E-Paper

কর্মশালায় ঘুগনিতে স্বনির্ভরতার পাঠ দিলেন বংশী

ঝাড়গ্রাম জেলা কর্মসংস্থান কেন্দ্রের উদ্যোগে শহরের নতুনডিহি এলাকায় গত মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছিল বিশেষ কর্মশালা। সেখানে জেলার ৪০ জন আদিবাসী ছেলেমেয়ে যোগ দিয়েছিলেন।

রঞ্জন পাল

শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৯:২৮
picture of Ghugni.

‘সফল’ ঘুগনি বিক্রেতাকে এনে স্বনির্ভরতার পাঠ দিল ঝাড়গ্রাম জেলা কর্মসংস্থান কেন্দ্র (এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জ)। প্রতীকী ছবি।

ঘুগনি, তেলেভাজা বিক্রি করে যে নিজের পায়ে দাঁড়ানো যায়, গত দুর্গাপুজোর আগে নিজের মুখে সে কথা শুনিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারই রেশ রেখে এক ‘সফল’ ঘুগনি বিক্রেতাকে এনে স্বনির্ভরতার পাঠ দিল ঝাড়গ্রাম জেলা কর্মসংস্থান কেন্দ্র (এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জ)। বংশী রাউত নামে বছর পঁয়ষট্টির ওই বৃদ্ধ যেখানে ঘুগনি বিক্রি করেন সেখান থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরে বিনপুরের মাগুরায় বুদ্ধদেব মহন্তের দোকানে নিজে হাতে চপ ভেজে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

ঝাড়গ্রাম জেলা কর্মসংস্থান কেন্দ্রের উদ্যোগে শহরের নতুনডিহি এলাকায় গত মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছিল বিশেষ কর্মশালা। সেখানে জেলার ৪০ জন আদিবাসী ছেলেমেয়ে যোগ দিয়েছিলেন। বৃহস্পতিবার শেষ হয়েছে সেই কর্মশালা। সরকারি চাকরির উপর নির্ভর না করেই কী ভাবে স্বনির্ভর হওয়া যাওয়া যায় মূলত তা নিয়েই আলোচনা হয় সেখানে। সেই সূত্রেই বংশীকে নিয়ে এসেছিলেন কর্মসংস্থান কেন্দ্রের সহকারী অধিকার্তা অরুণাভ দত্ত। ঝাড়গ্রাম শহরের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের নুননুনগেড়িয়া এলাকার বাসিন্দা বংশী গত ৪০ বছর ধরে ঠেলায় করে ঘুগনি বিক্রি করছেন। তিনি যেখানে ঘুগনি বিক্রি করেন, সেই জায়গার নামই হয়ে গিয়েছে ‘বংশী মোড়’। ঘুগনি বিক্রি করে তিনি পাকা বাড়ি করেছেন। তাঁর বড় মেয়ে রিনা রাউত কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালের নার্স। ছোট মেয়ে কাজলের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। বড় ছেলে দেবাশিস নিজের গাড়ি-ব্যবসা দেখভাল করেন। ছোট ছেলে তাপস রাশিয়ায় চাকরি করেন। বংশী কর্মশালায় শুনিয়েছেন তাঁর ব্যবসার শুরুর দিনগুলির কথা। তাঁর কথায়, ‘‘কোনও ব্যবসা করতে হলে তাতে লেগে থাকতে হবে। অবহেলা করলে চলবে না। ছেলেমেয়েদের সে কথাই বলেছি।’’

বংশীর কাহিনি অনেকটা ঠিক স্বপ্নের মতো। স্বনির্ভরতার স্বপ্ন দেখার অনুপ্রেরণা দেন মুখ্যমন্ত্রীও। তবে জেলা কর্মসংস্থান কেন্দ্রের এই উদ্যোগকে কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না বিরোধীরা। বিজেপির ঝাড়গ্রাম জেলা সহ-সভাপতি দেবাশিস কুণ্ডু বলছেন, ‘‘রাজ্যে বেকার যুবক-যুবতীদের সংখ্যা বাড়ছে। রাজ্য সরকার চাকরি দিতে পারছে না। তাই বাধ্য হয়ে ঘুগনি বিক্রি করা নিয়ে কর্মশালা হচ্ছে। সকলে কি ঘুগনি বিক্রি করে বংশী হতে পারবে!’’ জেলা সিপিএমের এক নেতা আবার বলছেন, ‘‘মনে রাখতে হবে বংশীর সন্তানদের কেউ কিন্তু ঘুগনি বিক্রির পেশায় আসেননি। আসলে মুখ্যমন্ত্রীকে খুশি করতেই এমন কর্মশালার আয়োজন।’’ তৃণমূলের রাজ্য সহ সভাপতি চূড়ামণি মাহাতোর প্রতিক্রিয়া, ‘‘কর্মসংস্থানের বিকল্প পথ যে গুরুত্বপূর্ণ তা এখনও বুঝতে পারছে না বিরোধীরা।’’ ঝাড়গ্রাম জেলা কর্মসংস্থান কেন্দ্রের সহকারী অধিকর্তা অরুণাভ অবশ্য বলছেন, ‘‘সরকারি চাকরি কি সকলে পাবে? ঘুগনি বিক্রেতা বংশীর রাউতের নামে একটা জায়গার নামই হয়ে গিয়েছে। স্বনির্ভর হওয়ার এটাই জ্বলন্ত উদাহরণ। সেই জন্য আমাদের কর্মশালায় তাঁকে আনা হয়েছিল।’’

কর্মশালায় যোগ দিয়েছিলেন গোপীবল্লভপুরের বুদ্ধেশ্বর হাঁসদা, বেলপাহাড়ির ভুলাভেদার সুরেন্দ্রনাথ হাঁসদা। তাঁরা বলছেন, ‘‘বংশী রাউত দীর্ঘদিনের চেষ্টায় তিনি এই জায়গায় এসেছেন। দিন আনি, দিন খাই পরিবারের শিক্ষিত ছেলেমেয়েরা ঘুগনি বিক্রি করেও যদি স্বনির্ভর হতে না পারেন তখন তাঁর কী হবে!’’

শ্রমই সম্মানের সিঁড়ি। দেখিয়েছেন বংশী। তাঁর আশ্চর্য বাঁশির সুর কানে নিয়ে কি এগিয়ে যেতে পারবেন বুদ্ধেশ্বরেরা!

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Small Business Ghugni Mamata Banerjee

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy