ঝাড়খণ্ডের জানগুরু ও গ্রামের মাতব্বরদের প্ররোচনায় গ্রামবাসীরাই ঘরছাড়া করেছিলেন তাঁদের, আড়াই বছর পরেও বাড়ি ফিরতে মেমারির কাঁটাডাঙার ওই পরিবার— এমনই অভিযোগ জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি পাঠালেন ওই পরিবার। প্রশাসনের সাহায্যে বাড়ি ফেরারও আর্জি জানিয়েছেন ওই পরিবারের কর্তা সোমাই হেমব্রম। বুধবার ওই চিঠির প্রতিলিপি দেওয়া হয়েছে রাজ্য মানবাধিকার কমিশন, জেলাশাসক, জেলা পুলিশ সুপার ও মেমারির ওসিকে।
কিছুদিন আগে বর্ধমান শহরের কাছে হাটশিমুল গ্রামেও এক বধূকে ডাইনি সন্দেহে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া, জরিমানা করার অভিযোগ উঠেছিল। পরে মহিলা কমিশনের সদস্যেরা তাঁকে বাড়িতে ঢুকিয়ে দিয়ে যান। এ বার মেমারিতেও সেই একই অভিযোগ। মেমারি ২ ব্লকের কাঁটাডাঙা গ্রামের বেশিরভাগ বাসিন্দা আদিবাসী সম্প্রদায়ের। তাঁরাই জানান, ২০১৩ সালের পুজোর পর থেকে ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ওই গ্রামে চার জন মারা যান। প্রথমে এক গৃহবধূ অসুস্থ হয়ে মারা যান। তার কয়েকমাস পরে গ্রামের লক্ষ্মীরাম সোরেন বলে এক ব্যক্তির অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়। এর কিছুদিন পরে পেটে আঘাত লেগে ও অসুস্থ হয়ে পরপর দু’জন মারা যান। ভয় পেয়ে গ্রামবাসীরা ঝাড়খণ্ড থেকে ডেকে নিয়ে আসেন জানগুরুকে। অভিযোগ, তিনি গ্রামবাসীদের জানান সোমাই পরিবারের মধ্যে ‘ডাইন’ বাসা বেঁধেছে। ওদের অভিশাপেই গ্রামে চার জনের মৃত্যু হয়েছে। ওই পরিবারকে গ্রামছাড়া করারও নিদান দেন তিনি। এরপরেই ২০১৪ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ওই পরিবারকে গ্রাম ছাড়া করা হয়।
মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্য করে লেখা চিঠিতে সোমাই হেমব্রম দাবি করেন, তাঁদের বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়ে বাড়ির জিনিসপত্র লুঠপাট করা হয়। ওই খবর পেয়ে তাঁরা গ্রামে ঢুকলে ফের মারধর করা হয়। আশেপাশের গ্রামের লোকেরা এসে পরিস্থিতি সামাল দেয়। মাসখানেক পরে গ্রামে মীমাংসা সভা ডেকে ঢুকতে গেলে লাঠি-ঝাঁটা নিয়ে ফের তাঁদের তাড়া করা হয় বলেও অভিযোগ। দু’জন মহিলা জখম হয়ে হাসপাতালে ভর্তিও হন। সোমাই হেমব্রমের অভিযোগ, “প্রায় আড়াই বছর ধরে আমাদের পরিবারের ১৭ জন সদস্য বাড়ি ছাড়া। প্রশাসনের সমস্ত স্তরেই চিঠি দিয়েছিলাম। কিন্তু কাউকে পাশে পাইনি।”
বর্ধমানের জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন বলেন, ‘‘এ রকম কোনও ঘটনার কথা কানে এলেই আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিই। পরিবারকে বাড়িতে ঢোকানোরও ব্যবস্থা করি। এ ক্ষেত্রেও কী ঘটেছে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy