মোবাইল ব্যবহারের কুফল প্রচার বর্ধমানের ব্যক্তির। নিজস্ব চিত্র
রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন এক বৃদ্ধ। হঠাৎই তিনি পড়ে যান। সে দৃশ্য দেখেও স্মার্টফোনে বুঁদ এক যুবক পাশ কাটিয়ে চলে যান। এই দৃশ্য নাড়া দিয়েছিল বর্ধমান ১ ব্লকের কুড়মুনের বাসিন্দা দেবপ্রসাদ রায়কে। তাঁর মনে হয়েছে, মোবাইল ফোনের প্রতি অতিরিক্ত আসক্তি যুবসমাজকে গ্রাস করছে। তার পরেই মোবাইল ফোনের অব্যবহারের বিরুদ্ধে সাইকেলে চেপে প্রচারে নেমেছেন তিনি৷
সঙ্গী পুরনো একটি সাইকেল। তার সামনে রয়েছে সাদা একটি বোর্ড। বোর্ডে প্রিয় ‘সন্তান- সন্ততিদের’ উদ্দেশ্যে লেখা রয়েছে নানা উপদেশ। সেগুলির বেশির ভাগই মোবাইল ফোনের অপব্যবহার সংক্রান্ত। লেখা আছে, অনাবশ্যক মোবাইল ব্যবহারের পরিবর্তে কী কী করা যেতে পারে, সে কথা। মোবাইল ফোনে আসক্তদের উদ্দেশে তাঁর পরামর্শ, ‘‘বাবা-মায়ের সঙ্গে সময় কাটাও। এতে মানসিক ভাবে চাঙ্গা থাকবে। বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে খেলাধুলো করো। মনকে মন্দিরের মতো পবিত্র মনে করে তার যত্ন নাও। নিজেকে ভালবাসতে শেখো। সুশৃঙ্খল জীবন যাপন করো।’’
কেন এই উদ্যোগ? দেবপ্রসাদ মনে করেন, ‘‘মোবাইল ফোনের অপব্যবহারের কারণে যুবসমাজ বিপথগামী হচ্ছে। মোবাইলে বুঁদ হয়ে থাকায় তাঁদের মধ্যে সামাজিক অনুভূতি কমে যাচ্ছে। ক্রমশ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে অন্যদের থেকে। শুধু পড়াশোনা নয়, এতে মানসিক বিকাশও ব্যাহত হচ্ছে। আমার বাড়িতেও ছেলে রয়েছে। সে-ও মোবাইলে আসক্ত। এর ফল খারাপ হবে বুঝেই প্রচারে নেমেছি। এতে যদি দশটি ছেলে-মেয়েরও উপকার হয়, তবে বুঝব এই উদ্যোগ সার্থক।’’
আটান্ন বছরের দেবপ্রসাদ ব্যবসা করেন। বাড়িতে রয়েছেন স্ত্রী ছন্দা এবং ছেলে দেবদূত। দূরে কোথাও গেলে তিনি স্কুটার ব্যবহার করেন। বাকি সময় সঙ্গী সাইকেল। দেবপ্রসাদ জানান, প্রয়োজন হলে তবেই তিনি মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন। ইচ্ছা করেই কেনেননি স্মার্টফোন। কেনার ইচ্ছাও নেই।
বর্ধমান মেডিক্যালের মানসিক রোগ বিভাগের চিকিৎসক অমিতাভ দাঁ বলেন, ‘‘উনি যে বিষয়টিতে আলোকপাত করেছেন, সেটা বড় সমস্যা। আসন্ন বিপদ আঁচ করতে পেরেই উনি এই কাজ করছেন। এ ভাবেই সকলকে সচেতন করার কাজে এগিয়ে আসতে হবে। এক জন এগিয়ে এলে, আরও এক জন আসবেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy