Advertisement
১১ মে ২০২৪

বাগুইআটি থেকে রাজারহাটে রাতভর উচ্ছেদ অভিযান

রাত পৌনে বারোটা। পে-লোডারের বুম আর বাকেট হুড়মুড় করে আছড়ে পড়ল লাল রং এর চারতলা ফ্ল্যাটের প্রবেশ পথের ওপরে। তার পরে কয়েক মিনিটের মধ্যে গুঁড়িয়ে দেওয়া হল ফ্ল্যাট বাড়িটির সুদৃশ্য প্রবেশ পথটি। ব্যক্তিগত জমির ওপরে ফ্ল্যাট বাড়িটি তৈরি হলেও, প্রবেশ পথটি আগাগোড়াই পূর্ত দফতরের জমির ওপরে বেআইনিভাবে নির্মিত ছিল বলে অভিযোগ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০১৫ ১৯:৫৪
Share: Save:

রাত পৌনে বারোটা। পে-লোডারের বুম আর বাকেট হুড়মুড় করে আছড়ে পড়ল লাল রং এর চারতলা ফ্ল্যাটের প্রবেশ পথের ওপরে। তার পরে কয়েক মিনিটের মধ্যে গুঁড়িয়ে দেওয়া হল ফ্ল্যাট বাড়িটির সুদৃশ্য প্রবেশ পথটি। ব্যক্তিগত জমির ওপরে ফ্ল্যাট বাড়িটি তৈরি হলেও, প্রবেশ পথটি আগাগোড়াই পূর্ত দফতরের জমির ওপরে বেআইনিভাবে নির্মিত ছিল বলে অভিযোগ।

রাত ১২টা ৪০। এবার দখলকারীদের তালিকায় পড়তে দেখা গেল একটি নার্সিংহোমকে। পে-লোডারের বুম উপড়ে ফেলল নার্সিংহোম থেকে পূর্ত দফতরের জায়গার ওপরে এসে পড়া টিনের শেড। ভেঙে দেওয়া হল একটি সিমেন্টর নির্মাণও।

বুধবার রাতে এমনই খণ্ড খণ্ড ছবি দেখা গেল বাগুইআটির জোড়ামন্দির থেকে রাজারহাটগামী রাস্তার ওপরে। দু’ লেন বিশিষ্ট ওই রাস্তা চওড়া করে তিন লেনের করবে পূর্ত দফতর। তাই গোটা রাত ধরে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয় এদিন। জোড়া মন্দির থেকে রাজারহাট চৌমাথা পর্যন্ত সাত কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের রাস্তার দু’পাশের উচ্ছেদের কাজ ওই রাতেই সম্পূর্ণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পূর্ত দফতর।

তিন দশকের কাছাকাছি সময় আগে তৈরি হয়েছিল রাজারহাট রোড। বাগুইআটির জোড়া মন্দির থেকে রাস্তাটি রাজারহাট ছুঁয়ে উত্তর ২৪ পরগণা ও দক্ষিণ ২৪ পরগণার দিকে দু’ভাবে মিশেছে। এমনই রাস্তা বছরের পর বছর ধরে জবর দখল হয়ে পড়েছিল।

পূর্ত দফতরের কার্যনির্বাহী বাস্তুকার সত্যব্রত বসুর অভিযোগ, কখনও কোনও উচ্ছেদ অভিযান না হওয়ায় ওই রাস্তায় দোকান তৈরি করে ছোটোখাটো ব্যবসায়ীরা দখল করে রেখেছিলেন। আবার ফ্ল্যাটবাড়ি, নার্সিংহোম, পলিক্লিনিক, রেস্তোঁরা তৈরি করে অনেকে একটু একটু করে পূর্ত দফতরের জায়গা দখল করে নিয়েছে। যার ফলে ধীরে ধীরে রাস্তা সংকীর্ণ হয়ে পড়ে। বছরের পর বছর ধরে তাই যানজট ওই রাস্তার নিত্যদিনের সমস্যা। বর্তমানে বিধাননগর পুর নিগমের আওতায় এসেছে ওই রাস্তা। প্রথম পর্যায়ে জোড়া মন্দির থেকে চিনারপার্ক পর্যন্ত রাস্তা তৈরি হবে বলে জানিয়েছে পূর্ত দফতর।

বিধাননগর পুরনিগমকে স্মার্ট সিটিতে পরিণত করার চেষ্টা চলছে। ফলে রাস্তা চওড়া হওয়া খুব জরুরী বলেই দাবি করেছেন রাজারহাট-গোপালপুরের বিধায়ক তথা মন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু। তিনি জানান, ৬৮ কোটি টাকা রাজ্য সরকার মঞ্জুর করেছে ওই রাস্তাটি তৈরির জন্য। তিনি বলেন,‘‘ গরিব মানুষদের পুনর্বাসন দেওয়া হবে। তবে শিক্ষিত মানুষ যাঁরা রাস্তা দখল করে রেখেছেন তাঁদের বেআইনি নির্মাণ ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে।’’

এদিন রাতে উচ্ছেদ অভিযান চলার সময় অবশ্য কয়েকটি জায়গায় পূর্ত দফতরকে সামান্য বাধার মুখেও পড়তে হয়। অনেকে অভিযোগ করেন উচ্ছেদের বিষয়ে কোনও নোটিশ তাঁদের পাঠানো হয়নি।

গোবিন্দ নিবাসের কাছেই বিবেকানন্দ উন্নয়ন সমিতি নামে একটি ক্লাবকে ভাঙতে গেলে সেখানকার সদস্যরা বিক্ষোভ দেখানো শুরু করে। পুনর্বাসনের প্রতিশ্রুতি পাওয়ার পরেই ক্লাবের সদস্যরা ক্লাবটি ভাঙার অনুমতি দেন। ক্লাবটি অবশ্য পূর্ত দফতরকে তাঁরা ভাঙতে দেননি। সদস্যরা জানান, জিনিসপত্র সরিয়ে নিয়ে তাঁরাই কয়েক দিন পরে ক্লাবটি ভেঙে দেবেন।

আবার দেখা গেল সময় চাইলেও তা দেওয়া হল না কলকাতার প্রাক্তন শেরিফ অস্থি চিকিৎসক সুনীল ঠাকুরের নার্সিংহোমকে। তাঁর স্ত্রী সুদেষ্ণাদেবী অনুরোধ না শুনে পে-লোডার টিনের শেড উপড়ে ফেলল। সুদেষ্ণাদেবীর অভিযোগ,‘‘ রাতে রোগীরা যখন ঘুমোচ্ছেন সেই ভাঙচুর করায় রোগীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।’’ আবার জ্যাংরা চৌমাথার কাছে পেশায় চাটার্ড অ্যাকাউন্টট্যান্ট লক্ষীনারায়ণ কর্মকার অভিযোগ করে জানান, পূর্ত দফতর তাঁর জমির মধ্যে ঢুকেই ভাঙচুর করেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

baguiati rajarhat eviction calcutta road
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE