Advertisement
০৪ মে ২০২৪

ফারুকের বদলেই কি হাবিল শেখ

বাংলাদেশে সন্দেহভাজন জঙ্গি চাঁই হিসেবে তার জন্য ভারতীয় মুদ্রায় ২৫ লক্ষ টাকার বেশি ইনাম ঘোষণা করা আছে। উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ ভারতে নাশকতা ঘটানোর ছক তৈরির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তা সত্ত্বেও আজ পর্যন্ত আনোয়ার হোসেন ফারুক ওরফে জামাই ফারুককে এ দেশে বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানো যায়নি।

সুরবেক বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০২:৫৮
Share: Save:

তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে। বাংলাদেশে সন্দেহভাজন জঙ্গি চাঁই হিসেবে তার জন্য ভারতীয় মুদ্রায় ২৫ লক্ষ টাকার বেশি ইনাম ঘোষণা করা আছে। উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ ভারতে নাশকতা ঘটানোর ছক তৈরির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তা সত্ত্বেও আজ পর্যন্ত আনোয়ার হোসেন ফারুক ওরফে জামাই ফারুককে এ দেশে বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানো যায়নি। কিন্তু এ বার ওই ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ জঙ্গিকে পেতে বাংলাদেশ তোড়জো়ড় শুরু করছে বলে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা আইবি সূত্রের খবর।

আইবি-র সূত্রটি জানাচ্ছে, জামাই ফারুককে দিয়ে তার বিনিময়ে জাল নোটের চাঁই হাবিল শেখ ওরফে হাবিবুর রহমানকে ভারত নিক— এই শর্ত বাংলাদেশ প্রকারান্তরে দিতে পারে বলে ইঙ্গিত মিলেছে। হাবিলকে পেতে যাতে দু’দেশের বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি কার্যকর হয়, সেই জন্য সম্প্রতি তৎপর হয়েছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)।

শুক্রবার কলকাতা নগর দায়রা আদালতে অতিরিক্ত জেলা জজ (১ নম্বর বেঞ্চ) সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়ের এজলাসে জামাই ফারুকের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হবে বলে ঠিক ছিল। কিন্তু সেটা হয়নি। আদালত সূত্রের খবর— সরকার পক্ষ আরও সময় চেয়েছে, চার্জ গঠনের পরবর্তী দিন ঠিক হয়েছে আগামী ২৫ অক্টোবর।

ফারুক ও আরও পাঁচ জেএমবি (জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ) জঙ্গির বিরুদ্ধে ওই মামলার (এসটিএফ থানা, কেস নম্বর ১১/২০১৬) তদন্ত করছে কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)। তারা গত সেপ্টেম্বরে ওই ছ’জন জঙ্গিকে গ্রেফতার করে। তদন্তে জানা যায়, ফারুক এই রাজ্যে জেএমবি-র সাংগঠনিক প্রধান এবং সামগ্রিক ভাবে সংগঠনের
তহবিলের দায়িত্বে।

তার পরেও খাগড়াগড় বিস্ফোরণ বা জেএমবি-র ষড়যন্ত্র মামলায় ফারুককে এনআইএ ছুঁতে পারেনি। বাংলাদেশের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ জঙ্গি চাঁইয়ের বিরুদ্ধে এ দেশে মাত্র একটিই মামলা, সেটা কলকাতা পুলিশের রুজু করা। যার বিচার শুরু হচ্ছে না।

আইবি-র সূত্রের বক্তব্য— বাংলাদেশের পুলিশ ও গোয়েন্দাদের একাংশ মনে করেন, ফারুকের বিরুদ্ধে কলকাতা পুলিশের রুজু করা মামলা তেমন জোরালো নয়। অথচ ২০১৪-র ২৩ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে ময়মনসিংহের ত্রিশালে গুলি করে, গ্রেনেড হামলা চালিয়ে প্রিজন ভ্যান থেকে জেএমবি-র তিন নেতাকে ছাড়িয়ে নেওয়ার হোতা বলে ফারুককে গণ্য করা হয়। গত বছর জুলাই মাসে ফারুকের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ পুলি‌শ চার্জশিটও দেয়। এমন এক অভিযুক্তকে দ্রুত বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করাতে বাংলাদেশ পুলিশ ও গোয়েন্দাদের একাংশ চাইছেন, এমনটা আইবি সূত্রের খবর।

আর এখানেই ‘হাবিল শেখকে নাও, ফারুককে দাও’ — এমন শর্ত ঘুরিয়ে ঢাকার তরফ থেকে আসতে পারে বলে মনে করছে আইবি। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার বক্তব্য, হাবিল শেখ এনআইএ-র একাধিক মামলায় অভিযুক্ত। একটি মামলায় এনআইএ তাকে বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইনে (ইউএপিএ) চার্জশিটও দিয়েছে। অথচ হাবিলের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে যে তিনটি মামলা ঝুলছে, সেগুলি সবই সাধারণ চোরাচালানের। অর্থাৎ, হাবিলের বিরুদ্ধে ভারে এগিয়ে এ দেশের জাল নোটের মামলাগুলি। যেমন জামাই ফারুকের বিরুদ্ধে ভার বেশি বাংলাদেশের বিভিন্ন মামলার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE