বাক্স ভর্তি কয়েন। নিজস্ব চিত্র
এতদিন শোনা যেত ‘খুচরো দিন’, আর এখন টোটো চালক থেকে ব্যবসায়ী সবাই বলছেন ‘দয়া করে কয়েন দেবেন না’।
কালনায় যে কোনও দোকানে গেলেই ব্যবসায়ীরা দেখাচ্ছেন, বাক্সে জমে আছে হাজার হাজার টাকার ১, ২, ৫ ও ১০ টাকার কয়েন। তাঁদের দাবি, রোজকার লেনদেন, মালপত্র কেনায় মুশকিল হচ্ছে। সঙ্গে পয়লা বৈশাখ নতুন হালখাতার আগে পুরনো বকেয়াও যদি কয়েনে মেলে তাহলে মুশকিল আরও বাড়বে বলেও তাঁদের আশঙ্কা।
শুক্রবার চকবাজার এলাকায় একটি বেআইনি নির্মাণ দেখতে গেলে পুরপ্রধান দেবপ্রসাদ বাগকেও বেশ কিছু ব্যবসায়ী ব্যাঙ্ক কয়েন নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন। কালনার একটি বেসরকারি ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের যদিও দাবি, কয়েন গোনার মতো লোক নেই তাঁদের। তবে কম হলেও কয়েন জমা নিচ্ছেন বলেও তাঁদের দাবি।
নোট বাতিলের পর থেকেই ব্যাঙ্ক মারফত খুচরোর পরিমাণ বেশ খানিকটা বেড়ে যায় বাজারে। পরে অনেকক্ষেত্রেই তা জমা না নেওয়ায় সমস্যা বাড়ে। ব্যবসায়ীরাও মহাজন কয়েন নিচ্ছে না দাবি করে খরিদ্দারদের মাল বিক্রি বন্ধ করে দেন। ১০ টাকার কয়েন নকলেরও গুজব ছড়ায়। পরিস্থিতি মোকাবিলায় নামে প্রশাসন। লিফলেট বিলি করে জানানো হয়, সব কয়েক বৈধ। কয়েন না নিলে তিন বছর জেল এবং ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্স বাতিলেরও কথা বলা হয়। এতে কিছুটা পরিস্থিতি বদলায়। ব্যাঙ্কগুলিও কয়েন জমা নিতে রাজি হয়। কিন্তু তাতেও সমস্যা মেটেনি।
ব্যবসায়ীদের দাবি, ক্রেতাদের থেকে খুচরো নিলেও মহাজন তা নিতে বেঁকে বসছেন। অধিকাংশ ব্যাঙ্কও খুচরো নিতে চাইছে না। চকবাজার এলাকার বর্মন বেকারি থেকে পাউরুটি, বিস্কুট কিনে বিক্রি করেন প্রায় ৮০ জন ব্যবসায়ী। বেকারির তরফে খগেন বর্মন, সুরজিৎ বর্মনেরা বলেন, ‘‘আমরা পাওনা টাকার ১৫ শতাংশ কয়েনে নিচ্ছি। অনেকে বেশিও দিচ্ছেন। কিন্তু আমরাই ময়দা, চিনি, ডালডা কয়েন দিয়ে কিনতে পারছি না। সাড়ে তিন লক্ষ টাকারও বেশি কয়েন জমে গিয়েছে।’’ তাঁদের দাবি, পয়লা বৈশাখের আগে ছোট ব্যবসায়ীরা বকেয়াও কয়েনেই মেটাতে চাইছেন। ভারত বেকারির তরফে রুস্তম আলি শেখেরও দাবি, কয়েকটা ব্যাঙ্ক খুচরো নিচ্ছে, তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত কম।
শহরে ঘুরে জিনিস বিক্রি করেন মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁরও দাবি, ‘‘দোকানগুলি রাশি রাশি কয়েন দিচ্ছে। ৬ হাজার টাকার কয়েনের ওজন দাঁড়াচ্ছে ৬ কেজি।’’ তারপর মহাজন তা নিচ্ছেন না, আবার দিনভর অতিরিক্ত ওজন বইতে হচ্ছে বলে তাঁর দাবি।
মহকুমাশাসক নীতিন সিংহানিয়া জানান, এমনটা হওয়ার কথা নয়। ব্যাঙ্ক কয়েন না নিলে ব্যবসায়ীরা অভিযোগ জানাক। তাহলেই ব্যাঙ্কে ম্যাজিস্ট্রেট পাঠানো হবে। কত কয়েন নেওয়া হচ্ছে সে হিসেব চাওয়া হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy