরসভাকে ফের তুলোধনা করল কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দার ও বিচারপতি শঙ্কর আচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ।

উচ্ছ্বসিত। আদালতের রায় শোনার পরে মিষ্টিমুখ বাবুল সুপ্রিয়ের। ছবি: শৈলেন সরকার।

উচ্ছ্বসিত। আদালতের রায় শোনার পরে মিষ্টিমুখ বাবুল সুপ্রিয়ের। ছবি: শৈলেন সরকার।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা ও আসানসোল শেষ আপডেট: ১৩ জানুয়ারি ২০১৭ ০২:৪৬
Share: Save:

আগে ভর্ৎসনা করেছিলেন বিচারপতি হরিশ টন্ডন। সাংসদ মেলা বাতিলের যুক্তি নিয়ে বৃহস্পতিবার আসানসোল পুরসভাকে ফের তুলোধনা করল কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দার ও বিচারপতি শঙ্কর আচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ। পুরসভার দেখানো কারণগুলি ‘যুক্তিহীন’ ও ‘অমূলক’ জানিয়ে মেলার অনুমতি দিতে নির্দেশ দেওয়া হল মেয়রকে।

রায় শুনে মেলার উদ্যোক্তা তথা আসানসোলের বিজেপি সাংসদ বাবুল সুপ্রিয় বলেন, ‘‘স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনে সত্যের জয় হল।’’

ডিভিশন বেঞ্চ অবশ্য সেই সঙ্গেই জানিয়েছে, মেলায় ভিড়ের চাপ সামলানো না গেলে পুর-কর্তৃপক্ষ পুলিশকে জানাবেন। পুলিশ পরিস্থিতি বুঝে কোনও স্টল বা মেলা বন্ধের সুপারিশ করলে মেয়র আয়োজক সংস্থাকে সে নির্দেশ দিতে পারেন। আসানসোলের মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারির প্রতিক্রিয়া, ‘‘কোর্ট যা নির্দেশ দিয়েছে, তা-ই হবে।’’

আসানসোল রেল মাঠে আজ, শুক্রবার থেকে তিন দিনের এই মেলা শুরু হচ্ছে। সপ্তাহখানেক ধরে এ নিয়ে আয়োজক সংস্থা ও তৃণমূল পরিচালিত পুরসভার টানাপড়েন চলেছে। নানা কারণ দেখিয়ে পুরসভা অনুমতি না দেওয়ায় আয়োজকেরা হাইকোর্টে যান। মঙ্গলবার বিচারপতি হরিশ টন্ডন সেই সব কারণের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে মেয়রকে আর্জি পুনর্বিবেচনার নির্দেশ দেন।

কিন্তু বুধবার মাঠ পরিদর্শনের পরে মেয়র মেলার আবেদন নাকচ করেন। তাঁর দাবি, মেলা উপলক্ষে মুম্বইয়ের নামী শিল্পীদের অনুষ্ঠান রয়েছে। কিন্তু পাঁচিলে ঘেরা মাঠটি সেই অনুষ্ঠানের উপযুক্ত নয়। দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। পুরসভার সিদ্ধান্ত জানার পরেই হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয় আয়োজক সংস্থা। অনুষ্ঠান বাদ দিয়ে মেলার অনুমতির আর্জি জানানোর সিদ্ধান্ত নেয় তারা।

এ দিন সকালেই অনুষ্ঠানের মঞ্চ খোলা শুরু হয়। আদালতে আয়োজক সংস্থার আইনজীবী কিশোর দত্ত জানান, পুরসভা আপত্তি জানিয়েছে, তাই গানবাজনার অনুষ্ঠান বাতিল করা হচ্ছে। তবে ডিভিশন বেঞ্চ পুরসভার যুক্তি নিয়ে প্রশ্ন তোলে। বিচারপতিদের প্রশ্ন, ভিড় সামলানো কি পুরসভার কাজ? গঙ্গাসাগর মেলার জন্য যদি পর্যাপ্ত পুলিশ পেতে সমস্যার কথা বলা হয়, তবে গত কয়েক দিনে রাজ্যে কোথায় কত মেলা হয়েছে, ডিজি-র কাছে সেই তথ্য চাওয়া হবে। বিচারপতি সমাদ্দার বলেন, ‘‘আসানসোলে কি কখনও কোনও বড় শিল্পী অনুষ্ঠান করেননি?’’ রাজ্যের অতিরিক্ত অ্যাডভোকেট জেনারেল লক্ষ্মী গুপ্তকে নির্দেশ দেওয়া হয়, মেয়রকে ফের মাঠ পরিদর্শন করে মেলার অনুমতি দেওয়া যাবে কি না, তা জানাতে হবে।

দুপুরে আবার শুনানি শুরু হলে লক্ষ্মীবাবু আদালতে জানান, মেয়র জানিয়েছেন, অনুমতি না দেওয়ার আরও কারণ রয়েছে। মেলায় আধার কার্ড বিলি, পাসপোর্টের স্টল থাকবে। প্রতিবন্ধীদের হুইল চেয়ার, সাইকেল বিলি করা হবে। এ সবের জন্যও ভিড় হবে। পদপিষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিচারপতি সমাদ্দার বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় কোনও প্রকল্পে কিছু বিলি করা হলে বা আধার কার্ড-পাসপোর্ট দেওয়া হলে সাধারণ মানুষ যদি উপকৃত হন, মেয়রের অসুবিধা কোথায়? ভিড় সামলানো যাবে কি না, তা মেয়র কী করে বলতে পারেন?’’ এর পরেই পুরসভাকে মেলার অনুমতি দিতে ও মেলা প্রাঙ্গণে আইন-শৃঙ্খলা পুলিশকে সামলানোর নির্দেশ দেন।

আদালতের নির্দেশ শুনে মেলার মাঠে আবীর খেলায় মাতেন বিজেপি কর্মী ও আয়োজকেরা। বাবুল গান ধরেন, ‘‘ফেঁসে গেল, ফেঁসে গেল কালীরামের ঢোল।’’

পরে জোড়েন, ‘‘কার ঢোল ফেঁসে গেল বুঝে নিন।’’ বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের মন্তব্য, ‘‘বারবারই আদালতের কাছে ভর্ৎসিত হয় রাজ্য সরকার, তবু শিক্ষা হয় না!’’ মেয়র জিতেন্দ্রবাবু অবশ্য বলেন, ‘‘মেলার অনুমতি দেব না বলিনি। বলেছি, এমন অনুষ্ঠান ওখানে করা যাবে না যেখানে বহু লোক জড়ো হবেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Babul Supriyo Fair
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE