Advertisement
০৩ মে ২০২৪

পুলিশের সঙ্গে দুপুরের খাবার ভাগ করে খেয়েছিলেন বাজপেয়ী

পুরুলিয়া অস্ত্রবর্ষণ মামলার সেই শুরু। ঝালদা থানা। কেস নম্বর ১৫২। অস্ত্রগুলি ফেলা হয়েছিল ‘আন্টোনভ এএন-২৬’ বিমান থেকে। ক’দিন বাদে বিমানটি ফের ভারতে ঢুকলে ভারতীয় বিমান বাহিনী সেটিকে আটক করে। আরোহী ব্রিটিশ নাগরিক পিটার ব্লিচ এবং লাটাভিয়ার সাত জনকে বন্দি করে দেশদ্রোহিতার অভিযোগ দায়ের হয়। কিন্তু উধাও হয়ে যান অস্ত্রবর্ষণের মূল মাথা কিম পিটার ডেভি।

তখনও মৃত্যু সংবাদ পৌঁছয়নি। অটলবিহারী বাজপেয়ীর আরোগ্য কামনায় যজ্ঞ করছেন রঘুনাথপুরে কয়েক জন যুবক। নিজস্ব চিত্র

তখনও মৃত্যু সংবাদ পৌঁছয়নি। অটলবিহারী বাজপেয়ীর আরোগ্য কামনায় যজ্ঞ করছেন রঘুনাথপুরে কয়েক জন যুবক। নিজস্ব চিত্র

প্রশান্ত পাল
ঝালদা শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০১৮ ০০:৪০
Share: Save:

দেশ জুড়ে তোলপাড় চলছে প্রত্যন্ত গ্রামগুলিকে নিয়ে। তখন তিনি এসেছিলেন। পরিদর্শনের ফাঁকে পুলিশ কর্মীদের সঙ্গে ভাগ করে খেয়েছিলেন খাবার। অটলবিহারী বাজপেয়ীর সেই দিনের ছবিটা এখনও স্পষ্ট চোখের সামনে ভাসে প্রণব মিত্রর।

প্রণব তখন ঝালদা থানার ওসি। সালটা ১৯৯৫। ডিসেম্বরের ১৮ তারিখ। পাহাড় ঘেরা খটঙ্গা, মারামু, বেলামু, তাহেরবেড়ার মতো গ্রামগুলির ঘুম ভেঙেছিল সাতসকালে। বাসিন্দারা দেখেছিলেন, পুকুরের পাড়ে, ফাঁকা মাঠে পড়ে রয়েছে বাক্স। খুলতেই বেরিয়ে আসে অত্যাধুনিক সব অস্ত্রশস্ত্র। সেই সময়ে স্থানীয় দুই যুবক, সুভাষ তন্তুবায় ও তড়িৎ বন্দ্যোপাধ্যায় সাইকেল নিয়ে ছুটে যান ঝালদা থানায়। খবর দেন। পুলিশ এসে বাক্সগুলি উদ্ধার করে। বেশ কিছু অস্ত্র লুট হয়ে গিয়েছিল। পরে কিছু অস্ত্র উদ্ধারও হয়।

পুরুলিয়া অস্ত্রবর্ষণ মামলার সেই শুরু। ঝালদা থানা। কেস নম্বর ১৫২। অস্ত্রগুলি ফেলা হয়েছিল ‘আন্টোনভ এএন-২৬’ বিমান থেকে। ক’দিন বাদে বিমানটি ফের ভারতে ঢুকলে ভারতীয় বিমান বাহিনী সেটিকে আটক করে। আরোহী ব্রিটিশ নাগরিক পিটার ব্লিচ এবং লাটাভিয়ার সাত জনকে বন্দি করে দেশদ্রোহিতার অভিযোগ দায়ের হয়। কিন্তু উধাও হয়ে যান অস্ত্রবর্ষণের মূল মাথা কিম পিটার ডেভি।

তার পরে প্রচুর জল গড়িয়েছে। ২০০০ সালে পাঁচ লাটাভীয় বন্দিকে মার্জনা করেন রাষ্ট্রপতি। ২০০৪ সালে মার্জনা করা হয় পিটার ব্লিচকে। তাঁরা নিজেদের দেশে ফিরে যান। ২০০৭ সালে প্রধান অভিযুক্ত কিম ডেভির খোঁজ মেলে ডেনমার্কে। তাঁকে ফিরিয়ে আনতে না-পারায় বিচার শেষ হয়ে গেলেও মামলাটি বন্ধ করে দেওয়া যায়নি। সম্প্রতি ডেভির প্রত্যর্পণ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে আবার কথাবার্তা শুরু হয়েছে। আর এরই মধ্যে, বৃহস্পতিবার মৃত্যু হল অটলবিহারী বাজপেয়ীর।

অটলবিহারী তখন লোকসভার বিরোধী দলনেতা। ঘটনার সপ্তাহখানেকের মধ্যেই এসেছিলেন ঝালদায়। গিয়েছিলেন গ্রামগুলিতে। তখন ঝালদায় বিজেপির অন্যতম নেতা ছিলেন রামগোপাল শর্মা। তাঁর ছেলে আনন্দ শর্মা বলেন, ‘‘আমিও বাবার সঙ্গে গিয়েছিলাম। অটলবিহারী হিন্দিতেই কথা বলছিলেন। দোভাষী সঙ্গে ছিলেন।’’ সুভাষ আর তড়িতের সঙ্গেও কথা বলেছিলেন বাজপেয়ী। দু’জনেই তখন বেকার। তাঁকে বলেছিলেন, যদি একটা চাকরির ব্যবস্থা হয়। সুভাষ বলেন, ‘‘উনি বলেছিলেন, আমদের কথা মনে থাকবে। পরে যখন প্রধানমন্ত্রী হলেন, আমরা চিঠি পাঠিয়েছিলাম। পৌঁছয়নি হয়তো।’’ সুভাষ এখন ঝালদা ব্লক অফিসের কর্মী। তড়িত পুজো করে সংসার চালান।

ঝালদার তখনকার ওসি প্রণবও অবসর নিয়েছেন অনেক দিন হল। তিনি বলেন, ‘‘প্রায় চল্লিশ মিনিট ছিলেন বাজপেয়ী। আমরা দূরে দাঁড়িয়েছিলাম। খাবার সময় উনি নিজেই আমাদের ডেকে নিলেন।’’ চাকরি-জীবনের এমন স্মৃতি আগলে রাখেন প্রণব। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর স্মৃতি ধরা থাকে ঝালদার ইতিহাসের পাতায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE